২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
ডলার বাজারে অস্থিরতা বাড়ছেই

দায়ী ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক

-

খোলাবাজারে ডলারের দাম গত সোমবার ১১৫ টাকায় উঠেছে। এটি এ যাবৎকালে ডলারের সর্বোচ্চ দাম। সোমবার দেশের খোলাবাজারে প্রতি ডলার ১০৮ থেকে ১০ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছিল। সেখান থেকে বাড়তে বাড়তে তা ১১৫ টাকায় পৌঁছে।
ডলারের এই দাম বৃদ্ধির কারণ সবারই জানা। ডলারের চাহিদা বেড়েছে; কিন্তু জোগান কম। অর্থনীতির স্বাভাবিক নিয়মেই তাই দাম বাড়বে। কিন্তু গত এক যুগের বেশি সময় ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিপুল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের গল্প শোনানো হচ্ছিল। তাতে সাধারণ মানুষের মনে ধারণা জন্মায় যে, দেশ শিগগিরই উন্নত বিশে^র সাথে টেক্কা দেয়ার পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। সেই রিজার্ভের গল্প এখন ফুটো বেলুনের মতো চুপসে যাওয়ার কারণ কী? কারণ বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের যেসব উপায় রয়েছে সেগুলো যথেষ্ট নয়। একমাত্র তৈরী পোশাক রফতানি করে দেশের সার্বিক চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। দ্বিতীয় আরেকটি উপায়, প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো আয় বা রেমিট্যান্স। সেই রেমিট্যান্স বৈধ পথে আসছে না। যতটা বৈধ পথে আসছে তার চেয়ে বেশি আসছে অবৈধ পথে- ফলে সরকারের হিসাবে তা যোগ হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ কমছে। রফতানির অন্যান্য পণ্য যেগুলো জোগান দেয়ার মতো সম্ভাবনা বাংলাদেশের ছিল সেগুলো যেমন- পাট, চামড়া ইত্যাদি অনেক আগেই ধ্বংস করা হয়েছে নানাভাবে। সর্বশেষ ধ্বংস করা হয়েছে চামড়া খাত। এর বাইরে তথ্যপ্রযুক্তির পরিষেবা রফতানির ব্যাপারে কিছু দিন শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার গল্পও যে একটি ফুটো বেলুন সেটি পরিষ্কার হয়ে যায় যখন উন্নত বিশ^ নয় বরং এ উপমহাদেশের অন্যান্য দেশের সাথেও আমাদের সাফল্যের তুলনা করা হয়।
সব মিলিয়ে আমাদের ডলারের মজুদ বাড়ছে না। কিন্তু আমদানি বাড়ছে হু হু করে। আমদানি ব্যয় মেটাতে ডলার লাগবেই। কিন্তু এখন ডলার মহার্ঘ্য হয়ে উঠেছে। সঙ্কট দিন দিনই তীব্র হচ্ছে। সরকার কৃচ্ছ্রতার নীতি গ্রহণের পরও সঙ্কট কাটছে না। ব্যাংকগুলোতে ডলারের জন্য হাহাকার। আমদানির জন্য এলসি খোলার পরিমাণ কমে গেছে। কোনো কোনো ব্যাংক থেকে এলসি খোলা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে বলেও গণমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশ পাচ্ছে। জানা যাচ্ছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও বড় কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক পরিস্থিতি সামাল দিতে পারলেও ছোট ব্যাংকগুলোর পরিস্থিতি এখনই নাজুক।
সরকার বলছে, ডলারের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়ানো হচ্ছে। এ জন্য মানি এক্সচেঞ্জে অভিযান চালানো হয়েছে, কিছু প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে, কাউকে দণ্ড দেয়া হয়েছে। তাতে উপকার পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ, দেশী-বিদেশী ছয়টি প্রধান ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগই মূলত টাকা ও ডলারের জোগান এবং চাহিদার বিষয়টি নিশ্চিত করে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো ডলারের বাজার অস্থিতিশীল করে তুলেছে অতিরিক্ত মুনাফা করতে গিয়ে।
কিন্তু এ ধরনের ব্যবস্থা মূল সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে কতটা সহায়ক হবে তা বলা যাচ্ছে না। কারণ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেয়া দাম আর খোলাবাজারে দামের মধ্যে পার্থক্য কমিয়ে আনতে না পারলে বাজারে অস্থিরতা কাটবে না। গত ১৫ বছরে দেশের ব্যাংক ব্যবস্থায় কী পরিমাণ অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা হয়েছে, তা সংশ্লিøষ্ট সবাই জানেন। কিন্তু তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। না কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তরফে না সরকারের তরফে। ডলারের বাজার অস্থিতিশীল করা এক গুরুতর অভিযোগ। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিষদ বা পরিচালনা পর্ষদ দায় এড়াতে পারে না। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কি? যদি না হয় তাহলে শুধু ট্রেজারি বিভাগের প্রধানদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হয়ে থাকবে। আর জনজীবন আরো ভোগান্তির শিকার হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement