২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
মৃত্যুদণ্ডের আসামি ছিনতাই

সতর্কতা ও প্রস্তুতির অভাব

-

পুলিশের কার্যক্রম নিয়ে সন্দেহ ও সমালোচনা রয়েছে জনমানুষে। এর কারণ বিভিন্ন সময়ে নানা অন্যায় অনিয়ম ও কর্তব্যে শিথিলতা প্রদর্শন। বর্তমান সরকারের আমলে আমাদের পুরো আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান তারা নেবেন এমন প্রত্যাশা থাকলেও তারা নিজেরা এমন কোনো অপরাধ নেই, সেটির সাথে জড়ায়নি। কথাগুলো আমরা বলছি দুই উগ্রবাদী মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির ছিনতাই হয়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে। তাদের দু’জনের বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনের প্রমাণ সাপেক্ষে আদালতের রায় এসেছে। একজন নিরপরাধ প্রকাশককে তারা হত্যা করেছে। এমন গুরুতর দু’জন আসামি যেভাবে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে পালিয়ে গেল আমাদের পুলিশি ব্যবস্থাকে তা বড় দাগে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিবরণে জানা যাচ্ছে, দুই অপরাধীকে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনাল থেকে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের হাজতখানায় নেয়ার পথে ফিল্মি কায়দায় ছিনতাই করা হয়। প্রথমে হাতকড়া পরা উগ্রবাদীরা নিরাপত্তায় থাকা এক পুলিশকে মারতে শুরু করে। এরপর দু’জনের সাথে যুক্ত হয় সহযোগীরা। একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের মুখে পিপার স্প্রে করে তাদের কাবু করে ফেলে। আমাদের আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ও উপস্থিত সবাইকে চোখে ধুলা দিয়ে আদালতের উল্টো পাশের সরু গলি দিয়ে তারা পালিয়ে যায়।
উগ্রবাদীদের এভাবে কেড়ে নেয়ার ২০১৪ সালে আরেকটি রেকর্ড রয়েছে। ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজনভ্যানে হামলা চালিয়ে জেএমবির তিনজনকে তারা ছাড়িয়ে নিয়েছিল। আমাদের আইনশৃঙ্খলাবাহিনী বিগত প্রায় এক দশক ‘জঙ্গি’বিরোধী ব্যাপক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। এ জন্য কয়েকটি বিশেষায়িত বাহিনীও গঠন করা হয়েছে। তারা পেয়েছে আলাদা ধরনের প্রশিক্ষণ। এ অবস্থায় একই ধরনের আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনার কিভাবে পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে? সাধারণ কয়েদিদের চেয়ে এ ধরনের অপরাধীদের নিয়ে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সতর্কতা ও প্রস্তুতি আরো অনেক বেশি হওয়ার কথা ছিল। সে ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে কেন তাদের কারাগারের বাইরে নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়নি? এই প্রশ্ন জাগা একেবারেই স্বাভাবিক। যদিও দায়িত্বে অবহেলার জন্য একজন পরিদর্শকসহ পাঁচজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এখানে অবহেলা ও কর্তব্যে শিথিলতার বিষয়টি স্পষ্ট করে বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু এর জন্য কি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের দায় এড়াতে পারেন? পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তাদের প্রস্তুতি ও সতর্কতার ঘাটতি উপেক্ষা করার মতো নয়। প্রশ্ন হচ্ছে গুরুতর আসামিরা কিভাবে হাতকড়া খুলল? তাদের কি কেউ এর চাবি সরবরাহ করেছে? না তারা অন্য কোনো কৌশল গ্রহণের সুযোগ পেয়েছে? এ ছাড়া আরো প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এভাবে জনাকীর্ণ ও নিরাপদ একটি জায়গা থেকে সহজে পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে। তারা অনেকটা সন্তর্পণে মোটরসাইকেলে চড়ে চলে যাচ্ছে, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যের উপস্থিতি না থাকলেও এমন জায়গা থেকে অপরাধীদের পালানো অনেক কঠিন। অথচ সেখানে কয়েক শ’ পুলিশ সদস্য উপস্থিত থাকার কথা। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হওয়ায় থাকার কথা অন্যান্য নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা অধিকহারে। এতগুলো কাণ্ড ঘটিয়ে সবার চোখে ধুলা দিয়ে তারা সটকে পড়ল!
কর্তৃপক্ষ ঘটনার পর যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখছে। রেড অ্যালার্ট জারি করেছে, চৌকি বসিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে। এ ছাড়া পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। তারা তদন্ত করে এ ঘটনায় দায়িত্ব পালনে দুর্বলতা চিহ্নিত করবেন। কোনো সদস্য এ জন্য এককভাবে দায়ী; না নিজেদের সামষ্টিক দুর্বলতা, সেটি খতিয়ে দেখবেন। দায়ীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, তাদের আবার কাস্টডিতে আনা ও ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার রোধ করা। অন্যথায় আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ওপর মানুষের আস্থা আরো কমবে।


আরো সংবাদ



premium cement