২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
১৫ আগস্টের শোকাবহ ঘটনা

বঙ্গবন্ধু দেশের মহান স্থপতি

-

আজ ১৫ আগস্ট। গভীর শোকাবহ ও বেদনামথিত একটি দিন। বাংলাদেশ নামক স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সপরিবারে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শোকপূর্ণ দিবস আজ। ১৯৭৫ সালে ঢাকায় নজিবরবিহীন এ ঘটনা ঘটেছিল। এ ঘটনা দেশের শুধু একজন প্রেসিডেন্টকে ছিনিয়ে নেয়নি চিরতরে; আমাদের জাতীয় স্বাধিকার আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতাকেও জাতি দিনটিতে হারিয়েছে। ইতিহাসের এই অবিস্মরণীয় রক্তাক্ত অধ্যায় রাষ্ট্র ও জাতির ওপর তাৎপর্যবহ ও সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলে। এর দ্বারা বদলে যায় এ দেশের জাতীয় রাজনীতির গতিধারা।
’৭৫ সালের মধ্য আগস্টের প্রত্যুষে সংঘটিত সে হত্যাকাণ্ডে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ছাড়াও তার সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা, তিন পুত্রসন্তান কামাল, জামাল ও রাসেল এবং প্রথমোক্ত দু’ভাইয়ের নববিবাহিতা স্ত্রীদ্বয়, আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মণি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী এবং আরো ক’জন আত্মীয় ও অতিথি নিহত হন। তাদের মধ্যে ছিলেন মুজিবের ভগ্নিপতি ও মন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত এবং তার পরিবারের কিছু সদস্য, মুজিবের অনুজ শেখ আবু নাসের প্রমুখ। পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালার কাছে আমরা তাদের প্রত্যেকের মাগফিরাত কামনা করি। তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের জন্য রইল গভীর সমবেদনা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও তার ছবি বাংলাদেশে এত বেশি প্রচারিত ও পরিচিত যে, তার সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার প্রয়োজন নেই। আমাদের ইতিহাসের স্মরণীয় মহাচরিত্র তিনি। ইতিহাসে নির্ধারিত স্থায়ী অবস্থান থেকে তার অপসারণ সম্ভব নয়। তিনি দীর্ঘ চার দশকজুড়ে ঘটনাবহুল রাজনীতির বিচিত্র প্রবাহের ফসল এবং একজন আজীবন সংগ্রামী ব্যক্তিত্ব। শ্বেতাঙ্গ উপনিবেশবাদের আমলের অন্তিমপর্বে এই উপমহাদেশের পশ্চাৎপদ সংখ্যালঘুদের পৃথক আবাসভূমি কায়েমের আন্দোলনের একজন ছাত্রকর্মী হিসেবে শেখ মুজিবের রাজনৈতিক অভিযাত্রার সূচনা। ১৯৪৭ সালে নতুন দেশ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার অল্প সময় পরেই শুরু হওয়া গণতন্ত্রের সংগ্রামে তার নেতৃত্ব বিকশিত হতে থাকে। বিভিন্ন নিপীড়ন ও প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও একসময় তিনি তদানীন্তন পূর্ববঙ্গের গণম্যান্ডেটের অধিকারী নেতার পর্যায়ে উন্নীত হলেন। বর্তমান বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ন্যায্য অধিকার কায়েমের আন্দোলনে প্রথম থেকেই মুজিব ছিলেন সাহসী ও অগ্রণী সারথি। আমাদের জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার কায়েমের সংগ্রামের ক্রম-উত্তরণের ধারাবাহিকতায় শেখ মুজিবুর রহমান নিরঙ্কুশ নেতৃত্বের মর্যাদায় অভিষিক্ত হন। তাকে মূল নেতা হিসেবে মেনে নিয়েই ১৯৭১ সালে পরিচালিত হয়েছে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ। সাবেক পাকিস্তান আমলের সিকি শতাব্দীতে স্বৈরতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্র ও মৌলিক অধিকার কায়েমের আন্দোলনে তার ছিল অনন্য ভূমিকা। এ সময়ে ভাষা আন্দোলন, স্বায়ত্তশাসন আদায়ের সংগ্রাম এবং সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনেও মুজিবের ব্যাপক অবদান অনস্বীকার্য। তখন নির্যাতন, শোষণ, বঞ্চনা ও বৈষম্যের পরিপ্রেক্ষিতে জনসাধারণ জাতীয়তাবাদী চেতনায় জাগ্রত, ঐক্যবদ্ধ ও সংগঠিত হয়েছিল। পরিপূর্ণ স্বশাসন বা স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার সে আন্দোলনের নেতৃপুরুষ শেখ মুজিবুর রহমান।
ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে মুক্তিলাভের পর মুজিব আমাদের এ অঞ্চলের প্রধান নেতারূপে আবির্ভূত হলেন। কিন্তু ’৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় পেয়েও তিনি হন রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে বঞ্চিত। এ পরিস্থিতিতে মুজিবের আহ্বানে অসহযোগ আন্দোলন এ দেশে কার্যত পাকিস্তানি শাসনের যবনিকাপাত ঘটায়। জনগণ তখন স্বাধীনতার লক্ষ্যে সরব ও তৎপর। ’৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে সেনাবাহিনী হত্যা ও ধ্বংসের তাণ্ডবের মধ্যে শেখ মুজিবকে বন্দী করে। মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের কিছু পরে মুজিব মুক্তি পেয়ে বীরের বেশে প্রত্যাবর্তন করেন। বঙ্গবন্ধুর মির্মম হত্যার বিচার হয়েছে। কিন্তু এই হত্যার পেছনে যারা কলকাঠি নেড়েছে তারা এখনও অধরা। তাদের বিচারের আওতায় আনার দায়িত্ব বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বাধীন বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের। সরকার সেই দায়িত্ব পালন করবে আজকের দিনে এটাই প্রত্যাশা।
সেই সাথে দেশবাসী আশা করে জাতির বৃহত্তর স্বার্থেই শেখ মুজিবের যথাযথ ও সর্বাঙ্গীণ মূল্যায়ন করা হবে। তাহলেই তার যাবতীয় সাফল্য ও সীমাবদ্ধতা, বিজয় ও ব্যর্থতা, উভয় ক্ষেত্র থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশ ও জাতি পাথেয় সঞ্চয়ে সক্ষম হবে।


আরো সংবাদ



premium cement