২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
তুচ্ছ ঘটনায় গুরুতর সব ফৌজদারি অপরাধ

সামাজিক অস্থিরতার বহিঃপ্রকাশ

-

সারা দেশে বেড়ে চলেছে সামাজিক অপরাধ। সম্পত্তির জন্য খুন হচ্ছে মানুষ। ছেলের হাতে প্রাণ হারাচ্ছেন বাবা। অটোরিকশা ছিনতাই করতে খুন করা হচ্ছে চালককে। গয়নার জন্য স্বামীর হাতে প্রাণ দিচ্ছেন স্ত্রী। পরকীয়ায় বাধা দেয়ায় স্ত্রীকে হত্যা, ইত্যাকার ঘটনা এখন হরহামেশা ঘটছে। উদ্বেগকজনক হলো- মাত্র দু-তিন দিনের ব্যবধানে সংবাদপত্রে এমন কয়েকটি খুনের খবর প্রকাশ পেয়েছে, যা নিয়ে চিন্তিত না হয়ে পারা যায় না।
গণমাধ্যমের বরাতে জানা যায়, রাজধানীর উত্তরায় এটিএম বুথে টাকা তোলার সময় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। খুনিকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। অন্য দিকে পরকীয়ায় বাধা দেয়ায় রাজধানীর একটি হোটেল থেকে এক নারী চিকিৎসকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। খুনের অভিযোগে ব্যাংকার স্বামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
চট্টগ্রামে সম্পত্তিসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের হামলায় এক যুবক নিহত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে জেলার ফটিকছড়ির ধর্মপুর এলাকায় ওই ঘটনা ঘটে। কুমিল্লার বরুড়ায় ছেলের ছুরিকাঘাতে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। গত ৭ আগস্ট স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া চলছিল। এ সময় তাদের একমাত্র ছেলে বাবার কোমরে ছুরি দিয়ে আঘাত করে। বৃহস্পতিবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা যান আহত ব্যক্তি।
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় এক মিশুকচালককে ছুরিকাঘাতে হত্যার পর মিশুকটি ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। গত শুক্রবার ভোরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পশ্চিমে চাঁদমারির বেইলি স্কুল গলির সড়কে ঘটনাটি ঘটে। নিহত ব্যক্তি ফতুল্লা মডেল থানার তল্লা গ্রিন রোডে একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। সাভারে এক গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগে গত শুক্রবার পৌর এলাকার ব্যাংক কলোনি থেকে নিহতের স্বামীকে গ্রেফতার করা হয়। নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, পাঁচ বছর আগে পারিবারিকভাবে ওই দম্পতির বিয়ে হয়। বিয়ের সময় কনেকে ২৫ ভরি সোনার গয়না দেয়া হয়। গয়না নিয়ে স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ির সাথে বাকবিতণ্ডা হতো। মাঝে মাঝে এ নিয়ে উভয়পক্ষে ঝগড়া হতো। এর জেরে ওই গৃহবধূকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। আরেক ঘটনায়, সাভারের পৌর এলাকার জাহাঙ্গীরনগর হাউজিং সোসাইটির একটি জলাশয় থেকে গত শুক্রবার এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় ওই যুবক নিখোঁজ হন। হত্যার অভিযোগে তিন যুবককে আটক করে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে তুলে দিয়েছেন স্থানীয়রা।
সংবাদপত্রে প্রকাশিত উল্লিখিত ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, সামাজিকভাবে আমাদের সমাজ কতটা অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। এমন ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কারণ অপরাধবিষয়ক গবেষকরা নিশ্চয় চিহ্নিত করতে পারবেন। তা সত্ত্বেও সাদা চোখে আমরা বলতে পারি, দেশে সামাজিকভাবে যে অস্থিরতা চলছে মোটাদাগে তার বহিঃপ্রকাশ এগুলো। এর পেছনের সমাজতাত্ত্বিক কারণ হতে পারে- দেশে ধনী-গরিবের বৈষম্য আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে প্রকট হয়েছে। ফলে সঙ্কটে পড়া অনেকে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে বেআইনি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি ইত্যাদি সব অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে অবলীলায়। অন্য দিকে, ভোগবাদী জীবনদর্শনে উদ্বুদ্ধ হয়ে অনেকে অর্থ আয়ের পথে নেমে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। একই সাথে আমাদের ঐতিহ্যবাদী সমাজে ভাঙন ধরেছে। ফলে পারিবারিক বন্ধন আলগা হতে হতে এখন ছিঁড়ে যাওয়ার উপক্রম। ফলে তুচ্ছ ঘটনায় খুনের মতো ভয়াবহ ফৌজদারি অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।
উদ্বেগের বিষয় হলো- সমাজে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রের যে বাহিনী নিয়োগপ্রাপ্ত সেই পুলিশ সদস্যদের দীর্ঘ দিন ধরে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনে যথেচ্ছ ব্যবহার করায় তারা তাদের মূল কাজ করতে উদাসীন বলে মনে হয়; যার কারণে সারা দেশে দিন দিন বাড়ছে খুনোখুনি।
আমরা মনে করি, বর্তমান সামাজিক অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে সরকারকে আরো মনোযোগ দিতে হবে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমনের চেয়ে পুলিশ বাহিনীকে অপরাধ প্রতিরোধে পরিপূর্ণভাবে নিয়োগ করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement