২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম বিশৃঙ্খলা

জ্ঞান অর্জনের চেয়ে ব্যবসা প্রাধান্য পাচ্ছে

-

সর্বোচ্চ বিদ্যা সাধনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টি করা হয়েছে। জ্ঞানী-গুণীরা জ্ঞানচর্চা করবেন এখানে। তাদের অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা নতুন প্রজন্মের কাছে সঞ্চার করবেন। আমরা এ সংস্কৃতি আয়ত্ত করতে পারিনি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জ্ঞানচর্চার ধারা আমরা ইতোমধ্যে হারিয়ে ফেলেছি। এখানে উচ্চ শিক্ষাকে সম্পূর্ণ ব্যবসায়ে পরিণত করা হয়েছে। আর পাড়ামহল্লার দোকানের মতো সারা দেশে এর অনুমতি দেয়া হচ্ছে। সরকার নিজ উদ্যোগেও সারা দেশে গণহারে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছে। সেগুলোতে উচ্চ জ্ঞানচর্চার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেনি। এরপর দেখা গেল বেসরকারি খাতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জোয়ার। এখন পর্যন্ত শতাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে। শতাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব পাইপলাইনে রয়েছে।
আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিগত কয়েক বছরে বিপুল অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে গেছে। উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তদারককারী প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এসব দেখভাল করতে গিয়ে তাদের শক্তি ক্ষয় করছে। বড় বড় দুর্নীতি তদন্ত করে এখনো সঠিক ব্যবস্থা নিতে পারেনি তারা। এর মধ্যেই গড়ে উঠছে ব্যাঙের ছাতার মতো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। তদবিরের চাপে তারা এগুলোর কেবল অনুমতি দিয়ে যাচ্ছে। এগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম ঠিকভাবে চলছে কি না সে ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারছে না। দেশে কার্যক্রম চালাচ্ছে ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এগুলোর ৩৩টির কোনো বৈধ ভিসি নেই। প্রোভিসি নেই ৭৬টির আর কোষাধ্যক্ষ নেই ৪৫টির। প্রশ্ন হচ্ছে, এগুলোর অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম তাহলে কিভাবে চলছে?
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনে রাজনৈতিক প্রভাব সর্বোচ্চ মাত্রায় কার্যকর হচ্ছে। একটি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুমোদনের জন্য পর্যাপ্ত অবকাঠামো, মানসম্পন্ন শিক্ষক- এগুলোর চেয়েও, কে সেটির উদ্যোক্তা সেটিই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। ক্ষমতাসীন সরকারের শীর্ষ কর্তাব্যক্তি ও তাদের আত্মীয়দের নামে বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পেয়েছে। তাদের নামে আরো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের জন্য পাইপলাইনে রয়েছে। খবরে প্রকাশ, কিছু অসাধু ব্যক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে স্রেফ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মতো অর্থ কামানোর অসৎ উদ্দেশ্যে এমনটি করছে। তারা এমন ব্যক্তির নামে এগুলোর নামকরণ করছে, যাতে কর্তৃপক্ষ অনুমোদন দিয়ে দেয়।


একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন ট্রাস্টি অর্থ আত্মসাৎ মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া ১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ধরনের আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নবপ্রতিষ্ঠিত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দেখা গেছে, দলীয়করণ ও আত্মীয়করণের এক মহোৎসব। এ নিয়ে কেলেঙ্কারির শেষ নেই। অন্য দিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যেও প্রায় একই প্রবণতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি নিয়ে উদ্যোক্তারা সেটিকে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করছেন। নিয়ম অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্যাপ্ত অবকাঠামো থাকার কথা। এর সাথে থাকবেন নির্ধারিতসংখ্যক ফ্যাকাল্টি মেম্বার। সংবাদমাধ্যমে প্রায়ই খবর বের হয়, কয়েকটি বাসা ভাড়া নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেয়া হচ্ছে। অন্য দিকে পর্যাপ্তসংখ্যক মানসম্পন্ন শিক্ষক থাকার বিষয়টি আরো উপেক্ষিত হচ্ছে। সে জন্য রাজধানীর অলিগলি ও জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, আরো হচ্ছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০’ রয়েছে। প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয় এ আইন অনুযায়ী চলতে বাধ্য। জানা যাচ্ছে, মালিকদের রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে ইউজিসি যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারে না। তার ওপর অনিয়ম দুর্নীতি এতটাই বেড়েছে, সেগুলো সামাল দেয়ার ক্ষমতা আমাদের ইউজিসির নেই। আমরা অল্প কিছু ব্যবস্থা যেটুকু দেখতে পাই সেগুলোর কর্তৃপক্ষের রাজনৈতিক কোনো প্রভাব নেই। ব্যবস্থা যা নেয়া তা মুখ দেখে দেয়া হচ্ছে। দুর্ভাগ্যের ব্যাপার হচ্ছে, আমাদের উচ্চ শিক্ষাব্যবস্থাকে অর্থ আয়ের খাত হিসেবে গ্রহণ করেছি। একে আমরা উচ্চতর জ্ঞানচর্চার হাতিয়ার হিসেবে দেখিনি। এর নেতিবাচক ফলাফল আমরা ভবিষ্যতে ভোগ করতে বাধ্য।


আরো সংবাদ



premium cement