১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`
গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায় বিশ্ব

গণতন্ত্রের পথ খুলে দিতে পারে সরকার

-

বাংলাদেশে নির্বাচনে বিপুলসংখ্যক ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগে বঞ্চিত হয়। হিসাব মতে, ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনের পর অবাধে ভোট দেয়ার সুযোগ আর পাননি ভোটাররা। ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেশির ভাগ আসনে ভোট ছাড়াই সরকারি দলের প্রার্থীরা জবরদস্তির জয় পান। বিরোধী দলের বর্জনের মুখে বাকি আসনেও ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ পাননি ভোটাররা। সামান্য কিছু ভোটার উপস্থিত হলেও বেশির ভাগ কেন্দ্র ছিল শূন্য।
২০১৮ সালে সরকারি দলের পক্ষে আগের রাতেই সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করা হয়। এর পরের দীর্ঘ একযুগে স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচন ক্ষমতাসীনদের পছন্দমতোই বিবেচিত হয়েছে। সরকার যাকে চেয়েছে তিনিই জয়ী হয়েছেন।
এ অবস্থায় জনমনে চরম হতাশা বিরাজ করছে। মুষ্টিমেয় সুবিধাবাদী ছাড়া সবাই চায় দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের ধারা ফিরে আসুক। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও জোরালোভাবে সেটাই চাইছে।
ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন আলাদাভাবে আমাদের দেশের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ ব্যক্ত করেছে। তারা বন্ধুপ্রতিম বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পুনরুদ্ধার চায়। যুক্তরাষ্ট্র এবার বেশ সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে। গণতন্ত্রের পথে উত্তরণে তাদের অবস্থান নিয়মিত পরিষ্কার করে বলে আসছে। দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, বাংলাদেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায় বিশ্ব।
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন। সাধারণ নাগরিকরা যেখানে নিজেদের সরকার নির্বাচন করতে পারবে। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন, সরকার, গণমাধ্যম, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, নাগরিক সমাজ ও রাজনৈতিক দল সবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে কেউ নিজের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে কিংবা অন্যকে দায়িত্ব পালনে বাধা দিলে, অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে।’ মার্কিন রাষ্ট্রদূতের এ বক্তব্যে গত একযুগে আমাদের নির্বাচনী ব্যর্থতার কারণটি উঠে এসেছে। একইভাবে বর্তমান সহিংস রাজনৈতিক পরিবেশ নিয়েও তিনি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, এমন পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হতে পারে না।
আগের দু’টি প্রহসনের নির্বাচনে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার সময় বিরোধী দল প্রতিবাদ করারও সুযোগ পায়নি। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিষ্ঠুরভাবে তাদের দমানো হয়েছে। এবারো সরকার বিরোধীদের দমানোর একই কৌশল নিলেও সেটি আগের মতো কার্যকর হচ্ছে না। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির জন্য আশীর্বাদ। ইতোমধ্যে র্যাব ও এর সদস্যদের ওপর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এতে গুম, হেফাজতে মৃত্যু কমেছে। তবে আগের ঘটনাগুলোর সুরাহা ও জবাবদিহি নিশ্চিত না হলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হবে না বলেও জানান পিটার হাস।
গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সুশাসন এগুলো আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি। হতাশার বিষয় হলো, আমরাই নিজেদের প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করছি। প্রভাবশালী রাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর আমরা সংযত হচ্ছি, যা সম্মানজনক নয়। একইভাবে গণতন্ত্রকেও আমরা প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে গণমানুষের দাবিও সরকারের কাছে পাত্তা পায়নি। তবে প্রভাবশালী রাষ্ট্রের দাবি উপেক্ষা করা যাচ্ছে না। এ যাত্রায় দেশের মানুষ গণতন্ত্র ফিরে পেলে ক্ষতির কিছু নেই। তবে আমরা আশা করব, কোনো ধরনের চাপ ছাড়াই সরকার গণতন্ত্রের পথ পুরো উন্মুক্ত করে দেবে। সেটাই জাতি হিসেবে আমাদের জন্য সম্মানজনক হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement