২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায় উন্নয়ন সহযোগীরা

প্রত্যাশা, সময় থাকতে সাড়া দেবে সরকার

-

বাংলাদেশে নির্বাচনে ব্যালট বাক্স ছিনতাই, কেন্দ্র দখল, জাল ভোট প্রদান- এগুলো এখন আর আলোচনার বিষয় নয়। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে এলাকা ছাড়া করা, নির্বাচনে প্রার্থী হতে বাধা দেয়া এবং জোর করে প্রার্থিতা প্রত্যাহার- এগুলোও মামুলি ঘটনা হয়ে পড়েছে। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের আগের রাতেই ভোট গ্রহণ সম্পন্ন করে ফেলা হয়। এ ছাড়া ভোটের ক্ষেত্রে দেশে সৃষ্টি হয়েছে আরো কিছু নজির। এ দেশের নাগরিকরা ভোটাধিকারবঞ্চিত- গণতান্ত্রিক দেশগুলোও তা সম্যক অবগত আছে। তারা নানাভাবে উৎসাহিত করছে বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক ভোটাধিকার ব্যবস্থায় ফেরাতে। তারই অংশ হিসেবে সর্বশেষ বৈঠক করেছে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাথে।
বর্তমান সরকারের অধীনে পরিচালিত বিগত দু’টি জাতীয় সাধারণ নির্বাচন নিয়ে বন্ধু গণতান্ত্রিক দেশগুলোর আপত্তিও আমলে নেয়া হয়নি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত একতরফা সংসদ নির্বাচনের পর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল- এটি নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার জন্য করা হয়েছে। সময়মতো আরেকটি নির্বাচনের আয়োজন করা হবে। সরকার সেই প্রতিশ্রুতি শুধু ভুলে যায়নি, পরবর্তী সময়ে সবাইকে অবাক করে দিয়ে অস্বীকারও করে। অবস্থা এমন-স্থানীয় সরকার নির্বাচন আর প্রকৃত অবস্থায় নেই। কার্যত ক্ষমতাসীনরা যাকে বাছাই করছেন তাকেই স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধি বানাচ্ছেন। নির্বাচন কমিশনের অধীনে শুধু নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রদর্শনের জন্য থাকছে। মূলত ইসি ঠুঁটোজগন্নাথ হয়ে পড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় বাংলাদেশে গণতন্ত্র বলতে আর কিছু থাকবে না। আমাদের বন্ধুপ্রতিম গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সেই বোধোদয় সম্ভবত হয়েছে। সে কারণে আগামী নির্বাচনের দেড় বছর বাকি থাকতে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছেন তারা।
১৪টি দেশের কূটনীতিকদের জোট গত রোববার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কার্যালয়ে বৈঠক করে। বৈঠকের পর জোটের মুখপাত্র সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্র্রদূত নাথালি চুয়ার্ড আহ্বান জানিয়েছেন, বাংলাদেশে একটি অংগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চান তারা। সবারই জানা, বিরোধীদের সাথে কোনো ধরনের সমন্বয় না করে বর্তমান সরকার নতুন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিয়েছে। বিরোধীরা এ কমিশনের সাথে কথা বলার আগ্রহ পর্যন্ত দেখায়নি এখনো। বর্তমান ইসি-ও বিগত নতজানু নির্বাচন কমিশনের মতো সরকারের অধীনে থেকে একই নীতি অবলম্বন করছে বলে মনে হয়। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জনগণের আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারেনি। ওই নির্বাচনে যেসব বিতর্ক উঠেছে কমিশন সেসব বিষয়ে কোনো তদন্ত করেনি, সঠিক জবাবও দিতে পারেনি। এ অবস্থায় গণতান্ত্রিক বিশ্ব উদ্বিগ্ন, আসন্ন সাধারণ নির্বাচনও আগেরগুলোর মতো হতে পারে। এবার অরগানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ওইসিডি) ব্যানারে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডা, ডেনমার্ক, ইতালি, ফ্রান্স, নরওয়ে, তুরস্ক ও জাপানের মতো দেশগুলোর কূটনীতিকরা দেনদরবার করছেন। এসব দেশ আমাদের প্রধান উন্নয়ন সহযোগী। প্রধান রফতানি বাজারও দেশগুলো।
ইইউর হাইকমিশনার চার্লস হোয়াইটলের নেতৃত্বে বৈঠক থেকে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানানো হয়। গণতান্ত্রিক ধারা আরো শাণিত ও নির্বাচন সহিংসতামুক্ত করার কথা বলেন তারা। তাদের বক্তব্যে মূলত নাগরিকের ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার বার্তাই রয়েছে।
ভোটব্যবস্থা বিপর্যয়ে বাংলাদেশের মানুষ হতাশ। এখন তারা আর ভোটকেন্দ্রে হাজির হওয়ার আগ্রহ পাচ্ছেন না। এ দেশে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় এর আগে বড় বড় আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে সেই পথ অনেকটা রুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। বৈধ উপায়ে রাজনৈতিক প্রতিবাদ-বিক্ষোভ আয়োজনের সুযোগ একেবারে সীমিত। এ অবস্থায় গণতান্ত্রিক দেশগুলো সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে আমাদের দেশের মানুষ সেটি ইতিবাচকভাবে দেখবে। দেশে-বিদেশে সবার এখন একটাই চাওয়া- বাংলাদেশে সুষ্ঠু ভোটাধিকারের পুনঃপ্রবর্তন। আগামী সাধারণ নির্বাচনের আগেই সময়মতো সরকার উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবে, যাতে শেষ মুহূর্তে বলতে না হয় নিয়ম রক্ষার নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা। আমরা আশা করব, সময় থাকতে সরকারের বোধোদয় হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement