২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
কয়েকটি ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ কম

বাড়তি দামেও মিলছে না

-

দেশে একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠী ছাড়া বেশির ভাগ মানুষের আয় বাড়েনি। উপরন্তু অনেকের আয় কমে গেছে। অথচ এমন অবস্থাতেও জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। এমন পরিস্থিতিতেও সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েক মাস ধরে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম অত্যন্ত চড়া। আমদানি করা পণ্যের ক্ষেত্রে যেমন- দেশে উৎপাদিত পণ্যের ক্ষেত্রেও একই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দামও বাড়ছে যৌক্তিক কারণ ছাড়া। এ অবস্থার জন্য যেমন দায়ী আমাদের ব্যবসায়ী সমাজের অতি মুনাফার লোভ, তেমনি বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা। মূলত রাষ্ট্রীয় সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়ায় দুরবস্থার মধ্যে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। শাসক শ্রেণীর মাত্রাতিরিক্ত গোষ্ঠীপ্রতি এ সমস্যা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
এই অসহনীয় পরিস্থিতির মধ্যেও বাড়তি দামে চাহিদা মতো মিলছে না আটা, ময়দা, তেল, চিনি। গত শুক্রবার রাজধানীর বাজারগুলোতে এমন চিত্রের কথা উল্লেখ করা হয়েছে গত শুক্রবার প্রকাশিত নয়া দিগন্তের প্রধান প্রতিবেদনে।
গত ১৭ নভেম্বর সয়াবিন তেল লিটারে ১২ টাকা এবং চিনি কেজিতে ১৩ টাকা বাড়ানোর পরও বাজারে তেল ও চিনির সরবরাহ বাড়েনি। খোলা চিনি পাওয়া গেলেও সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। প্যাকেট চিনির সরবরাহ নেই। এক বাজার থেকে অন্য বাজার ঘুরে ঘুরে ক্রেতা সাধারণ তাদের চাহিদা মতো বোতলজাত সয়াবিন তেল ও প্যাকেটজাত চিনি কিনতে পারছেন না। বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে আটা ও ময়দা। দুই কেজির প্যাকেটজাত আটার দাম হয়েছে ১৫০ টাকা, অথচ যা আগে ছিল ১২৫ টাকা। দুই কেজি ময়দার প্যাকেটের দাম বেড়ে হয়েছে ১৬০ টাকা। অন্য দিকে সপ্তাহের ব্যবধানে চালের মূল্যে পরিবর্তন না এলেও আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে দেশের মানুষের প্রধান এই খাদ্যশস্য।
প্রশ্ন হচ্ছে, কেন বাজারের এ অবস্থা? নানা পক্ষ থেকে ভিন্ন ভিন্নভাবে এর ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারে নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে চূড়ায় উঠেছিল, এখন সে অবস্থা নেই। কয়েকটি বাদ দিলে বেশির ভাগ পণ্যের দামই কমে এসেছে। এর পরও আমাদের দেশে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তি। এ বিষয়ে আমদানিকারকদের বক্তব্য- চিনির মতো যেসব ভোগ্যপণ্যে করভার রয়েছে, সেগুলোর প্রতিটিতে এখন আগের তুলনায় শুল্ককর বেশি দিতে হচ্ছে। কোম্পানিগুলো আপাতত এ বাড়তি শুল্ককর পরিশোধ করলেও তা কিন্তু শেষ পর্যন্ত আদায় করা হবে ক্রেতার কাছ থেকে। চিনির মতো সয়াবিন তেল ও পাম তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার বড় কারণ হচ্ছে ডলারের উচ্চ দামজনিত শুল্ককর। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজার কিছুটা স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে। সে তুলনায় ডলারের বিনিময় মূল্য বেড়ে দেশে আমদানি ব্যয় বাড়ছে।
অর্থনীতিবিদদের মতো আমরাও মনে করি, এ পরিস্থিতিতে খাদ্যনিরাপত্তার বিষয়টি সামনে রেখে জরুরি খাদ্যপণ্যের আমদানি ও সরবরাহ যাতে ঠিক থাকে, সেটাকে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। কারণ, বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক সময়ের মতো পণ্য সরবরাহ, চাহিদা পূরণ ও আমদানি ব্যয় মেটানোর ক্ষেত্রে রাশ টানার সময় এসেছে। আবার বাজার ব্যবস্থাপনায় নজরদারি বাড়ানো উচিত, যাতে আমদানি ব্যয়ের সাথে বাজার মূল্যের পার্থক্য খুব বেশি না হয়। সর্বোপরি, বাজারে জিনিসপত্রের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে নাগরিকসাধারণ তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় করতে পারেন। তা না হলে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়বে।


আরো সংবাদ



premium cement