২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
টেকসই উন্নয়নে বনভূমির প্রয়োজনীয়তা

বাড়াতে চাই বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা

-

বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠে এসেছে। আমাদের সামগ্রিক এই অগ্রগতি ধরে রাখতে হলে বিশ্ব সংস্থাগুলোর নানাবিধ শর্ত পূরণ করার বিকল্প নেই- টেকসই উন্নয়নের জন্য যা অপরিহার্য। এর মধ্যে, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন ও উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে পরিবেশগত দিক বিবেচনায় নিয়ে জাতিসঙ্ঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় বিশ্বের সব দেশকে বনভূমির পরিমাণ ৩০ শতাংশ করার লক্ষ্য বেঁধে দেয়া হয়েছে যদিও বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে এই পরিমাণ বনাঞ্চল গড়ে তোলা এক কঠিন বিষয় বৈকি। তবু টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে আমাদের কঠিন এই কাজটি করতে হবে সাধ্যমতো। এ জন্য প্রয়োজন দেশে বনাঞ্চল বাড়ানোর বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নেয়া যাতে জাতিসঙ্ঘের বেঁধে দেয়া লক্ষ্য অর্জনের পথে আগানো সহজ হয়।


বাংলাদেশ বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশে বনভূমির পরিমাণ ১৬ শতাংশ করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। লক্ষ্য ধরা হয়েছে ২০৩০ সাল। এই লক্ষ্য পূরণ করতে হলে নতুন করে বন সৃজন করতে হবে। আশার কথা হলো, দেশে বৃক্ষআবৃত ভূমির পরিমাণ আগের চেয়ে বেড়েছে। জাতিসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ‘দ্য স্টেট অব ওয়ার্ল্ড ফরেস্ট-২০২২’ শীর্ষক রিপোর্টের বরাতে সহযোগী একটি দৈনিকের এক প্রতিবেদনে উল্লেøখ করা হয়েছে, বিশ্বের ৩১ শতাংশ এলাকা এখন বনভূমিতে আবৃত। তবে দেশভেদে তা কমবেশি রয়েছে। সেখানে আমাদের দেশে ২০১৪ সালে ১২ দশমিক ৮ শতাংশ এলাকায় বনভূমি ছিল। ২০১৮ সালের মাঠ জরিপে তা বেড়ে উন্নীত হয়েছে মোট ভূমির ১৪ দশমিক ১ শতাংশ।
বাংলাদেশে বনের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা দেশে বনভূমি ধ্বংসের অন্যতম কারণ। এফএওর প্রতিবেদনে যেসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলোর দিকে দৃষ্টি দিলেও দেশে বিপুলসংখ্যক মানুষ যে বনের ওপর নির্ভরশীল, তার প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের ৩ ভাগের ১ ভাগ মানুষ বন ও বনজসম্পদের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ হার বৈশ্বিক গড়ের প্রায় দ্বিগুণ- ৬৪ শতাংশ। কারণ, এ দেশের বনের আশপাশের জনগোষ্ঠী বৃদ্ধি ও অন্য এলাকার অধিবাসীরাও বনের বাইরের সম্পদ যেমন- গ্রামীণ বন, সড়কের পাশের বৃক্ষ ও ব্যক্তিগত বৃক্ষরাজি থেকে সম্পদ আহরণ করেন।


বন বিভাগের ‘বৃক্ষ ও বনজসম্পদ-২০১৯’-এর জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সংগ্রহ হওয়া বনজসম্পদের আর্থিক মূল্য ছিল ৮৫৪ কোটি মার্কিন ডলার। জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমাদের দেশের প্রায় ১০ কোটি ৮০ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বনের সম্পদ ব্যবহার করে থাকে। দেশের মানুষ বনের ভেতরের ও বাইরের যেসব সম্পদ ব্যবহার করে থাকেন, তার মধ্যে রয়েছে- কাঠ, বাঁশ, গাছের পাতা, ফলমূল ও ঔষধি সামগ্রী। আমাদের বনজসম্পদের ৯৮ শতাংশ সংগ্রহ করে সাধারণ মানুষ, যা তাদের জীবন, জীবিকা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যবহৃত হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ছাড়াও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় বনভূমির গুরুত্ব রয়েছে। ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বনভূমি গুরুত্ব রাখে। বিভিন্ন সময় উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়ের গতি ও তীব্রতা কমাতে সুন্দরবন ভূমিকা রেখে আসছে। দেশের অর্থনীতিতেও বনের ভূমিকা অপরিসীম। বাস্তবে দেশের অনেক মানুষ এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। তাদের জীবিকা ও জ্বালানির অন্যতম উৎস বনের কাঠ, লতাগুল্ম ও অন্যান্য বনজসম্পদ সংগ্রহ করা। সঙ্গত কারণে বলা যায়, দেশে বনাঞ্চল বাড়লে প্রান্তিক এসব মানুষের আয়ের উৎস বাড়বে। তার চেয়ে বড় কথা, প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় থাকলে দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ অনেকাংশে কমে আসবে। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে বনাঞ্চল বৃদ্ধিতে প্রয়োজন বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা হাতে নেয়া।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল