২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে অবাধে মাছ শিকার

বিনষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র

-

নির্বিচারে মাছ শিকারের কারণে দেশে কয়েক দশক আগে থেকে মাছের প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র কমতে শুরু করে। যে কারণে আমাদের মাছের উৎপাদন ব্যাপকভাবে কমে যায়। অভ্যন্তরীণ চাহিদায় বিপুুল ঘাটতি দেখা দেয়। দেখা দেয় আমিষের সঙ্কট। এই ঘাটতি কমাতে মৎস্যবিজ্ঞানীরা চাষের মাধ্যমে মাছের আবাদ বাড়াতে সক্ষম হন; কিন্তু চাষের মাছে উন্মুক্ত জলাশয়ের মাছের স্বাদ অনুপস্থিত।
দুই-তিন দশক ধরে প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র একেবারে সঙ্কুচিত হয়ে আসায় দেশী মাছের বহু প্রজাতি বিলুপ্তপ্রায়। এখনো যেসব প্রজাতির মাছ জলাশয়, নদী-নালায় পাওয়া যায় এর অনেকগুলো বিপন্ন। যথাযথ সংরক্ষণ না করলে সেগুলোও বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রাকৃতিক জলাশয়ে মাছের প্রজনন অবাধ করার পদক্ষেপ নেয়া হয়। আমিষের ঘাটতি মেটাতে সরকার উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছের উৎপাদন বাড়াতে প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়। অনেক স্থানকে অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এগুলোর মধ্যে চট্টগ্রামের হালদা নদী ও সুন্দরবনের খালগুলো অন্যতম। কিন্তু নয়া দিগন্তে গতকাল প্রকাশিত এক খবর থেকে জানা যায়, সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে অবাধে চলছে মাছ শিকার। পশ্চিম বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতাধীন সুন্দরবনের সংরক্ষিত এলাকায় অবৈধভাবে মাছ শিকার করা হচ্ছে। বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট স্টেশনের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ঘুষ দিয়ে জেলেরা অবাধে বিচরণ করে মাছ ও কাঁকড়া শিকার করছেন। এতে বিনষ্ট হচ্ছে সুন্দরবনের মাছের প্রজননক্ষেত্র।


মৎস্যসম্পদ বাড়াতে সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতাধীন টহল ফাঁড়িগুলোর অধীনে বেশ কয়েকটি খাল মাছের প্রজননক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও মাছের প্রজননে এসব খাল সুন্দরবনের অভয়ারণ্য হিসেবে চিহ্নিত করে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করে বনজীবীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতাধীন গহিন সুন্দরবনের দোবেকী, পুষ্পকাটি, নোটাবেকী, মান্দারবাড়ীয়া ও হলদেবুনিয়া বন টহল ফাঁড়ির অধীনে বেশ কিছু খাল রয়েছে, যা অভয়ারণ্যের অংশ। তবে বন বিভাগের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। মাঝে মধ্যে বন বিভাগের লোকদেখানো অভিযানে কিছু মৎস্যজীবীকে আটক করা হলেও বেশির ভাগ জেলে থেকে যাচ্ছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।


ওই প্রতিবেদনে জেলেদের বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, অভয়ারণ্যে মাছ ধরতে কিছু বাড়তি টাকা খরচ হয়। কিন্তু অল্প সময়ে অনেক মাছ পাওয়া যায়। বন কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে পক্ষে আনতে পারলে বেশি লাভবান হওয়া যায়। তবে সংশ্লিষ্ট বন কর্মকতাদের দাবি, অভয়ারণ্য এলাকায় মাছ ধরার মতো নৌকা কোনো জেলের নেই। সেখানে কোনো জেলেকে ঢুকতে দেয়া হয় না। অভয়ারণ্য হিসেবে চিহ্নিত খালগুলোতে বন বিভাগের নিয়মিত নজরদারি থাকে। সেখানে অবৈধভাবে ঢুকে মাছ ও কাঁকড়া শিকারের অবকাশ নেই। এসব অভয়ারণ্য এলাকায় যারা মাছ ধরেন তারা অবৈধভাবে বনে প্রবেশ করেন। সংরক্ষিত এলাকায় মাছ ধরার দায়ে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন মৎস্যজীবীকে আটক করে বন আইনে মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। সুন্দরবনে অবৈধ অনুপ্রবেশ ও সংরক্ষিত এলাকায় মাছ শিকার বন্ধে বন বিভাগের লোকজন সবসময় তৎপর রয়েছেন।
বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কথার ওপর আস্থা রাখার সুযোগ কম। কারণ আমরা সবাই জানি, বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তার লোভে আমাদের বনসম্পদ উজাড় হয়ে গেছে। এখন বনের কাঠ বিক্রি করার মতো অবস্থা আর নেই। তাই নিজেদের বাড়তি অর্থের জোগান ঠিক রাখতে জলাশয়ের মৎস্যসম্পদের প্রতি নজর যাওয়াটা স্বাভাবিক। এমন প্রেক্ষাপটে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উচিত, মৎস্যসম্পদ সুরক্ষায় সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে মাছ ধরার অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্ত করা। তদন্তে কোনো বন কর্মকর্তা বা বনকর্মী জড়িত থাকার প্রমাণ মিললে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে সরকার উন্মুক্ত জলাশয়ে মৎস্য উৎপাদন বাড়াতে যে পদক্ষেপ নিয়েছে সে উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement