২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`
সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইইউর আহ্বান

গণতন্ত্র ফিরে আসুক সুষ্ঠু ধারায়

-

২০২৩ সালে দ্বাদশ সাধারণ নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই সবার মধ্যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বাড়ছে। কারণ এর আগে পরপর দু’টি সাধারণ নির্বাচনে মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। ক্ষমতাসীন সরকার ও নির্বাচন কমিশন যেভাবে এগোচ্ছে তাতে দেশ আবারো একটি প্রহসনের নির্বাচনের পথেই হাঁটছে বলে মনে হচ্ছে। সাধারণ মানুষ ও বিরোধী দলের প্রবল দাবির পরও অবাধ নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচনের তাগিদ দেখা যাচ্ছে না তাদের মধ্যে। এমন প্রতিকূলতার মধ্যে দেশ থেকে গণতন্ত্র বিদায় নেয়ার প্রহর গুনছে বললে সম্ভবত অত্যুক্তি হবে না। এ জন্য গণতান্ত্রিক বিশ্ব আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশকে নির্বাচনী ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় উৎসাহিত করছে, তাগিদ দিচ্ছে।
আমাদের জনপ্রতিনিধিরা সাধারণ মানুষ ও রাষ্ট্রের প্রতি খুব কমই দায় বোধ করেন। সুষ্ঠু নির্বাচনী ব্যবস্থা না থাকায় এ অবস্থার উদ্ভব হতে পেরেছে। কারণ বিগত দু’টি সাধারণ নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দায়িত্বে কারা আসবেন তা নির্ধারণে জনরায় অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে। ফলে রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে চরম দুর্নীতি অব্যবস্থাপনা জাতীয় জীবনকে গ্রাস করেছে। সরকারি কর্মকাণ্ডে কোনো জবাবদিহি নেই। এমনকি আইনশৃঙ্খলাবাহিনীও একধরনের দায়মুক্তি ভোগ করছে। এই সুযোগে দেশে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাও ঘটেছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর উপর্যুপরি দাবির পরও সরকার তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বহু মানুষ বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার। অনেকের এখনো কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
নির্বাচনী ব্যবস্থা সংশোধন ও মানবাধিকার পুনরুদ্ধার নিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে সম্প্রতি আলোচনা হয়েছে। ইউরোপে প্রবাসী বাংলাদেশীদের উপস্থিতিতে এই আলোচনায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জাতীয় ও স্থানীয় উভয় নির্বাচন অত্যন্ত বিতর্কিত হচ্ছে। নির্বাচনে কারচুপি সহিসংতা চলছে, অব্যাহত মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমাগত অবনতির দিকে যাচ্ছে। বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও মানবাধিকারকর্মীরা কোণঠাসা। বাক ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা উদ্বেগজনক অবস্থায়। অন্য আরো কয়েকটি বিষয়ের সংশোধন নিয়ে ইউরোপ সবসময় আমাদের তাগাদা দেয়। এগুলো হচ্ছে, শ্রম অধিকার ও সংখ্যালঘু নির্যাতন। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না হলে কখনো শ্রম অধিকার প্রতিষ্ঠা করা যাবে না, সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধ করা যাবে না। প্রবাসী বাংলাদেশীরাও দেশের অসুস্থ রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা তারাও তুলে ধরেন।
আমাদের আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থা ইতোমধ্যে প্রমাণ করছে, ভোটারবিহীন নির্বাচন দেশের জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হয়েছে। বর্তমান সরকার অব্যাহতভাবে কৃতিত্ব নেয়ার চেষ্টা করছে উন্নয়নের কথা বলে। এ জন্য তারা সবসময় বড় প্রকল্প ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতির কথা বলছে। অর্থনীতির অন্যান্য সূচকে ব্যাপক উল্লম্ফন হওয়ার দাবি তারা করে আসছে। শেষ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ধস নামিয়ে যা করা হয়েছে সেটি ছিল একটি ফানুস। সরকারের উন্নয়নবিষয়ক সব দাবি সর্বাংশে সত্য নয়। এ অবস্থা চলতে থাকলে সামনে আরো বড় বিপর্যয় ছাড়া অন্য কিছু অপেক্ষা করবে না।
২০২৩ সালে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশে একটি সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। গণতন্ত্রের এই পরীক্ষায় জয়ী হলে আমাদের ওপর আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক সঙ্কটের যে কালো মেঘ জমেছে তা থেকে উত্তরণের আশা করা যায়। এ মুহূর্তে ইউরোপীয় পার্লামেন্টসহ বাংলাদেশে গণতন্ত্রের শুভাকাক্সক্ষী সব দেশী-বিদেশী শক্তি একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে উৎসাহিত করলে তা আমাদের জন্য ইতিবাচক। এ বিষয়ে আলোচনা আমাদের নিজেদের মধ্যেও জোরালো হোক। সরকার নিজেও গণতন্ত্রের বিকাশে এ আহ্বানে সাড়া দিতে পারে।

 


আরো সংবাদ



premium cement