২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
বন্যায় লাখো মানুষের নথিপত্র খোয়া

বিনামূল্যে সরবরাহের ব্যবস্থা নিন

-

সিলেট বিভাগে আকস্মিক সর্বনাশা বন্যা নিমেষে নিঃস্ব করেছে বিপুলসংখ্যক মানুষকে। বন্যার পানিদুর্গতদের বাড়িঘর ভাসিয়ে নিয়েছে। ভেসে গেছে ধানের গোলা। দুই সপ্তাহ পানিবন্দী থাকার পর অনেকে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। কিন্তু বাড়ি ফিরে তাদের অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ঘরে খুঁজে পাচ্ছেন না। বাড়িতে জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, বাড়ির দলিল, শিক্ষার্থীদের বইপত্রসহ মূল্যবান নথি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে, বানের পানিতে ভেসে গেছে।
সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যায় লাখ লাখ মানুষের স্বর্ণ, টাকা, জাতীয় পরিচয়পত্র, বাড়ির দলিল ও পাসপোর্ট ভেসে গেছে। ভেসে গেছে কয়েক লাখ শিক্ষার্থীর বই। জাতীয় পরিচয়পত্র নষ্ট হওয়ায় অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ কাজ সারতে পারছেন না। যাদের পাসপোর্ট পানিতে নষ্ট বা ভেসে গেছে তারা দুশ্চিন্তায় সময় পার করছেন। অনেকে সদ্য বিদেশ থেকে ছুটিতে দেশে এসেছেন। পাসপোর্ট খোয়া যাওয়ায় ফের বিদেশ কিভাবে যাবেন, তা এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। পাসপোর্ট ছাড়া বিদেশে কর্মক্ষেত্রে ফেরত যাওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। অনেকের ভিসাও খোয়া গেছে। এখন নতুন করে ঠিকঠাক করতে হবে, যা সময়সাপেক্ষ।
কোনো জটিলতা ছাড়াই বইপুস্তক বাজার থেকে কেনা যাবে সহজে। এ জন্য অর্থ ব্যয় করতে হবে। কিন্তু পাসপোর্ট ও দলিলপত্র নতুনভাবে বের করতে হলে ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হবে। বন্যায় যারা মূল্যবান কাগজপত্র খুইয়েছেন, তাদের মধ্যে অনেকে লেখাপড়া জানেন না। নতুন করে এসব সংগ্রহ করতে তাদের ভোগান্তির সীমা-পরিসীমা থাকবে না। জমিজমার দলিল হারিয়ে অনেকে প্রতিপক্ষের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। জমির বিরোধে প্রতিপক্ষরা এমন সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। এ অবস্থায় অনেকে এখন কোথায় যাবেন কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। এ নিয়ে তাদের দিশেহারা অবস্থা।
মূল্যবান কাগজপত্র খোয়ানো ভুক্তভোগীরা নতুনভাবে এসব পেতে আবেদন করলে তাদের দ্রুত সেবা দিতে হবে। যতটা পারা যায় এ ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক জটিলতামুক্ত সেবা দিতে হবে। অফিসগুলোতে নির্দেশনা থাকা উচিত যাতে এ কাজে সাহায্য চাইতে আসা বানভাসিদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়। পারলে দিনে দিনে কাজ করে দিতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ব্যক্তিদের আবেদন ফি মওকুফ করে বিনা পয়সায় সরবরাহ করলে ভালো হবে। এ ক্ষেত্রে কেউ যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হন, সেদিকে সরকারের তীক্ষè নজর দিতে হবে। আর বন্যার পানিতে যেসব শিক্ষার্থীর বই নষ্ট হয়ে গেছে, তাদের তথ্য বিদ্যালয় প্রধানদের মাধ্যমে দ্রুত সংগ্রহ করতে হবে। সেই তালিকা অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবই সরবরাহ করতে হবে। উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে বন্যাদুর্গত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের তথ্য অল্প সময়ের মধ্যে সংগ্রহ করা সম্ভব। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের এ ব্যাপারে মাঠপর্যায়ে তৎপর করাতে হবে। তাদের তৈরি করা তালিকা অনুযায়ী অচিরেই শিক্ষার্থীদের হাতে আবার বই পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে।
সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী যাতে বানভাসি মানুষের হারানো নথি উদ্ধারে সাহায্যে এগিয়ে আসে সে ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে শক্ত নির্দেশনা দেয়া হোক। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্য থেকে যে বা যারা এ নিয়ে অর্থ খরচ করতে অপারগ তাদেরও বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে তা সরবরাহের ব্যবস্থা করা হোক। আমরা আশা করব সরকার বানভাসিদের এ সংক্রান্ত দুর্ভোগ লাঘবে আন্তরিক হয়ে তাদের পাশে দাঁড়াবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement