১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
জাল দলিল চক্রের অপতৎপরতা

জমি নিয়ে নাজেহাল নিরীহ মানুষ

-

জমি নিয়ে মামলা মোকদ্দমা, সংঘর্ষ-খুনোখুনি আমাদের দেশে অতি সাধারণ ঘটনা। তবে আগে জমি নিয়ে বেশির ভাগ মামলা হতো অংশীদারদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারার জন্য। কিন্তু গত দুই দশক আগে হঠাৎ করে জায়গার দাম বেড়ে যাওয়ায় সারা দেশে বিশেষ করে শহরাঞ্চলে জমি নিয়ে মামলা মোকদ্দমা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেড়ে গেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে জমি নিয়ে ভূমিদস্যুদের নতুন নতুন ফাঁদে প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী এমন অনেক চক্র গড়ে উঠেছে; যারা জাল দলিলের মাধ্যমে প্রকৃত তথ্য গোপন করে প্রতারণামূলক মামলা করছে। লক্ষণীয়, জালিয়াতচক্র নিরীহ মানুষকে এর নিশানা করেছে। হয়রানিমূলক মামলায় জমিজমার ব্যাপারে যারা অবগত এবং আইন-আদালত সম্পর্কে জানাশোনা আছে, সাময়িক হয়রানি ছাড়া তারা খুব একটা বেকায়দায় পড়েন না। কিন্তু যারা জমিজমার জটিল হিসাব-নিকাশ বোঝেন না, তাদের ফাঁদে ফেলে প্রতারকরা অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে আলাদা আলাদাভাবে গড়ে ওঠা প্রতারক চক্র; জাল দলিলের মাধ্যমে জমি নিজেদের দাবি করে আদালতে মামলা ঠুকছে তারা। বাস্তবতা হলো- মামলার শুনানির তারিখ নানাভাবে গোপন করে আদালতকে অন্ধকারে রাখে দুর্বৃত্তরা। ভূমিদস্যুরা দলিল জাল করে অতিগোপনে আদালতে দেওয়ানি মামলা করে অসত্য ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে একতরফা রায়ও বের করতে সক্ষম হচ্ছে। অনেকসময় চতুরতার আশ্রয় নিয়ে দ্রুত রায় করাতেও সক্ষম হচ্ছে। সাধারণত আদালতে মামলাজটে জমি-সংক্রান্ত মামলার রায় পাওয়া সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এ ক্ষেত্রে রায় পেতে বাদির পাঁচ-সাত বছর সময় লাগে; কিন্তু এমনো দেখা গেছে, ফন্দিফিকির করে ছয় মাসে রায় বের করছে ভূমিদস্যরা। লক্ষণীয়, ভূমিদস্যুদের সব তৎপরতা গোপনে ও একতরফাভাবে হওয়ায় জমির প্রকৃত মালিকরা অনেকসময় কিছু জানতে পারছেন না। দেখা যায়, ভূমিদস্যুরা ভূমি অফিসে মিস কেস দায়ের করলে জমির প্রকৃত মালিকরা সে বিষয়ে নোটিশ পাচ্ছেন না। ভূমিদস্যুদের যোগসাজশে দেশব্যাপী ভূমি অফিসে কর্মরত কিছু অসৎ কর্মচারী মিস কেসের বিষয়টি গোপন করে চক্রকে সহযোগিতা করে থাকে। এ্যাসিল্যান্ড অফিসের একশ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে ভূমিদস্যুরা নিজেদের নামে নামজারি ও খাজনা (মিস কেস) দেয়ার আবেদন করে থাকে।
মূলত জমি জালিয়াতচক্রের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ভূমি অফিসের একশ্রেণীর অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারী অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের জন্য অশুভ আঁতাত গড়ে তুলেছে। জালিয়াত চক্র এবং অসৎ কর্মচারীরা এর মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক বনে যাচ্ছে। আর নিরীহ মানুষজনকে জমি নিয়ে পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ। অনেকসময় প্রকৃত জমির মালিক সম্পদ হারিয়ে হচ্ছেন সর্বস্বান্ত।
অবশ্য, শুধু জাল দলিলের মাধ্যমে নয়; সারা দেশে কলকারখানা স্থাপনে যে বিপুল জায়গার দরকার হচ্ছে; তাতেও সাধারণ মানুষের জমি পেশিশক্তির মাধ্যমে দখল করছে অনেকে। কেউ যদি জমি বিক্রি করতে না চান জোর করে শিল্পমালিক পক্ষের হয়ে ওই জমি দখল করতে সহায়তা করছেন একশ্রেণীর রাজনৈতিক নেতাকর্মী। অনেকসময় ভাড়াটে মাস্তান বাহিনীও ব্যবহার করতে দেখা যায়। এ দিকে শহরাঞ্চলে বেসরকারি আবাসন গড়ে তুলতে আবাসন কোম্পানিগুলো প্রকৃত মালিকের কাছ থেকে জমি না কিনে মাটি ভরাট করছে। নামমাত্র মূল্য পরিশোধ করছে।
আমরা মনে করি, এই দুষ্টচক্রের কবল থেকে দেশের নিরীহ মানুষের সম্পদ রক্ষা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। রাষ্ট্রকে এ চক্র ভাঙতে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে সারা দেশে জমিজমা নিয়ে অদূর ভবিষ্যতে একধরনের অরাজকতার সৃষ্টি হবে। পরিণতিতে তৈরি হতে পারে ‘জোর যার মুল্লুুক তার’ সমাজব্যবস্থা।


আরো সংবাদ



premium cement