২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
দেশের অর্থনীতি চাপের মুখে

বিলাসদ্রব্য আমদানি বন্ধ হোক

-

দেশের অর্থনীতিতে আমদানি ব্যয় যতটা বেড়েছে রফতানি আয় সেভাবে বাড়েনি। আবার প্রবাসী আয়ে নেমেছে ধস। বিশ্ববাজারে জ্বালানিসহ অনেক জিনিসের দাম ও পরিবহন ব্যয় বেড়েছে। আমাদের আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৪৪ শতাংশ। এর পুরোটাই যে অত্যাবশ্যকীয় এমন নয়। অনেক বিলাসদ্রব্য আসছে। নানা মেগা প্রকল্পে অমিতব্যয়িতার উদাহরণও বহু। সবমিলিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে বড় রকমের টান পড়েছে। বাড়ছে ডলারের দাম। এখন ডলার বাঁচানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ১৩৫টি পণ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর। সংস্থাটি বলছে, ‘কোভিড-১৯ পরবর্তী অর্থনীতি পুনর্গঠন, বিলাসবহুল পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা ও আমদানি হ্রাসকরণ এবং বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের লক্ষ্যে’ এই পদক্ষেপ।
পরিস্থিতি সামাল দিতে কৃচ্ছ্রতার কর্মসূচিও নেয়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণে এসেছে নিষেধাজ্ঞা। দামি গাড়ি ও ইলেকট্রনিক পণ্য আমদানিতে ৭০ শতাংশ নগদ জমার বাধ্যবাধকতা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এনবিআরের শুল্ক বাড়ানো লক্ষ্য পূরণে কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। কারণ তালিকার অনেক পণ্যের দাম বাড়লে ভুক্তভোগী হবে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণী। ধনীদের গায়ে সামান্য আঁচড়ও পড়বে না। তালিকায় আছে- শুকনা, তাজা কিংবা হিমায়িত আপেল, নাশপাতি, আঙুর, কলা, আনারস, পেয়ারা, আম, তরমুজ, পেঁপে, বাদাম, কমলালেবু ও লেবুজাতীয় ফল, আলুবোখারা ইত্যাদি। এ ছাড়া প্রসাধনসামগ্রীর মধ্যে আছে সুগন্ধি (পারফিউম), সৌন্দর্য বর্ধনের নানা উপাদান, মেনিকিউর-পেডিকিউরের প্রসাধনী, হেয়ার স্টাইলিংয়ের প্রসাধনী, দাঁতের যতœ নেয়ার পেস্ট ও পাউডার এবং সেভ করার প্রসাধনী। এসব পণ্য যে ধনীরা ব্যবহার করেন তারা শুল্ক শতভাগ বাড়ালেও কিনতে পারবেন; কিন্তু ফলমূল মধ্যবিত্তের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাবে। খেয়াল করলে দেখা যাবে, সত্যিকারের বিলাসদ্রব্য- দামি গাড়ি, এসি, ফ্রিজ, টিভি, দামি মোবাইল ফোনসেট, হাজারও অপ্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিক পণ্য কিন্তু তালিকায় নেই। অনেকেই এটিকে বৈষম্যমূলক বলে মনে করছেন।
বিষয়টি ভালো করে বোঝা যাবে একটি দৃষ্টান্ত দিলে। পাকিস্তানের অর্থনীতিও এখন দুর্দশাগ্রস্ত। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে বিপুলভাবে। রুপির দামে নেমেছে ভয়ানক ধস। চলতি মাসেই রিজার্ভ বাঁচানোর পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটি। কিন্তু পদক্ষেপ সুনির্দিষ্ট ও বৈষম্যহীন। পাকিস্তান শুধু বিলাসপণ্য আমানি নিরুৎসাহিত করার উদ্যোগ নেয়নি; বরং ‘বিলাসদ্রব্য’ হিসেবে ‘অপরিহার্য নয়’ বলে বিবেচনা করেছে এমন ৩৮টি পণ্যের আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে। ধনীদের জন্যও কোনো ছাড় দেয়নি। পাকিস্তানের আমদানিনিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় আছে- মোটর গাড়ি, মোবাইল ফোন, ভারী যন্ত্রপাতি, ফল এবং শুকনো ফল (আফগানিস্তান ছাড়া), ক্রোকারিজ, ব্যক্তিগত অস্ত্র ও গোলাবারুদ, জুতা, ঝাড়বাতি, হেডফোন ও লাউডস্পিকার, সস, দরজা এবং জানালার ফ্রেম, ভ্রমণ ব্যাগ ও স্যুটকেস, প্রসাধনসামগ্রী, মাছ ও হিমায়িত মাছ, কার্পেট (আফগানিস্তান ছাড়া), সংরক্ষিত ফল, টিস্যু পেপার, আসবাবপত্র, শ্যাম্পু, মিষ্টান্ন, বিলাসবহুল গদি এবং স্লিপিং ব্যাগ, জ্যাম এবং জেলি, কর্নফ্লেক্স, হিটার, ব্লোয়ার, সানগ্লাস, শেভিং পণ্য, রান্নাঘরের জিনিসপত্র, হিমায়িত গোশত, চকোলেট, আইসক্রিম, সিগারেট, জুস, পাস্তা, চামড়ার বিলাসবহুল পোশাক, বাদ্যযন্ত্র এবং হেয়ার ড্রায়ারের মতো সেলুন আইটেম।
আমদানি ‘নিরুৎসাহিত করা’ এবং ‘বন্ধ করা’র মধ্যে যে পার্থক্য, দুই দেশের পদক্ষেপের ফলেও সেই পার্থক্য দেখা দেবে সন্দেহ নেই। আমরা মনে করি, বাংলাদেশেও অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি আপাতত বন্ধ করাই ভালো।

 


আরো সংবাদ



premium cement