২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
৩০ মাসে ১৫ কোটি টাকার রাজস্ব খোয়ানো

সরকার এটা সহ্য করল কিভাবে?

-

নয়া দিগন্তের চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা সংবাদদাতা জানান, মহামারী করোনার দরুন ট্যুরিস্ট ভিসা বন্ধ হওয়ার পর অদ্যাবধি দীর্ঘ ৩০ মাস পার হয়ে গেলেও আজো দর্শনা আন্তর্জাতিক স্থলপথ দিয়ে বাংলাদেশী যাত্রীরা পাসপোর্ট থাকলেও প্রতিবেশী ভারতে যাতায়াত করতে পারেন না। ফলে দেশের ডজনখানেক জেলার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। তেমনি গত ৩০ মাসে আমাদের সরকার প্রায় ১৫ কোটি টাকার রাজস্ব এ বন্দর থেকে হারিয়েছেন।
জানা যায়, মহামারী করোনার সংক্রমণে ২০২০ সালের ২৬ মার্চ দর্শনা আন্তর্জাতিক স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় পণ্য আনা এবং স্থলপথে ভারত-বাংলাদেশ ট্যুরিস্টসমেত সব ভিসা পাসপোর্টধারী যাত্রীর যাতায়াত সম্পূর্ণ স্থগিত করা হয়েছিল। কিছু দিন পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলপথে ভারত থেকে পণ্য আমদানি আরম্ভ হয়। ২০২১ সালের ১৭ মে থেকে ভারতে আটকে থাকা বাংলাদেশী নাগরিকদের দর্শনার মাধ্যমে ফেরত আনতে নির্দেশনা জারি করা হয়। সে বছর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি শুধু মেডিক্যাল ও বিজনেস ভিসায় দর্শনা-গেদে হয়ে পাসপোর্টধারীরা যাতায়াত করতে পারবেন বলে পুলিশ জানায়। সর্বশেষ, গত ২৯ মে ‘ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী’ ট্রেন দর্শনা হয়ে চলাচল শুরু করলেও আজো ট্যুরিস্ট ভিসা চালু করা হয়নি। এ দিকে কুষ্টিয়ার এক বয়স্কা যাত্রী দর্শনায় জানান, কুষ্টিয়া ছাড়াও ঝিনাইদহ, মাগুরা, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, রাজবাড়ীসহ ১০-১২ জেলার মানুষ দর্শনার ওপর নির্ভরশীল। তারা বাধ্য হয়ে বেনাপোল-হরিদাসপুর হয়ে যাতায়াত করছেন। ফলে প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে তাদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। ব্যয়ও হচ্ছে কয়েকগুণ অর্থ। অথচ আশপাশের এই জেলাগুলো থেকে মাত্র ৫০-৮০ টাকায় দর্শনা আসা যায়। আর এখান থেকে হেঁটেই ভারতের গেদে যাওয়া যায়। কিন্তু কুষ্টিয়া থেকে যশোর পর্যন্ত ভাড়া শ’খানেক টাকা; বেনাপোল পর্যন্ত যেতে আরো ৫০ টাকা আর সেখান থেকে ভারতের বনগাঁও স্টেশনে যেতে ব্যয় করতে হয় দেড় শ’ টাকা। দর্শনার স্থানীয় ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত ৫ ডিসেম্বর মেডিক্যাল ও বিজনেস ভিসা বন্ধ হয়ে গেছে। তবে ভারতীয়রা সব ধরনের ভিসা দিয়ে স্থলপথে দর্শনা যাতায়াত করতে পারেন। স্থানীয় নাগরিক কমিটির মতে, ‘দুই দেশের লোকদের জন্য দু’নিয়ম আন্তর্জাতিক রীতিবিরুদ্ধ। তাই এটি কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।’ দর্শনা সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আতিয়ার রহমান জানিয়েছেন, দর্শনার স্থলপথে এখানেই ২০২০ সাল পর্যন্ত এক হাজার থেকে ১২ শ’ পাসপোর্ট যাত্রীর যাতায়াত ছিল। সে হিসাবে প্রত্যহ চার-পাঁচ লাখ টাকা, অর্থাৎ গত ৩০ মাসে প্রায় ১৫ কোটি টাকা থেকে বাংলাদেশ সরকার হলো বঞ্চিত। উল্লেখ্য, দর্শনা-কলকাতা দূরত্ব মাত্র ১০৭ কিলোমিটার। দর্শনার কাস্টম সুপার জানালেন, মহামারী পর্যন্ত দর্শনার এ পথে বহু যাত্রীর চলাচল ছিল। ট্যুরিস্ট ভিসা থাকলে আবার এখানে এ ভিড় হবে। চুয়াডাঙ্গার সাবেক জেলা পরিষদ প্রশাসক অবশ্য পুনরায় স্থলপথে ট্যুরিস্ট ভিসা চালুর কথা জানান। নাগরিক কমিটি স্থানীয় ডিসি-এমপিকে এ ব্যাপারে স্মারকলিপি দিয়েছে। তারা ‘ব্যবস্থা নেয়া’র কথা বলেছেন।
৩০ মাসে ১৫ কোটি রাজস্ব এ গরিব দেশের জন্য কম নয়। তাই এ বিষয়ে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাই।


আরো সংবাদ



premium cement