১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্র

বেশির ভাগে নেই চিকিৎসক

-

সারা দেশে তৃণমূল মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রত্যেক জেলা ও উপজেলায় একটি করে স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। তবে জনবল সঙ্কটে এসব কেন্দ্রে যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। প্রকৃত চিত্র হলো- জেলা ও উপজেলাপর্যায়ে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি বাদে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে এসব প্রতিষ্ঠানে জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে তেমন কোনো অবদান নেই। স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে অবকাঠামো থাকলেও চরম জনবল সঙ্কটে তা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
দেশের ৫০ জেলার পৌরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেই চিকিৎসা কর্মকর্তা। আর পাঁচটি উপজেলায় কোনো ধরনের স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হয় না। জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (নিপোর্ট) এক গবেষণার বরাতে নয়া দিগন্তের একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেøখ করা হয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, ৩২৮টি উপজেলা-পৌরসভার মধ্যে পাঁচটিতে কোনো ধরনের স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হয় না। এসব উপজেলা-পৌরসভার কোনোটিতে মেডিক্যাল অফিসার নেই। এমনকি সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচিও বাস্তবায়ন হয় না। এসব উপজেলায় স্বাস্থ্যসেবা বাস্তবায়নে স্থায়ী কমিটির কোনো বৈঠক হয় না। যদিও নিয়ম অনুযায়ী প্রতি মাসে একবার বৈঠক হওয়ার কথা। এসব এলাকায় গরিব, খেটে খাওয়া মানুষ ও ভাসমান জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে কোনো কার্যক্রম নেই।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে কেমন স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে জনগণ- তা জানতে নিপোর্টের উদ্যোগে গবেষণা পরিচালনা করা হয়। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সিরডাপ মিলনায়তনে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। গবেষণায় তিন হাজার ৪২০ জন সেবাগ্রহীতা ও ১২৪ জন সেবাদাতার সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। সেবাদাতাদের মধ্যে ১২ সিটি করপোরেশনের মেয়র, ১৫ জেলা ও ৩০ উপজেলাভিত্তিক পৌরসভার প্রধান নির্বাহী অফিসার, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বা মেডিক্যাল অফিসারের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। তাতে দেখা যায়, ৮২ শতাংশ সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সেবা সম্বন্ধে পরিষ্কার ধারণা রয়েছে। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ সিটি করপোরেশনের নিজস্ব কোনো স্বাস্থ্য অবকাঠামো নেই। অন্য দিকে, বেশির ভাগ জেলা-পৌরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নেই। জেলা-পৌরসভার স্বাস্থ্যসেবা যেখানে দেয়া হয় সেখানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসার পর্যাপ্ত জায়গা নেই। বেশির ভাগ সেন্টারে চিকিৎসা কর্মকর্তার পদ দীর্ঘ দিন শূন্য রয়েছে। আর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে কোনো সরাসরি সংশ্লিষ্টতা নেই। অন্য দিকে, উপজেলা প্রশাসনের অর্ধেকের বেশি ইউএনওর পরিষ্কার ধারণা নেই স্থানীয় সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ সম্বন্ধে।
সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ পরিচালনায় সরকারি সহায়তা প্রয়োজন। একই সাথে প্রতিটি ওয়ার্ডে কমপক্ষে একটি করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে, যাতে তৃণমূলের মানুষজন সহজে স্বাস্থ্যসেবা পেতে পারে এসব কেন্দ্র থেকে। তবে মনে রাখা আবশ্যক, কাজের ক্ষেত্রে এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে স্বাধীনতা দিতে হবে। যাতে বেশি কার্যকর হয়।
সঙ্গত কারণে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এ কথা বলা যায়, জনগণের স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ প্রয়োজনীয় জনবল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করলে এবং এ স্বাস্থ্যসেবা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বাস্তবায়নে সহযোগিতা করলে উদ্যোগটি সফল হতে পারে। দুই মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত উদ্যোগ বর্তমান পরিস্থিতির পরিবর্তন আনতে সহায়ক হবে বলে সবার মতো আমরাও মনে করি।

 


আরো সংবাদ



premium cement