২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
করোনাকালে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি

ক্ষতি কাটাতে উদ্যোগ নেই

-

করোনার প্রাদুর্ভাবে টানা দেড় বছর দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের শিখন দক্ষতায় অনেক ঘাটতি তৈরি হয়েছে। কিন্তু স্কুল খোলার পর সেই ঘাটতি পুষিয়ে নিতে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর। শিক্ষার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শিক্ষাবছর বাড়ানো, শিক্ষা পুনরুদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনাসহ কোনো পদক্ষেপ নিতে উদ্যোগী ভূমিকা দেখা যায়নি। সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হলো- করোনার পর কিভাবে শিক্ষার পুনরুদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে এ বিষয়ে শিক্ষকদের জন্য কোনো নির্দেশিকা রয়েছে কিনা তা জানেন না খোদ শিক্ষা কর্মকর্তারাও।
‘কোভিড-১৯-পরবর্তী শিক্ষা পুনরুদ্ধার ও আগামীর ভাবনা’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাকালে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে প্রাথমিক পর্যায়ের ৫৩ ও মাধ্যমিক পর্যায়ের ৪৪ শতাংশ শিক্ষক শিক্ষার ক্ষতি পুনরুদ্ধারের কার্যক্রম দুই থেকে তিন বছর বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন। এক-তৃতীয়াংশের বেশি অভিভাবক দুই থেকে তিন বছর মেয়াদি করার পরামর্শ দিয়েছেন। দুই-তৃতীয়াংশ উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাও শিখন পুনরুদ্ধার কার্যক্রমের মেয়াদ তিন থেকে চার বছর করার পক্ষে। ৪৭ শতাংশ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শিখন ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করার সুপারিশ করেছেন। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮৮ শতাংশ ও প্রাথমিকের ৮৫ শতাংশ শিক্ষক ছাত্রছাত্রীদের ক্ষতির মূল্যায়ন এবং এ সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে তাদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো নির্দেশিকা নেই বলে জানিয়েছেন। শিক্ষকদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো নির্দেশিকা রয়েছে কিনা- এ ব্যাপারে কিছু জানাতে পারেননি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের ৯০ শতাংশ কর্মকর্তা।
শিক্ষাসংক্রান্ত একটি জরিপ বলছে, মহামারী-উত্তর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হলেও বস্তি এলাকার ১৪ শতাংশ শিশু বিদ্যালয়ে ফেরেনি। অনেক শিক্ষার্থী প্রযুক্তিগত উপকরণে প্রভাবিত হয়ে পড়েছে। মহামারী শুরুর পর থেকে এ প্রবণতা আরো বেড়েছে। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১৯ শতাংশ শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলছেন, তাদের ছেলেমেয়েরা স্মার্টফোন, কম্পিউটারে আসক্ত হয়ে পড়েছে। বস্তি এলাকায় এ সংখ্যা ২৮ শতাংশ।


শিখন ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে কোনো পদক্ষেপ না থাকলেও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদফতরের দাবি, ‘শিখন ঘাটতি পূরণে কোনো পরিকল্পনা নেয়া হয়নি বিষয়টি ঠিক নয়। আসলে সব স্কুলকে সিদ্ধান্ত নিতে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয়, একেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর ঘাটতি একেক রকম। গ্রাম এলাকার শিক্ষার্থীদের ঘাটতি আর শহর এলাকার ঘাটতি এক নয়। জেলা স্কুলের শিক্ষার্থীদের ঘাটতি আর উপজেলা পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ঘাটতিও এক হবে না। যেখানে যে স্কুলে যেমন ব্যবস্থা নেয়া দরকার শিক্ষকরা তেমন ব্যবস্থা নিচ্ছেন। অধিদফতরের এই দাবি যে অন্তঃসারশূন্য তার সপক্ষে বলা যায়, শিখন ঘাটতি কমিয়ে আনতে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮৪ শতাংশ অভিভাবক সন্তানের শিখন ঘাটতির জন্য প্রাইভেট টিউটর নিয়োগ দিয়েছেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৮০ শতাংশ অভিভাবক এ টিউটর রেখেছেন। অনেক শিক্ষার্থী কোচিং সেন্টারের শরণাপন্ন হয়েছেন। কারণ, শিখন ক্ষতির মূল্যায়ন ও পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষ কোনো নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেয়নি। তাই সন্তানদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে এই পদক্ষেপ নিয়েছেন অভিভাবকরা।
সঙ্গত কারণে শিক্ষাবিদদের মতো আমরাও মনে করি, শিক্ষার্থীদের ঘাটতি কমিয়ে আনতে ছাত্রছাত্রীদের শিখন দক্ষতা পুনরুদ্ধারে স্কুল খোলা রাখা, পড়াশোনার পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা বা স্কুল ক্যালেন্ডার পুনর্বিবেচনা, মৌলিক দক্ষতার ওপর মনোযোগ দেয়া, স্কুলে খাবার কার্যক্রমের সম্প্রসারণ, পুনরুদ্ধার পরিকল্পনায় অর্থায়ন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। করোনার প্রভাবে শিক্ষা খাতের ক্ষতি পুনরুদ্ধারে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় ঘাটতি রয়েছে। অথচ প্রয়োজন ছিল শিক্ষায় কী ক্ষতি হয়েছে সে সম্পর্কে পরিমাপ করতে একটি শিক্ষাশুমারি করা কিন্তু তা করা হয়নি। শিখন ঘাটতি ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকার বাজেটেও কোনো বরাদ্দ রাখেনি। সবার প্রত্যাশা, সরকার এ ব্যাপারে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেবে। তা না হলে আগামীতে যে অপূরণীয় ক্ষতি হবে তা পূরণ হবে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement