২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
লবণ আমদানির সিদ্ধান্ত

চাষিদের স্বার্থও দেখুন

-

লবণ অতিপ্রয়োজনীয় একটি নিত্যপণ্য। রান্নায় অপরিহার্য। আবার শিল্পকারখানায় লবণের বহুবিধ ব্যবহার হয়। বিশেষ করে ট্যানারি শিল্পে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে কাঁচামাল হিসেবে লবণ ব্যবহৃত হয়। ফলে দেশে লবণ উৎপাদনে ঘাটতি হলে জোগান ঠিক রাখতে আমদানি করতে হয়। তাই কোরবানির চামড়া সংরক্ষণে বিপুল পরিমাণ লাগবে বিধায় এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় লবণ আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সরকারি ভাষ্য, চাহিদা ও জোগানের দিকে খেয়াল রেখে লবণ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আমদানি করা হলেও লবণের পাইকারি বাজার স্থিতিশীল থাকবে।
তবে, চাষিদের দাবি- এখনো মাঠে প্রচুর লবণ মজুদ রয়েছে। সঙ্গত কারণে আমদানির সিদ্ধান্তে তারা লবণের ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত। কারণ মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজিতে মৌসুমে উৎপাদনের শুরুতে লবণের মূল্য নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন তারা। ওই সময় লবণের মূল্য নেমে আসে ধোলাই খরচসহ ২০০-২১০ টাকায়, যেখানে প্রতি মণ লবণ উৎপাদনে খরচ হয় গড়ে ২৪৭-২৫০ টাকা। তবে আশার কথা, গত শুক্রবার মাঠপর্যায়ে প্রতি মণ লবণ বিক্রি হলো ৩২০ টাকা করে।
নয়া দিগন্তে প্রকাশিত পটিয়া-চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বৈরী আবহাওয়ায় প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টন উৎপাদন ঘাটতি নিয়ে চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদন শেষ হয়। গত শুক্রবার পর্যন্ত মিল ও মাঠেসহ প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টন লবণ মজুদ রয়েছে। এ দিকে লবণের মজুদ কমে আসছে; অন্য দিকে কোরবানির চামড়া সংরক্ষণে বিপুল পরিমাণ লবণের প্রয়োজন দেখা দেয়ায় পণ্যটির পাইকারি বাজার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী। সে কারণে ঘাটতি মোকাবেলায় দেড় লাখ টন লবণ আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
পরিসংখ্যান বলছে, চলতি মৌসুমে দেশে লবণ উৎপাদন ও চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৩ লাখ ৩৫ হাজার টন। ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত মৌসুম শেষে সর্বোচ্চ উৎপাদন হয় ১৮ লাখ ৩২ হাজার টন। বিসিক লবণ প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, এবার আবহাওয়া শেষ পর্যন্ত অনুকূলে না থাকায় কিছুটা ঘাটতি নিয়ে মৌসুম শেষ হয়। চলতি মৌসুমে ১৮ লাখ ৩২ হাজার টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। গত শুক্রবার পর্যন্ত মাঠে উৎপাদিত লবণ রয়েছে প্রায় চার লাখ টন ও লবণ মিলমালিকদের কাছে রয়েছে আরো দেড় লাখ টন। আর ২০২০-২১ মৌসুমে ২২ লাখ ১৭ হাজার টন লবণ চাহিদার বিপরীতে ৫৪ হাজার ৬৫৪ একর জমিতে ১৬ লাখ ৫০ হাজার টন উৎপাদন হয়। ওই মৌসুমেও লবণ উৎপাদন ঘাটতি নিয়ে শেষ হয়েছিল।
তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, এবার লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী লবণ উৎপাদন না হলেও এখনো মাঠে পর্যাপ্ত লবণ মজুদ আছে। তাই এ মুহূর্তে লবণ আমদানি করলেও চাষিদের স্বার্থের দিকটি অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, যাতে তারা লবণের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত না হন।
আমরা মনে করি, চাষিদের স্বার্থ স্থায়ীভাবে সংরক্ষণে প্রয়োজন মৌসুমের শুরুতেই দেশে উৎপাদিত লবণের মূল্য সরকারিভাবে নির্ধারণ করে দেয়া। কারণ মূল্য নির্ধারণ না থাকায় সিন্ডিকেট করে মাঠ থেকে পাইকারি ব্যবসায়ী বা মধ্যস্বত্বভোগীরা লবণ কিনে মিলমালিকদের কাছে বিক্রি করছেন। তারা অতিরিক্ত লাভের জন্য লবণের প্রকৃত মূল্য নিয়ে কারসাজি করে থাকেন। লক্ষণীয় হলো- মধ্যস্বত্বভোগীরা লবণ ক্রয়-বিক্রয় করে দু’ভাবে লাভবান হচ্ছেন; কিন্তু চাষিরা অনেকসময় প্রকৃত মূল্য না পেয়ে প্রতারিত হচ্ছেন। সে কারণে লবণচাষিদের স্বার্থ সংরক্ষণে মাঠে উৎপাদিত লবণের মূল্য সরকারিভাবে নির্ধারণ করতে তাদের দাবি যুক্তিসঙ্গত বলেই আমরা মনে করি।

 

 

 

 


আরো সংবাদ



premium cement