১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সড়ক দুর্ঘটনায় বেশুমার আহত

ক্ষতিপূরণের স্থায়ী ব্যবস্থা নেই

-

সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশে প্রাণহানি বিশ্বে সবচেয়ে বেশি। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কেউ প্রাণ হারালে সরকারি পর্যায়ে কিছুটা নড়াচড়া দেখা যায়। আবার শিক্ষার্থীরা দুর্ঘটনার শিকার হলে সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে রাস্তায় নামেন। কয়েকবার তারা ব্যাপক হারে প্রাণহানি নিয়ে রাস্তায় জোরালো আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। সরকার তাদের নিজস্ব বাহিনী দিয়ে ওই সব আন্দোলন দমিয়েছে। কখনো বা কিছু দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। বাস্তবে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা না কমে বরং বেড়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোর পরিসংখ্যান সে কথাই বলে। তবে সড়কে প্রাণ হারিয়ে মানুষগুলো এক অর্থে বেঁচে যান। যারা দুর্ঘটনার শিকার হয়ে পঙ্গু খোঁড়া হয়ে যান, তারা পরিবারের জন্য হয়ে উঠছেন বোঝা। সড়কে আহত হয়ে পরে বেঁচে থাকা মানুষের অনেকের জীবনে নেমে আসছে বড় দুরবস্থা। দরিদ্র-অসহায়দের ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব অনেক গভীর। অবস্থাপন্ন মানুষও অকর্মণ্য হয়ে কিংবা মানসিক পীড়ায় থেকে আর উতরে উঠতে পারেন না।
প্রতি বছর নভেম্বরের তৃতীয় রোববার ‘বিশ্ব সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের স্মরণে দিবস’ পালিত হয়। দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের দুর্গতির বিষয়টি নজরে আনতে এই আয়োজন। নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)-এর তথ্য মতে, গত চার বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ২৪ হাজার ৮৮৭ জন। একই সময় সড়কে প্রাণ হারিয়েছেন ১৮ হাজার ৯২৪ জন। সংস্থাটি এ সময় ১৫ হাজার ৬৯০টি সড়ক দুর্ঘটনা লিপিবদ্ধ করে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাবে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে সড়কে পাঁচ হাজার ৫৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন। সড়কে দুর্ঘটনা ঘটেছে চার হাজার ২২৪টি। আহত হন সাত হাজার ৪১৪ জন।
দুর্ঘটনায় আহত মানুষ দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা ও দুরবস্থা নিয়ে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে যান। সহযোগী একটি দৈনিকের খবরে জানা যাচ্ছে, এ হাসপাতালে প্রতিদিন বহির্বিভাগে রোগী আসেন ৫০০-৫৫০ জন, জরুরি বিভাগে আসেন ২০০-২৫০ জন। তাদের বেশির ভাগ সড়ক দুর্ঘটনার শিকার। সারা দেশের সরকারি হাসপাতালে সড়ক দুর্ঘটনার রোগীদের প্রতিদিন দেখা যায়। এ অবস্থায় অনেককে দীর্ঘ দিন চিকিৎসা দিতে হয়। দরকার হয় জটিল অস্ত্রোপচারের। এরা শুধু পঙ্গু কিংবা হাত-পা হারানোর শিকার হচ্ছেন এমন নয়; একটি বড় অংশ ট্রমায় আক্রান্ত হচ্ছেন। তারা নতুন করে যানবাহনে চড়তেও ভয় পান। অসুস্থ থাকায় নিজের জন্যও কিছু করতে পারেন না। পরিবারের বাকি সদস্যদের ওপর নির্ভর করতে হয় চিকিৎসা ও ভরণপোষণে।
সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে যাওয়া কিংবা অন্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ব্যক্তিকে স্থায়ীভাবে সহযোগিতা দেয়া গুরুত্বপূর্ণ হলেও এ পর্যন্ত সে ধরনের কোনো তহবিল গঠিত হয়নি। অথচ দেশে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের বড় বড় সংগঠন রয়েছে। এসব সংগঠন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য তহবিল গঠনে এগিয়ে আসতে পারে। বিশেষ করে ধনী পরিবহন মালিকদের এ ব্যাপারে দায়িত্ব রয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনাজনিত বিভিন্ন মামলার রায়ে আদালতকে বিচ্ছিন্নভাবে ক্ষতিপূরণ আদায়ে আদেশ দিতে দেখা যায়। সড়ক পরিবহন আইনে ক্ষতিপূরণের বিধান রয়েছে। তবে বিধিমালা চূড়ান্ত না হওয়ায় সেটি কার্যকর হচ্ছে না বলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানা গেছে। এ আইনে ক্ষতিপূরণের বিধানে উল্লেøখ আছে, নিহত ব্যক্তির পরিবারকে তিন লাখ টাকা দেয়ার প্রস্তাব রয়েছে। অন্য দিকে ক্ষতিপূরণ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে আহতদের।
প্রস্তাবিত আইনটি ইনসাফপূর্ণ বলে মনে হয় না। মূলত দুর্ঘটনার শিকার হয়ে যারা জীবন বয়ে বেড়াবেন, তাদের জন্য স্থায়ী সহায়তার দরকার। আইনে আর্থিক সহায়তা তহবিল গঠনের কথা বলা হয়েছে। এ তহবিলকে এ খাতে ব্যবহার করা যায়। যানবাহনের নিবন্ধন প্রাপ্তি ও মাসিক চাঁদার মধ্যে একটি নিয়মিত অঙ্কের অর্থ এ ফান্ডের জন্য নির্ধারণ করা যায়। স্থায়ী একটি নিয়ম করে দিলে আহতরা চাহিদা অনুযায়ী এ তহবিল থেকে এককালীন বা মাসিক ভিত্তিতে অর্থসহায়তা পেতে পারেন। সরকারের পক্ষে ব্যবস্থাটি করা কঠিন কিছু নয়।


আরো সংবাদ



premium cement