১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`
নদীতে লাশের মিছিল

শনাক্ত হচ্ছে না খুনি চক্র

-

দেশে মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা কমছে না। বিশেষ করে বেওয়ারিশ লাশ পাওয়ার পাশাপাশি বহু লোক নিখোঁজ হওয়ায় সবার মধ্যে গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। সহযোগী একটি দৈনিকের খবর-২১ মাসে দেশের নদীতে ৬১৮টি লাশ পাওয়া গেছে। অথচ নদীতে লাশ পাওয়া স্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়। এর সাথে আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি গভীরভাবে জড়িত। তবে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে জোরালো কোনো ব্যবস্থা নেই।
সম্প্রতি আলোচিত হত্যার ঘটনা বুয়েটছাত্র ফারদিনের লাশও নদীতে পাওয়া যায়। নিখোঁজ হওয়ার তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। তাতে পচন ধরায় চেহারা বোঝা যাচ্ছিল না। মুঠোফোনের সূত্র ধরে শনাক্ত করা হয়। কয়েক দিন পর আওয়ামী লীগের এক নেতার লাশও রাজধানীর পাশের আরেকটি নদী থেকে উদ্ধার হয়। আমরা দেখেছি, নারায়ণগঞ্জের সেভেন মার্ডার ঘটনা আড়াল করতে খুনিরা লাশের সাথে ইট বেঁধে দেয়; যাতে পানিতে ভেসে উঠতে না পারে। ওই ঘটনায় লাশ ভেসে উঠলে বিচার পাওয়ার সুযোগ হয়েছিল স্বজন হারানোদের।


নৌ-পুলিশের তথ্যমতে, ২১ মাসে নদীতে পাওয়া লাশের ৯০ জনকে হত্যা করা হয়েছে বলে শনাক্ত করা হয়েছে। তবে ২২ জনের লাশ শনাক্ত করা যায়নি। দেশে মানুষ নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার সাথে এর সম্পর্ক থাকতে পারে। কারণ, নিখোঁজ ব্যক্তিদের লাশ নদী ছাড়াও অন্যান্য জায়গায়ও পাওয়া গেছে। উদ্বেগের বিষয় হলো- ২১ মাসে ছয় শতাধিক লাশ পাওয়া গেলেও আরো কত জনকে হত্যা করে খুনিরা নদীতে ফেলে দিয়েছে, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। এমন আশঙ্কাও অমূলক নয়, বহু মানুষ নদীতে হারিয়ে গেছেন। তাদের খোঁজ হয়তো আর কোনো দিন মিলবে না।
এটি বুঝতে অসুবিধা হয় না, খুনি চক্র নদীকে লাশের একটি নিরাপদ ভাগাড় মনে করছে। নদীতে ফেলে দিলে ভেসে ওঠার আগেই লাশে পচন ধরে। চেহারা বিকৃত হয়ে যায়। শরীরে আঘাতের চিহ্ন নষ্ট হয়ে যায়। তখন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করতে হিমশিম খান কিংবা ব্যর্থ হন। পত্রিকান্তরে জানা যায়, নদীতে পাওয়া এক নারীর লাশ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছিল একটি প্রেসক্রিপশনের সূত্র ধরে। তার লাশ পচে গেলেও স্যুটকেসে পাওয়া প্রেসক্রিপশন ঘটনার রহস্য উন্মোচনে সাহায্য করে। পরবর্তীতে জানা যায়, ময়মনসিংহের এক দম্পতি ওই গৃহকর্মীকে খুন করে। প্রেসক্রিপশন পাওয়া না গেলে এ খুনের রহস্য উন্মোচন করা হয়তো সম্ভব হতো না।


রাজধানীর আশপাশের নদীতে নিয়মিত লাশ পাওয়ার খবর গণমাধ্যমের কল্যাণে জানা যায়। আইনশৃঙ্খলা ঠিক থাকলে নদীতে একটি লাশ পাওয়ার পরই এমন ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি হওয়ার কথা নয়। যারা ভয়াবহ এই অপরাধ করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়া হলে এই প্রবণতা রোধ করা সম্ভব হতো। এতে কেউ আর খুন করে লাশ নদীতে ফেলার সাহস দেখাত না। লক্ষণীয়, তিন সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও এখনো ফারদিন হত্যা নিয়ে কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। এর মধ্যেই আরো লাশ পাওয়া গেছে নদীতে।
এটি ঠিক যে, পুলিশের তদন্তকাজে অনেক ক্ষেত্রে দ্রুততা ও দক্ষতার পরিচয় পাওয়া যায়; কিন্তু নদীতে লাশ ফেলার মতো গুরুতর ব্যাপারে ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তি ঘটেই চলেছে। ফলে নদীতে লাশ পাওয়ার মতো নৃশংস ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না। এর জন্য প্রয়োজন প্রত্যেকটি খুনের ঘটনার যথাযথ তদন্ত। ঘাতকদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনা। তবে এ কাজে পুলিশের দক্ষতার অভাব কিংবা গাফিলতি রয়েছে বলে মনে হয়।
আমরা আশা করব, নদীতে লাশ পাওয়ার মতো ঘটনাকে গুরুত্বের সাথে নেয়া হবে, যাতে আর কাউকে হত্যার পর খুনিরা নদীতে ফেলে দেয়ার দুঃসাহস না দেখায়।


আরো সংবাদ



premium cement