২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
স্থানীয় সরকারে এমপিদের সম্পৃক্ততা

আইন প্রণয়নই কর্তব্যকাজ

-

সংবিধান অনুযায়ী সংসদ সদস্যদের (এমপি) শুধু আইন প্রণয়নের দায়িত্ব পালন করার কথা। সংসদের কার্যপ্রণালিবিধির আওতায় সংসদ সম্পর্কিত আরো যে দায়িত্ব রয়েছে তা-ও সংসদসংশ্লিষ্ট। এদিকে সরকার কাঠামোর দিক থেকে আইন বিভাগের সদস্য হিসেবে সংসদ সদস্যদের নির্বাহী দায়িত্ব পালনের সুযোগ কম। এ দায়িত্ব নির্বাহী বিভাগের। অবশ্য সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যরা একই সাথে আইন ও নির্বাহী বিভাগের সদস্য হওয়ায় তাদের েেত্র দ্বৈত ভূমিকার সুযোগ রয়েছে।
কিন্তু আমাদের দেশে এমপিরা তাদের ওপর অর্পিত মূল কাজে কম সময় দিয়ে ব্যস্ত থাকতে পছন্দ করেন নির্বাহী কাজে। বিশেষ করে স্থানীয় সরকারে বিভিন্ন স্তরের উন্নয়নকাজের প্রতি তাদের আগ্রহ বেশি। এ সম্পর্কে সহযোগী একটি পত্রিকায় সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমাদের এমপিদের আইন প্রণয়ন নিয়ে আগ্রহ নেই- আগ্রহ নির্বাহী কাজে।’
সংসদ সদস্যদের উপদেষ্টা করায় তাদের সুপারিশের বাইরে যেতে পারে না উপজেলা পরিষদ। জেলা পরিষদেও একই অবস্থা। স্থানীয় পর্যায়ে টিআর, কাবিটা, বয়স্কভাতাসহ সামাজিক নিরাপত্তা-বেষ্টনীর বহু প্রকল্পে সংসদ সদস্যরা সংশ্লিষ্ট। এসব প্রকল্প থেকে কারা সুবিধা পাবেন সেটি স্থানীয় এমপির সম্মতি ও নির্দেশনায় হয়ে থাকে বলে অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। আবার এলাকার শিা, স্বাস্থ্যসহ নানা প্রতিষ্ঠানে এমপিদের সম্পৃক্ততা থাকে। স্থানীয় পর্যায়ে কোনো চাকরির েেত্রও অনেক এমপির থাকে একচ্ছত্র আধিপত্য।
বস্তুত স্থানীয় সরকার নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে সংসদ সদস্যদের ওপর। স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিরা তাদের ভোটার বা জনগণের চাহিদা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। এমন পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা যখন স্থানীয় সরকারে এমপিদের ভূমিকা পুনর্বিবেচনার পরামর্শ দিচ্ছেন তখন সরকার এবার পৌরসভাতেও এমপিদের উপদেষ্টা করতে যাচ্ছে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এমন সুপারিশ করেছে। অথচ এমপিরা পৌরসভার উপদেষ্টা হলে তা হবে সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। উচ্চ আদালতের এক রায়ে বলা হয়েছে, ‘সংসদ সদস্যরা স্থানীয় উন্নয়নকাজে যুক্ত হতে পারবেন না, এটি অসাংবিধানিক’। তাই এ কথা বলা যায়, এমপিদের পৌরসভার উপদেষ্টা করতে হলে শুধু আইন সংশোধন করলে হবে না, এ জন্য সংবিধান সংশোধন করতে হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পৌরমেয়র অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলেছেন, এমপিরা পৌরসভার উপদেষ্টা হলে স্থানীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হবে। প্রশাসনিক কাজে দ্বন্দ্ব ও জটিলতা আরো বাড়বে।
এটি পরীক্ষিত সত্য যে, কার্যকর স্থানীয় সরকার বিভাগ না থাকলে দেশের টেকসই উন্নয়ন সম্ভাবনা খুব কম থাকে। উন্নয়ন চাইলে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির নেতৃত্বে স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। কিন্তু এ দেশে সব সময় উচিত কাজ হয় না। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান গতিশীল ও শক্তিশালীকরণে কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, সংসদ সদস্য ও স্থানীয় সরকারের বিষয়টি বহুল বিতর্কিত। স্থানীয় সরকার পরিচালনায় এমপিদের কোনো ভূমিকা থাকা সমীচীন নয়। বাংলাদেশসহ অনুন্নত দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির আলোকে বিচার করলে দেখা যায়, নির্দিষ্ট নির্বাচনী এলাকার উন্নতিতে এমপিদের মতামত সম্পূর্ণভাবে উপো করা যায় না। সংসদ সদস্যরা যখন স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে সুপারিশ করেন, তখন সেটি আর সুপারিশ থাকে না; আদেশে পরিণত হয়।
আইন অনুযায়ী স্থানীয় সরকার চালাবেন সংশ্লিøষ্ট জনপ্রতিনিধিরা। এমপিদের উপদেষ্টা করলে কী হয় জেলা-উপজেলা পরিষদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে তা স্পষ্ট। এরপরও পৌরসভায় একই পথে হাঁটা কতটা যুক্তিযুক্ত সে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। আমরা মনে করি, শুধু পৌরসভা নয়, স্থানীয় সরকারের কোনো পর্যায়ে সংসদ সদস্যদের সম্পৃক্ততা দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না, এটি যথেষ্ট পরিষ্কার। তাই স্থানীয় সরকারের সব পর্যায় থেকে এমপিদের সম্পৃক্ততা বাদ দিতে হবে। যারা উন্নয়নকাজের প্রতি আগ্রহী তারা স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরে রাজনীতিতে নিজেদের সম্পৃক্ত করবেন।


আরো সংবাদ



premium cement