২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
মাসে ৪ লাখ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ গচ্চা

এ কেমন পানি নিষ্কাশন!

-

নয়া দিগন্তের মনিরামপুর (যশোর) সংবাদদাতা জানিয়েছেন, ভবদহের পানি অপসারণ কার্যক্রমে মাসে প্রায় চার লাখ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ গচ্চাই যাচ্ছে। ২৭ বিলের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র প্রবাহ পথ ভবদহ স্লুইস গেট। যশোর ও খুলনার চারটি উপজেলার মধ্যবর্তী স্থানে এটি স্থাপিত। পলি ভরাট হয়ে নদীর তলদেশ উঁচু হয়ে যাওয়ায় এ অঞ্চলের নিষ্কাশন হচ্ছে না স্লুইস গেট দিয়ে; যে কারণে এলাকার জনসাধারণ সেচপাম্প দিয়ে বিলের পানি কমানোর নিষ্ফল চেষ্টা চালাচ্ছেন। প্রতি মাসে বিপুল বিদ্যুৎ ব্যয় করেও সেচপাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশনের কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) যৌথভাবে সেচ কার্যক্রম চালালেও এখন পাউবো একাই কাজটি করতে যাচ্ছে। এ জন্য এ বছর সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাঁচটি পাম্প কেনা হয়েছে এবং আরো ৩৫টি পাম্প, ড্রেজার মেশিন কিনতে প্রায় ৪৪ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে চাহিদা পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, ভবদহ এলাকায় ফসল ফলাতে ও পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে এ উদ্যোগ নেয়া হলেও কাজ কিছুই হচ্ছে না। উপরন্তু বিল থেকে পানি না সরায় গত বছরের তুলনায় ধানের আবাদ আরো কমেছে। আর সেচপাম্প দিয়ে ভবদহ স্লুইস গেট দিয়ে পানি নিষ্কাশনে লিকেজ হওয়ায় কাজ কিছুই হচ্ছে না।
বিল কপালিয়ায় ফসল ফলাতে ২০২০ সালে মনিরামপুর উপজেলার কপালিয়া গ্রামবাসী নিজ উদ্যোগে সেচপাম্প কার্যক্রম শুরু করে। এরপর পাউবো এ ধারণা নিয়ে বিএডিসির কাছে সেচপাম্প কার্যক্রম গ্রহণের জন্য আবেদন জানায়। বিএডিসি ভবদহ স্লুইস গেট দিয়ে পানি নিষ্কাশনে ৩০ হর্সপাওয়ারের ২০টি পাম্প সরবরাহ করে। পাউবো সূত্রে জানা গেছে, ভবদহ এলাকায় ফসল ফলাতে ও পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে এ পদক্ষেপ নেয়া হলেও তা কাজে আসেনি। সেচ কার্যক্রমের শুরুতে শুধু বিদ্যুৎ সংযোগসহ লজিস্টিক সাপোর্টে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয় হয়। এ ছাড়া প্রতি মাসে কয়েক লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল খরচসহ ব্যবস্থাপনা ব্যয় তো রয়েছেই। যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর তৎকালীন ডিজিএম জানান, পাম্প চালাতে ৭০০ কেভিএ ট্রান্সফরমার বসানো হয় সেখানে যার কনস্ট্রাকশন ব্যয় সাত লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং ট্রান্সফরমারের জন্য ব্যয় হয় প্রায় ২৫ লাখ টাকা। বছরে বিদ্যুৎ বিলে প্রায় দুই কোটি টাকা খরচ হয়েছে।
ভবদহ সেচপাম্প প্রকল্পে চলতি বছরের শুধু জুন মাসেই তিন লাখ ৫৪ হাজার ৭৭০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ ব্যয় হয়েছে। বছরে গড়ে ব্যয় হয়েছে ৪২ লাখ ৫৭ হাজার ২৪০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ। মনিরামপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জানান, ভবদহের কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে ২০২০-২১ বোরো মৌসুমে আট হাজার ৬২০ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হয়। কিন্তু ২০২১-২২ মৌসুমে ধানের আবাদ কমে দাঁড়ায় সাত হাজার ৮২৫ হেক্টরে।
অভয়নগর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জানান, ভবদহের কারণে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে ২০২০-২১ বোরো মৌসুমে ধানের আবাদ ছয় হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে এবং ২০২১-২২ মৌসুমে তা কমে গিয়ে দাঁড়ায় পাঁচ হাজার ১৪৯ হেক্টরে। আমন ধানের আবাদও কমেছে।
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক বলেন, যুগের পর যুগ ভবদহ পারের মানুষের চোখের পানি পড়লেও মূল সমস্যার সমাধান আদৌ হচ্ছে না। সেচ প্রকল্পের নামে প্রকল্প তৈরি করে পানি অপসারণের কাজ চালানো হয়েছে। লিকেজ দিয়েই আবার সেই পানি প্রবেশ করানো হচ্ছে। এতে বিদ্যুৎ ও অর্থের অপচয়। যশোর জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, সেচপাম্প দিয়ে পানি অপসারণের কার্যক্রমে দ্রুত সুফল আসবে না। আরো অপেক্ষা করতে হবে। এ জন্য পাউবোর নিজস্ব উদ্যোগে সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাঁচটি পাম্প কেনাসহ আরো ৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৫টি পাম্প কেনার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ভবদহ প্রকল্পসহ সর্বত্র অপচয় আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ কঠোর হবে বলে আমরা আশা করছি।

 


আরো সংবাদ



premium cement