২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি

বঞ্চনার শিকার মেধাবীরা

-

এতদিন দেশে উচ্চশিক্ষায় ভর্তিসহ নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে অবৈধভাবে বিপুল অর্থ উপার্জনে মরিয়া ছিল প্রতারক চক্র। এবার নিয়োগ পরীক্ষায় ডিজিটাল জালিয়াতির আশ্রয় নেয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। সঙ্ঘবদ্ধ একটি চক্র সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগ পরীক্ষায় চাকরিপ্রার্থীদের উত্তীর্ণের নিশ্চয়তা দিয়ে শর্তসাপেক্ষে কোটি কোটি টাকা অবৈধ পথে আয় করেছে। এ চক্রের সাথে মেধাবী একদল শিক্ষার্থীও জড়িত বলে জানা গেছে।
চক্রটি প্রথমে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি নিয়োগ পরীক্ষা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। পরে ওই নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার স্থান ও পরীক্ষার গার্ড সম্পর্কে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করত। চক্রের অন্য সদস্যরা দেশের নানা প্রান্তের চাকরিপ্রত্যাশীদের খুঁজে ১০ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ পরীক্ষায় পাস ও চাকরি পাইয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখায়। গোয়েন্দাদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, পরীক্ষার নির্ধারিত দিনে চুক্তিবদ্ধ পরীক্ষার্থীদের বাহুতে বিশেষ কায়দায় মাস্টার কার্ড-সদৃশ ইলেকট্রনিক ডিভাইস স্থাপন করা হতো। এরপর কানে লাগিয়ে দিত অতিক্ষুদ্র ইয়ারপিন, যার মাধ্যমে পরীক্ষার্থী শুধু কল রিসিভ করতে পারে। পরীক্ষার্থী কেন্দ্রে ঢোকার পর বাইরে থেকে ডিভাইসে ফোন করা হতো। পরীক্ষার্থী লুকিয়ে সেই কল রিসিভ করে প্রশ্ন জানিয়ে দেয় বাইরে থাকা চক্রের সদস্যদের। এরপর বাইরে থেকে ওই প্রশ্নের উত্তর দ্রুত বের করে ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের সরবরাহ করা হতো। এভাবে অনেককে চাকরি পাইয়ে দিয়েছে প্রতারক চক্রটি।
নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২০ সাল থেকে প্রযুক্তিগত সুবিধা কাজে লাগিয়ে নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি শুরু করে চক্রটি। প্রতারক চক্রটি যে ধরনের ডিভাইস ব্যবহার করত; সাধারণত এ ধরনের ডিভাইস আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা ব্যবহার করেন। তাদেরও এসব কিনতে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। প্রতারণায় ব্যবহার করা ডিভাইস ভারত থেকে আনা বলে জানা গেছে। ডিভাইসটির একটি অংশ ইয়ারপিন, যা কানে দেয়া হয়। অটোকল রিসিভ হওয়া সিম লাগানো অপর অংশটি শরীরের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ কায়দায় লুকিয়ে রেখে পরীক্ষার হলে পাঠানো হতো। পরীক্ষার্থীরা প্রশ্ন বাইরে পাঠালে চক্রটি প্রশ্নপত্রের উত্তর দিতে আগে থেকেই মেধাবী শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে একটি দল প্রস্তুত রাখত চুক্তিবদ্ধ পরীক্ষার্থীদের উত্তর বলে দেয়ার জন্য।
গত ২২ এপ্রিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ১৬ জনকে ডিভাইসে উত্তর সরবরাহ করে চক্রটি। গত শুক্রবার প্রাথমিকের নিয়োগ পরীক্ষায়ও ওই চক্রের সাথে এক ডজন ডিভাইস সরবরাহের চুক্তি হয়। কিন্তু বুধবার রাতে ঢাকা ও এর আশপাশে অভিযান চালিয়ে ওই চক্রের চারজনকে গ্রেফতার করে র্যাব-২। তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু ডিভাইস ও বিভিন্ন আলামত জব্দ করা হয়েছে।
দেশে কর্মসংস্থানের সঙ্কট ও বেকার সমস্যা প্রকট হওয়ায় শিক্ষিত তরুণরা চাকরি পেতে মরিয়া। তাদের এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে থাকে নানা ধরনের প্রতারক চক্র। ডিজিটাল জালিয়াত চক্রটিও চাকরিপ্রার্থীদের এমন দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অবৈধভাবে কামিয়েছে কোটি কোটি টাকা।
সবার মতো আমরাও মনে করি, দেশে এমনিতেই মেধাবীরা নানাভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন। তারা যোগ্যতা অনুসারে চাকরি পাচ্ছেন না। এমন পরিস্থিতিতে প্রতারণা করে যদি অযোগ্যরা চাকরি বাগিয়ে নেয় তা হলে মেধাবীদের বঞ্চনা আরো বাড়বে বৈ কমবে না। সঙ্গত কারণে প্রযুক্তির মাধ্যমসহ সব ধরনের প্রতারণা করে অযোগ্যরা যাতে চাকরি বাগিয়ে নিতে না পারে, সে জন্য তাদের মদদদাতাসহ পয়সার বিনিময়ে সহযোগিতাকারীদের কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। তা না হলে দেশে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে গতিশীল প্রশাসন গড়ে উঠবে না। এতে আখেরে আমাদের বড় ধরনের জাতীয় ক্ষতির শিকার হতে হবে। তাই সব ধরনের প্রতারণার জাল ছিন্ন করতে তীক্ষè গোয়েন্দা নজরদারি দরকার, যাতে সব প্রতারকই গোয়েন্দা কর্মজালে ধরাশায়ী হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement