২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`
চীনকে প্রধান শত্রুজ্ঞান ন্যাটোর

ফের স্নায়ুযুদ্ধ শুরুর আলামত

-

বৈশ্বিক রাজনীতি দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। ইউক্রেনে আগ্রাসনের গতি বাড়িয়েছে রাশিয়া। প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে ইউরোপের বেশ কিছু দেশ সামরিক সক্ষমতা অর্জনের পথ ধরেছে। উত্তর মেরুর কাছাকাছি সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের মতো শান্তিকামী দেশও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। দেশ দু’টি তড়িঘড়ি সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য হয়েছে। অন্য দিকে এ অঞ্চলের যেসব বড় দেশ যুদ্ধবাজ নীতি থেকে সরে গিয়েছিল, সেগুলোও নতুন করে সামরিক সরঞ্জামে সজ্জিত হচ্ছে। ফলে অস্ত্র উৎপাদক ও বিক্রেতাদের রমরমা অবস্থা। নতুন অস্থিরতা শুধু ইউরোপে সীমাবদ্ধ নেই। এটি ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে বা পড়ছে বিশ্বব্যাপী। সম্প্রতি সামরিক জোট ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলনে রাশিয়াকে সরাসরি শত্রু হিসেবে গণ্যের পাশাপাশি চীনকে হুমকি হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এমন মনোভাব শত্রুতাই বাড়াবে।
স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে এ জোটের নেতারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাদের কামানের মুখটি কোন দিকে তাক রাখতে হবে। বৈঠকে আলোচনার প্রধান উদ্দেশ্য সদস্য দেশগুলোর নিরাপত্তা। অথচ বৈশ্বিক নেতা হিসেবে তাদের বিশ্ববাসীর নিরাপত্তা নিয়ে ভাবা উচিত। এ সম্মেলনে একটি কৌশলপত্র পেশ করা হয়। তাতে চীনকে মারাত্মক হুমকি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে সদস্য দেশগুলো একমত হয়েছে। ওই কৌশলপত্রে বলা হয়েছে- চীন পারমাণু অস্ত্রের সম্ভার বহুল পরিমাণে বাড়াচ্ছে। ন্যাটোর মতে, পরমাণু অস্ত্রসম্ভার গড়ে তুলতে একটি স্বচ্ছ নীতি থাকা দরকার। আর পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের একটি সদিচ্ছা থাকা প্রয়োজন। এর কোনোটিই চীনের নেই।
চীনের বিরুদ্ধে ন্যাটো আরো কিছু অভিযোগ তুলেছে। বেইজিং নিজের উদ্বৃত্ত অর্থ দেশে দেশে বিনিয়োগ করছে। আর্থিক সামর্থ্যকে কৌশলে অন্য দেশগুলোর ওপর প্রভাব বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। অর্থের জোরে পৃথিবীর সব জায়গায় বন্ধু খুঁজছে। পশ্চিমারা যেখানে একত্রিত হয়ে কাজ করছে; সেখানে পাল্টা ব্যবস্থা গড়ে পশ্চিমা জোটকে দুর্বল করার কাজ এগিয়ে নিচ্ছে চীন। বেইজিং বৈশ্বিক আইনের শাসনের ভিত্তিতে আঘাত করছে। ঠাণ্ডামাথায় বৈশ্বিক ব্যবস্থা দুর্বল করছে। রাশিয়ার সাথে সখ্য গড়ে তুলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রতি ঝুঁকি তৈরি করছে। চীনের বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ হচ্ছে; সাইবার হামলা, মহাকাশ ও সামুদ্রিক ক্ষেত্রে অনৈতিকভাবে আগ্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা।
ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে উত্থাপিত অভিযোগ নিয়ে চীন কিছুটা সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এ বিষয়ে ‘কথিত চীনা হুমকি নিয়ে অতিরঞ্জিত প্রচার একেবারে অনর্থক’ বলে মন্তব্য করেন। ন্যাটোর ধারণাপত্রকেও অবাস্তব আখ্যায়িত করেছেন। চীনের মতে, ন্যাটো প্রতিষ্ঠিত বিষয় নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। চীনা পররাষ্ট্র্রনীতি নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এ ধরনের আগ্রাসী মনোভাব নতুন করে স্নায়ুযুদ্ধ সৃষ্টির পাঁয়তারা বলে মনে করে বেইজিং। ইউক্রেন আগ্রাসনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে পরোক্ষভাবে ন্যাটোকে দায়ী করে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ইউরোপের পর এশিয়া ও বাকি বিশ্বে ঝামেলা করার চেষ্টা করছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ মূলত শত্রু তৈরির অপচেষ্টার শামিল।
চীনের বিরুদ্ধে ন্যাটোর উত্থাপিত আরেকটি অভিযোগ ছিল প্রদর্শিত মূল্যবোধ ধ্বংস করে দেয়া। বিষয়টি সত্য যে, বিগত ৭০ বছরে আমেরিকার নেতৃত্বে একটি বৈশ্বিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। এর কেন্দ্রে রাখা হয়েছে মানবাধিকার ও গণতন্ত্র। দুর্ভাগ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ দেশটির মিত্ররা নিজেরাই এ মূল্যবোধ সংরক্ষণ করেনি অনেক জায়গায়। এ মূল্যবোধ শুধু নিজ নিজ দেশে চর্চা করেছে। এমনকি বহু দেশের গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এ অবস্থায় এসব মূল্যবোধ ধ্বংসে চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুুল তোলার কতটা অধিকার রাখে পশ্চিমারা। তবে বাস্তবতা হলো- চীনেরও কোনো মূল্যবোধ নেই। শুধু গণহারে বিনিয়োগ করে লাভ তুলে নেয়ার মানসিকতা প্রকট। এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন বিনিয়োগ অনেক দেশে গণমানুষের জন্য বিপদ ডেকে আনছে।
আমরা মনে করি, চীনকে আগাম ‘হুমকি’ হিসেবে ন্যাটো জোটের ঘোষণা করা বাকি বিশ্বের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না। এখন দরকার বৈশ্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠা। সঙ্গত কারণে কাউকে আগাম শত্রু ঘোষণা না করে বৈশ্বিক শান্তি অর্জনে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে পারস্পরিক সমঝোতার পরিবেশ তৈরি করাই সবার জন্য মঙ্গল।

 


আরো সংবাদ



premium cement
ঢাবির কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটে প্রথম হয়েছেন যারা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত ইন্টার্ন চিকিৎসকদের নিজ দেশে ৫ বছর পর ফিরল দিপক চট্টগ্রামে ৬ কিশোর গ্যাংয়ের ৩৩ সদস্য আটক শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের জন্য সংগঠন মজবুত করতে হবে : শামসুল ইসলাম ইউরো ২০২৪’কে সামনে রেখে দল নির্বাচনে বিপাকে সাউথগেট ভারতীয় পণ্য বর্জনকে যে কারণে ন্যায়সঙ্গত বললেন রিজভী মাকে ভরণ-পোষণ না দেয়ায় শিক্ষক ছেলে গ্রেফতার প্রথম বাংলাদেশী আম্পায়ার হিসেবে আইসিসির এলিট প্যানেলে সৈকত ঢাবির সব ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ নিরাপত্তা-বিষয়ক আলোচনা করতে উত্তর কোরিয়ায় রুশ গোয়েন্দা প্রধান

সকল