২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
নিম্নমানের সামগ্রীতে সেচখাল সংস্কার

তদারকি না থাকায় এমন অবস্থা

-

দেশে সরকারি প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতি এখন সাধারণ বিষয় হয়ে গেছে বলে মানুষের ধারণা। সম্প্রতি সরকারি উন্নয়নকাজে যেভাবে অর্থের তছরুপ মামুলি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে তাতে জনগণের এই ধারণা অমূলক নয়; বরং দুর্নীতি করতে গিয়ে অনেক সরকারি কর্মকর্তা যেভাবে চক্ষুলজ্জা পর্যন্ত বিসর্জন দিচ্ছেন তাতে সাধারণ মানুষই উল্টো লজ্জা পায়। গণমাধ্যমে প্রতিনিয়ত এমন সব ঘটনা প্রকাশ পাচ্ছে, যা অবিশ্বাস্য মনে হলেও বাস্তব। পর্দাকাণ্ড, বালিশকাণ্ডসহ সরকারি কর্তাদের বহু কাণ্ডকারখানা সেই সাক্ষ্য দেয়। পুকুর খননের কলাকৌশল জানতে কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের মতো অসংখ্য ঘটনা তো আছেই। বস্তুত তৃণমূল থেকে সর্বত্র মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে দুর্নীতি। অবস্থা এতটই শোচনীয় যে, সরকারি কাজে দুর্নীতি হবে না এটিই অকল্পনীয় হয়ে গেছে।
সত্তরের দশকের শেষ দিক থেকে কৃষিতে ফলন বাড়াতে আমাদের দেশে ভূ-উপরিতলের পানি দিয়ে সেচব্যবস্থা করতে ব্যাপকভাবে খাল-খনন কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়। এ কথা সত্যি, তখন থেকেই খাল খননে অনিয়ম-দুর্নীতির শুরু। কিন্তু সম্প্রতি সব কিছুর মতো এখানেও অনিয়ম-দুর্নীতি মাত্রা ছাড়িয়েছে। যেমন- রংপুর পানি উন্নয়ন (পাউবো) বোর্ডের বাস্তবায়নাধীন তিস্তা সেচ প্রকল্প এলাকা পুনর্বাসন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় টি-১ টারসিয়ারি সেচ খালের দুই পাশের ডাইক মেরামত এবং পুনঃএকত্রীকরণ কাজে বরাদ্দ ছয় কোটি ৪১ লাখ পাঁচ হাজার ৪১৭ টাকা। আর তিস্তা সেচ প্রকল্পের কমান্ড এলাকায় পুনর্বাসন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পে টি-৫ টারসিয়ারি সেচ খালে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তিন কোটি চার লাখ ৮৭ হাজার টাকা। এই সেচ খাল দু’টি নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। দু’টি টারসিয়ারি ক্যানেলে প্রায় ১০ কোটি টাকার সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার এবং অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নয়া দিগন্তের কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) সংবাদদাতার প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে কাজে ঘাপলা ও অনিয়মের তথ্য জানা গেছে।
টি-৫ সেচ খালের পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির এক কার্যকরী সদস্য লিখিত অভিযোগের বরাতে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্প বাস্তÍবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত কিছু কর্মকর্তার সাথে ঠিকাদাররা যোগসাজশে শিডিউল ও ইস্টিমেট অনুযায়ী কাজ না করে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের মাধ্যমে বড় ধরনের ঘাপলা করছেন। সিসি ঢালাইয়ের নিচে বেডে ১০-১২ ইঞ্চি বালু ও পানি দিয়ে মাটি দৃঢ়করণ করে তারপর সিসি ঢালাই করার কথা। তা না করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চার-পাঁচ ইঞ্চি বালু দিয়ে মাটি দৃঢ়করণ ছাড়াই ঢালাইয়ের কাজ করা হয়েছে। এতে ভারী বন্যায় মাটি সরে গিয়ে খাল ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেচ খালটির পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির অভিযোগ, মেয়াদোত্তীর্ণ সিমেন্ট, নিম্নমানের বালু ও মরা পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে সিসি এবং আরসিসি ঢালাইয়ে।
তদারকির অভাবে ঠিকাদাররা নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। শাখা কর্মকর্তার উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও অজ্ঞাত কারণে তিনি কাজের সময় থাকেন লাপাত্তা। ফলে ইচ্ছেমতো কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে ঠিকাদাররা সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, যারা অভিযোগ দিয়েছেন তারা সুবিধা চেয়েছিলেন। না পেয়ে অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী বলেছেন, কোথাও কোনো অনিয়ম হলে সে দায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নিতে হবে।
দেশের বাস্তবতায় খাল খনন কর্মসূচিতে দেখা গেছে অতীতে কাজ না করেও বরাদ্দকৃত অর্থ তুলে নেয়া হয়েছে। তাই নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে যে দু’টি খাল খননের চলমান কাজের বিষয়ে স্থানীয়ভাবে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ করা হয়েছে, তা আমলে নিয়ে যথাযথ তদন্ত করা হোক। তা না করলে এটিই জনমানসে বদ্ধমূল হবে যে, পাউবোর কিছু কর্মকর্তার সাথে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। ফলে নিম্নমানের কাজ করা সম্ভব হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement