২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`
কূটনীতিকের বাসায় মারিজুয়ানা

অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক

-

বিদেশে অবস্থানরত দেশের এক ঊর্ধ্বতন কূটনৈতিক কর্মকর্তার বাসায় নিষিদ্ধ মাদক আটক করার ঘটনা ঘটেছে। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশে সরকার পরিচালনার ধরন এমন কেলেঙ্কারির জন্য প্রধানত দায়ী বলা যায়। সরকার প্রতিটি সমস্যাকে উপস্থিত চাতুর্যের সাথে মোকাবেলা কিংবা ধামাচাপা দেয়ার নীতি নিয়ে চলেছে। রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সরকারের এমন নীতি এখন বিষফোঁড়া হিসেবে দেখা দিয়েছে। আমাদের রাজনীতির বর্তমান অনিশ্চয়তাকর পরিস্থিতি ও অর্থনীতির অনিশ্চিত যাত্রার জন্য সরকারের এমন নীতিই দায়ী। ইন্দোনেশিয়ায় উপ-রাষ্ট্রদূত হিসেবে কর্মরত কূটনীতিক কাজী আনারকলির এই কেলেঙ্কারিও একই কারণে উদ্ভূত হতে পেরেছে। দেশের ভেতরের অনিয়ম দুর্নীতির ফল দেশের মানুষ ভোগ করলেও বাইরে সুনামহানি কমই ঘটে। তবে বাইরের দেশে কূটনৈতিক সুুবিধার আড়াল রেখে এমন অপরাধ দেশের ভাবমর্যাদাকে অনেক বেশি ক্ষুণœ করে।
সরকারবান্ধব মিডিয়ায় আনারকলির অতীতের কীর্তিকলাপ নিয়ে বিস্তারিত খবর প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, তিনি পুনঃ পুনঃ ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন এবং অনৈতিক ও অসামাজিক কর্মকাণ্ডও চালিয়েছেন। প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে সময় মতো তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা কখনো নেয়া হয়নি। ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ হিসেবে ২০তম বিসিএসে নিয়োগ পাওয়ার পরপরই আনারকলি সরকারের গুডবুকে থেকেছেন। সরকারের পালাবদলেও তিনি চাতুর্যের সাথে প্রভাব ধরে রাখেন। একটি পত্রিকার বিবরণ মতে, বিশেষ আনুকূল্য পেয়ে সিনিয়রদের ডিঙিয়ে যুক্তরাজ্যে স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে যান। সেখানে ‘স্বামীর বদলে’ সরকারের অন্য এক কর্মকর্তাকে নিয়ে বসবাস করেন। এরপর তিনি হংকংয়ে ভাইস কনসাল হিসেবে নিয়োগ পান। সেখানে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও তার স্ত্রীর সাথে মারামারির ঘটনা ঘটান।
সহকর্মীদের সাথে দুর্ব্যবহার, হয়রানি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে আসতে থাকে। এর পরও তিনি ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে ডেপুটি কনসাল হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগ পান। তিনি হয়ে ওঠেন আরো বেপরোয়া। কন্যাসমেত এই নারী অনাত্মীয় এক যুবককে কাজের লোক হিসেবে দেশ থেকে নিয়ে যান। এ ধরনের চলাফেরার পরও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কোনো প্রশ্ন করেনি। ইন্দোনেশিয়ায় মাদক কেলেঙ্কারির জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতনরাও দায় এড়াতে পারেন না। কারণ বাংলাদেশ থেকে যাওয়া এই যুবক আনারকলির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টে অভিযোগ এনেছিলেন। মন্ত্রণালয় তখন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া দূরে থাক, তাকে আরো গুরুত্বপূর্ণ পোস্টিং দিয়ে বসে।
যুবক দাবি করে, আমেরিকার ভিসার জন্য আনারকলিকে বিপুল অর্থ দিয়েছেন। আর ওই ঘটনাটি ঘটে ইন্দোনেশিয়ায় নাইজেরীয় যে যুবকের সাথে তিনি লিভ টুগেদার করছিলেন তার সাথে সম্পর্ক হওয়ার পর। কারণ তখন বাংলাদেশী এ যুবককে আনারকলি চাকরিচ্যুত করেন। অন্য দিকে এটি মানব পাচারের একটি ঘটনা হিসেবে তার বিরুদ্ধে লিপিবদ্ধ হয়। সরকার এ সময় আনারকলির অপরাধের বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত না করে তড়িঘড়ি করে ভালো পোস্টিং দিয়ে ইন্দোনেশিয়ায় পাঠিয়ে দেয়। কিছু দিন পর দেখা গেল, নাইজেরিয়ার যুবকের সাথে তিনি ইন্দোনেশিয়ায় পূর্ণ কূটনৈতিক সুযোগ সুবিধা নিয়ে ‘একই ঘরে বসবাস’ করেছেন। দেশটির মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এক অভিযান চালিয়ে তাদের ঘর থেকে মারিজুয়ানা উদ্ধার করে। ওই যুবকের ব্যাপারে জানা যাচ্ছে, তিনি বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়ান। তার বিরুদ্ধে মাদক চোরাকারবারি করার ব্যাপারে সন্দেহ করা হচ্ছে।
কূটনীতিকের দায়িত্ব পায় দেশের মেধাবী ও ক্লিন ইমেজধারীরা। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এ কথাটি সত্য ছিল। বিগত বছরগুলোতে এ পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছে। বিদেশী দূতাবাসগুলোতে থাকা বাংলাদেশী বিভিন্ন পর্যায়ের ফরেন সার্ভিসের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এখন বহু অভিযোগ আসছে। তবে এদের সংখ্যা এখনো খুব বেশি নয়। আশঙ্কাজনক বিষয়টি হচ্ছে- সরকারের অবস্থান। সরকার সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আনারকলির ঘটনাটি তার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। তবে এ ঘটনায় সর্বশেষ, একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা আশা করব, এবার আর এড়িয়ে যাওয়া হবে না। তার বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ একটি তদন্ত হবে। অপরাধ অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে; একইভাবে অন্যদের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগগুলো নিয়েও যাতে তদন্ত করা হয়। তাদের বিরুদ্ধেও যাতে ব্যবস্থা নেয়া হয়। অন্যথায় এমন কেলেঙ্কারির ঘটনা আরো ঘটতে পারে।

 


আরো সংবাদ



premium cement