২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
অনেক ভবন পড়ে আছে অব্যবহৃত

অনাবশ্যক ব্যয়ে লাগাম টানুন

-

বর্তমান সরকারের সময়ে সরকারি প্রকল্পে বিলম্ব বা অতিরিক্ত ব্যয় একরকম স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে। জবাবদিহি সুশাসনের অভাব এর বড় কারণ। তবে কেবল বিলম্ব ও বাড়তি ব্যয় হচ্ছে তাই নয়, অনেক এমন প্রকল্প নেয়া হচ্ছে যেগুলো সময়মতো সম্পন্ন হওয়ার পরও অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে বছরের পর বছর। ফলে কোটি কোটি টাকার অপচয় ঘটছে। জনগণের অর্থ পানিতে ফেলা হচ্ছে।
একটি দৃষ্টান্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের জন্য নির্মিত বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল। এর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে প্রায় দেড় বছর আগে। উদ্বোধন করা হয় এক বছর আগে। দুই দফায় কেনা হয় প্রায় ৪০ লাখ টাকার আসবাবপত্র। কিন্তু হলটি চালু করা যায়নি। কারণ কর্তৃপক্ষ এখনো হলের নীতিমালা চূড়ান্ত করতে পারেনি। ১৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হলটি অব্যবহৃত পড়ে আছে। শিক্ষার্থীরা থাকতে পারছেন না। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত ছয় হাজার ছাত্রী আবাসন সুবিধার বাইরে। তাদের বেশির ভাগ ক্যাম্পাসের আশপাশে ও শহরে মেস বা কটেজ ভাড়া করে থাকেন। তাদের গুনতে হয় বাড়তি খরচ।
এমন দৃষ্টান্ত একটি নয়, ভূরি ভূরি। বগুড়ার সরকারি আযীযুল হক কলেজে ছাত্রীদের আবাসন সুবিধা বাড়াতে নতুন একটি হল নির্মাণ করা হয় ২০১৮ সালে। পাঁচ কোটি চার লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হলটি পড়ে আছে। কারণ, সেখানে ছাত্রীরা থাকেন না। ভবনের বিভিন্ন কক্ষে সপরিবারে বসবাস করছেন কলেজের কর্মচারীরা। এখানেও একই কারণ। হল চালু করতে আরো যা যা দরকার কর্তৃপক্ষ সেগুলো সম্পন্ন করে উঠতে পারেনি।
কেবল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রকল্পে এমন ঘটছে তা নয়, সরাসরি সরকারি প্রকল্পে এমন উদাহরণ অসংখ্য। এক হাজার ২২৪ কোটি টাকায় সারা দেশে যে ৪৭০টি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেøক্স নির্মাণ করা হচ্ছে তাতেও দেখা গেছে একই প্রবণতা। ৪৭০টির মধ্যে এখন পর্যন্ত নির্মিত হয়েছে ৪০৬টি। কিন্তু একটি ভবনও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কাছে হস্তান্তর করা যায়নি। দেশের কোথাও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচিত কমিটি নেই। তাই সরকার বুঝিয়ে দিতে পারছে না। কোটি কোটি টাকায় নির্মিত ভবনগুলো তালাবদ্ধ পরিত্যক্ত স্থাপনার মতো পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। কোনো কোনো ভবনে সন্ধ্যার পর সমাজবিরোধীদের আড্ডা বসে এমন খবরও জানা যায় গণমাধ্যম সূত্রে। প্রশ্ন হচ্ছে-জনগণের বিপুল অর্থ পানিতে ফেলার এই আয়োজন কেন? প্রকল্প নিয়ে কোটি কোটি টাকায় ভবন বা কমপ্লেøক্স তৈরি করা হয়েছে। বাইরে থেকে দেখলে সেগুলো উন্নয়নের চোখ ধাঁধানো দৃষ্টান্ত বলে মনে হয়; কিন্তু ভেতরে শূন্য, ফাঁপা। এমন উদাহরণ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের প্রায় ১৩০ কোটি টাকার সুইমিংপুল প্রকল্প। এর মধ্যে নির্মিত ২২টি সুইমিংপুলের ১২টিই নানা কারণে বন্ধ ও অব্যবহৃত। ১০টি কোনো রকমে চালু আছে। নির্মাণ ও উদ্বোধনের পর এক দিনও চালু করা যায়নি এমন সুইমিংপুলের সংখ্যাও অনেক। অনেক সুইমিংপুলে পানি নেই, কোথাও পানি থাকলেও ব্যবহার উপযোগী নয়। কোথাও বা পুল চালু রাখার ব্যয় বহনের সমস্যা।
উন্নয়নের নামে জনগণের অর্থের অপচয় কোনোভাবে কাম্য নয়। সরকারের মন্ত্রীরা যতই বলুন, চার হাজার কোটি টাকা কোনো ব্যাপার না, বাস্তবে তা অনেক বড় ব্যাপার। বর্তমানে দেশ যে বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কটে পড়েছে তার একটি কারণ অতিরিক্ত ব্যয়ের প্রবণতা, তা অস্বীকারের উপায় নেই। অনাবশ্যক ব্যয়ে সংযত হওয়ার এখনই সময়।


আরো সংবাদ



premium cement