২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
অকেজো হচ্ছে জব্দ গাড়ি

এ অপচয় অমার্জনীয়

-

রাজধানীতে জায়গায় জায়গায় স্তূপাকারে পরিত্যক্ত যানবাহন পড়ে থাকতে দেখা যায়। বাস-ট্রাক-ট্যাক্সি-মোটরসাইকেল এমনকি রিকশা-ভ্যান পর্যন্ত সারি সারি ফেলে রাখা হয় ময়লার ভাগাড়ে। এ যেন মূল্যবান বস্তুর ঠিকানা। তবে ভাগাড়ে প্রতিদিন নতুন ময়লা আসে পুরনোগুলো সরিয়ে নেয়া হয়। জব্দ গাড়ির ক্ষেত্রে সে ব্যবস্থাপনাও নেই। শত শত গাড়ি বছরের পর বছর এক জায়গায় পড়ে থাকে। ধুলোর আস্তরণ পড়ে, যন্ত্রপাতিতে জং ধরে এমনকি কিছু গাড়ির ভাগাড় এমন হয়েছে; গাছ লতাপাতায় ঠেকে গেছে। প্রশ্ন হচ্ছে- উন্নয়নশীল একটি দেশে এভাবে গুরুত্বপূর্ণ বাহন কেন নষ্ট করছি আমরা। ঢাকার মতো ঘিঞ্জি একটি শহরে মূল্যবান জায়গায় এসব রেখে নাগরিক সুবিধা সঙ্কুচিত করা হচ্ছে কোন যুক্তিতে?
একটি দৈনিকে জব্দ হওয়া যানবাহন নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। রাজধানীর এসব ডাম্পিং স্টেশনে অযতœ অবহেলায় অকেজো বা ব্যবহার অনুপযোগী হচ্ছে রিকশা থেকে বিলাসবহুল গাড়ি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নানাবিধ কারণে এসব গাড়ি জব্দ করে থাকে। যতটা সহজে গাড়ি ডাম্পিং স্টেশনে আনা হয়; তা উদ্ধার করা ততই কঠিন। আইনি জটিলতার দীর্ঘসূত্রতায় এর মালিকরা পড়ে যান গ্যাঁড়াকলে। আদালতে মামলা গড়ালে সুরাহা সহজে হয় না। আবার বিশেষ ব্যবস্থায় ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হবে; সে সুযোগও নেই। প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, একটি মামলা নিষ্পত্তি হতে ১০-১৫ বছর লেগে যায়। এর মধ্যে একটি গাড়ি ধুলোবালি পড়ে জং ধরে কলকব্জা বিকল হয়ে যায়। ফলে এমন গাড়ি উদ্ধারের আগ্রহ ক্ষেত্রবিশেষে হারিয়ে ফেলেন মালিক।
ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ থানার পাশে ডাম্পিং স্টেশনে এক দঙ্গল গাড়ি দেখতে পাওয়া যায়। পড়ে থাকা এসব গাড়ি ফুটপাথ বন্ধ করে থাকায় পথচারীদের যাতায়াতে অসুবিধা হয়। কখনো কখনো যানজটের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিগত এক যুগে এর পরিধি অনেক বেড়েছে। এমনকি কোথাও কোথাও আরো বেশি সময় ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যাচ্ছে এগুলো। পত্রিকাটি আরো খবর দিচ্ছে, শুধু জয়পুরহাটে জব্দ হওয়া ১২ হাজার মোটরসাইকেল ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে। তাহলে অনুমান করতে কষ্ট হয় না যে, ৬৪ জেলায় অন্যান্য যানবাহনসহ মোট পরিত্যক্ত যানবাহনের সংখ্যা হবে বিপুল। সব মিলিয়ে উন্নয়নশীল দেশে এটি বড় ধরনের অপচয়। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে মনে হওয়া স্বাভাবিক, এর সুরাহায় কোনো কর্তৃপক্ষ নেই।
রাস্তায় ফিটনেসবিহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি চলতে দিতে অসুবিধা নেই। অথচ এসব গাড়ি বড় বড় দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। কিন্তু অবহেলায় ডাম্পিং স্টেশনে অকেজো হচ্ছে অসংখ্য সচল যানবাহন। কাগজপত্রের জটিলতায় কিংবা অন্য কোনো কারণে একটি সচল গাড়ি নষ্ট হতে পারে না। দোষীকে শাস্তি দেয়া যেমন অপরিহার্য; ঠিক তেমনিভাবে চলাচলে উপযোগী যানবাহন রাস্তায় চলার সুযোগ করে দেয়া উচিত। উন্নত দেশে এ অপচয় অকল্পনীয়। সঙ্গত কারণে আমাদেরও উচিত বিপুল অপচয় থেকে জাতিকে রক্ষা করা। এদিকে ডাম্পিং স্টেশনে অগণন রিকশা-ভ্যান নষ্ট হতে দেখা যায়। এগুলো সাধারণত গরিবের আয়ের উৎস। এসব হয় রাস্তায় চলাচল নিষিদ্ধ করতে হবে; আর চলতে দিলে জব্দ করে ভাগাড়ে ফেলা যাবে না। এটি রীতিমতো অপরাধ। আমরা আশা করি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার বিভাগ ও সরকার জব্দ যানবাহন নিয়ে নতুন করে ভাববে। সম্ভাব্য কম সময়ে জব্দ হওয়া সচল গাড়ি রাস্তায় চলার ব্যবস্থা করবে।


আরো সংবাদ



premium cement