২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
দরিদ্র মানুষের করুণ হাল

বিপর্যয় ঠেকাতে উদ্যোগ নেই

-

দেশে জীবনযাত্রার ব্যয় নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্তের সীমার বাইরে চলে গেছে অনেক আগেই। এর অভিঘাতে সমাজে ঘটতে শুরু করেছে অস্বাভাবিক সব ঘটনা। খাগড়াছড়িতে এক নারী শিশুসন্তানকে বিক্রি করতে বাজারে উঠিয়েছেন। দাম চান ১২ হাজার টাকা। ক্রেতাও মিলে যায়। খবরটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্যরা সহায়তায় এগিয়ে আসেন। আপাতত সন্তান বিক্রির সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন অসহায় ওই মা। সারা দেশে এমন অসংখ্য মা রয়েছেন যারা আকাশছোঁয়া পণ্যমূল্যে দিশেহারা। শহরের বস্তি, গ্রামের জেলেপল্লী এবং যেখানে নিম্ন আয়ের মানুষ বাস করে সেখানে বুভুক্ষু মানুষের আহাজারি টের পাওয়া যাচ্ছে।
নিম্নবিত্তের মানুষেরা কিভাবে জীবনের ভারবোঝা বইতে অসামর্থ্য হচ্ছেন, এর কিছু চিত্র বিভিন্ন মাধ্যমে আসছে। একটি প্রধান দৈনিকে সিলেট শহরের এক অটোরিকশা চালকের অগ্নিমূল্যের বাজারে বেঁচে থাকার লড়াই তুলে ধরা হয়েছে। তার সংসারে বৃদ্ধা মা, বোন, স্ত্রী ও শিশুসন্তান রয়েছে। মা হার্টের রোগী। উচ্চ রক্তচাপসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। তার জন্য দৈনিক ৫০ টাকার ওষুধ কিনতে হয়। শিশুসন্তান মায়ের বুকের দুধ পায় না। বাচ্চার জন্য মাসে প্রায় আড়াই হাজার টাকার গুঁড়োদুধ কিনতে হয়। অটো ভাড়া প্রতিদিন গুনতে হয় ৩০০ টাকা। দিনে সব মিলিয়ে গড়ে আয় ৫০০ টাকা। এ দিকে আড়াই হাজার টাকা বাসাভাড়া দিতে হয়। সাথে রয়েছে ঋণের কিস্তি পরিশোধ। এ অবস্থায় টাকার অভাবে এখন মায়ের ওষুধ কিনতে পারেন না তিনি। কখনো মেয়ের জন্য অবশ্য প্রয়োজনীয় গুঁড়োদুধ কিনতে পারছেন না।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী, দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ২১ দশমিক ৮ শতাংশ। সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের ২০২১ সালের জরিপ, দেশে দারিদ্র্যের হার ৪২ শতাংশ। করোনা-পরবর্তী সব জরিপ ইঙ্গিত করছে, এ হার দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। প্রকৃত আয় কমে যাওয়া, বেকারত্বের হার বৃদ্ধির পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক ছদ্ম বেকারত্ব তৈরি হওয়ায় দারিদ্র্যসীমার কাছে থাকা মানুষজন এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। আর মধ্যবিত্তের জীবনমানের অবনতি ঘটেছে বিস্তর। সিলেটের এমন দুর্বিষহ সময় পার করা অটোরিকশা চালক আর খাগড়াছড়িতে সন্তান বিক্রি করতে চাওয়া মায়েদের সংখ্যা খুঁজলে চার পাশে এখন অনেক পাওয়া যাবে।
এমন দুরবস্থার মধ্যে জ্বালানি তেলের উচ্চ মূল্যবৃদ্ধি আগে থেকে বিরাজমান মূল্যস্ফীতিতে পতিত মানুষজনকে আরো অসহায় করে দিয়েছে। আগে বলা হতো, ‘মাছে ভাতে বাঙালি’। এখন মাছের দাম এতটা বেশি যে, জনসংখ্যার বিপুল অংশ দুর্মূল্যের বাজারে তা কেনার সামর্থ্য রাখে না। কিছুটা সস্তা ছিল ডিম ও ফার্মের মুরগি। তা-ও ক্রয়সীমার বাইরে চলে যাচ্ছে। এক ডজন ডিমের দাম দেড় শ’ টাকা ছাড়িয়েছে, ফার্মের মুরগি কেজিপ্রতি হয়েছে ২১০ টাকা। মূল্যবৃদ্ধির অভিঘাতে ক্রয়ক্ষমতা হারানো দরিদ্র মানুষের ওপর সরাসরি আঘাত হেনেছে। তেলের দাম বাড়িয়ে মূলত সরকার দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীকে নিঃস্ব করে দিচ্ছে।
মানুষের প্রশ্ন- কেন এ অরাজক পরিস্থিতি? খবরে জানা যাচ্ছে, আমাদের প্রতিবেশী পশ্চিমবঙ্গে এক ডজন ডিমের দাম ৭৮ টাকা। দুই দেশের একই ধরনের আর্থসামাজিক অবস্থার মধ্যে কেন বাংলাদেশে একই ডিম প্রায় দ্বিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে? কিছু নিত্যপণ্যের দাম এভাবে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করলে পণ্যের অগ্নিমূল্যের কারণ বোঝা যাবে। মোটকথা- ব্যাপক অনিয়ম অব্যবস্থাপনা অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণ। এ জন্য কোনোভাবেই সাধারণ মানুষ দায়ী নয়। কিন্তু সরকার সৃষ্ট অনিয়ম অব্যবস্থাপনার মাশুল গুনতে হচ্ছে তাদের। এ পরিস্থিতি ঠিক করতে সরকার এখনো নির্ভরযোগ্য পদক্ষেপ নিতে পারেনি। আশঙ্কা, অচিরে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটবে।


আরো সংবাদ



premium cement