২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
মাঙ্কিপক্স, বিশ্বে নতুন আতঙ্ক

দরকার সতর্কতা ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা

-

করোনাভাইরাসের তাণ্ডব পুরোপুরি শেষ না হতেই আরেকটি ভাইরাসজনিত রোগ মাঙ্কিপক্স বিশ্বে মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে দেখা দিতে শুরু করেছে। খুব যে দ্রুত সংক্রমিত হচ্ছে এমন নয়। তবে ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে অল্প সময়েই। এটি নতুন করে সংক্রমিত হতে শুরু করেছে দিন দশেক আগে। কিন্তু বিশ্বের ১২টি দেশে ৮০ জনের মতো রোগী এরই মধ্যে শনাক্ত হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য এবং বিশ্ব গণমাধ্যম সূত্রে যতটুকু জানা যাচ্ছে, তাতে এটি নতুন কোনো রোগ নয়। এর ভাইরাস বেশ আগে থেকেই পৃথিবীতে আছে এবং এর চিকিৎসাও জানা।
বানর, ইঁদুর, কাঠবিড়ালি এবং এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে। রোগীর পাশে থাকা ব্যক্তির মধ্যে সহজেই ছড়াতে পারে এই ভাইরাস। শ্বাসনালি, ক্ষতস্থান, নাক, মুখ কিংবা চোখের মাধ্যমে এটি ঢুকতে পারে সুস্থ ব্যক্তির দেহে। এমনকি আক্রান্তের ব্যবহৃত পোশাক থেকেও ছড়ায় সংক্রমণ।
মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হলে যেসব প্রাথমিক উপসর্গ দেখা দিতে পারে সেগুলো হলো- জ্বর, মাথাব্যথা, পিঠ ও গায়ে ব্যথা। হতে পারে কাঁপুনি, রোগী ক্লান্তি বোধ করতে পারেন।
পাশাপাশি দেহের বিভিন্ন লসিকাগ্রন্থি ফুলে ওঠে। সেই সাথে মুখে ছোট ছোট ক্ষতচিহ্ন বা ফুসকুড়ি দেখা দিতে থাকে। ক্রমেই তা পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, পশ্চিম বা মধ্য আফ্রিকায় গেছেন এবং অবস্থান করেছেন এমন ব্যক্তিরাই আগে এই রোগে সংক্রমিত হতেন। এবার তার ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। আফ্রিকায় না গিয়েও কেউ কেউ আক্রান্ত হয়েছেন। এর সাথে আগে যৌনতার কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। এবার সমকামী বা উভকামী লোকদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বেশি।
বাংলাদেশে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার কোনো ঘটনা নেই। তবে সরকার আগে থেকেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ এরই মধ্যে অতিরিক্ত সতর্কতার অংশ হিসেবে বিমানবন্দর, স্থলবন্দরে বাড়তি সতর্কতা জারি করেছে। যেসব রোগীর দেহে ফুসকুড়ি দেখা যায় এবং এই রোগ শনাক্ত হয়েছে এমন দেশে যারা সম্প্রতি সফর করেছেন অথবা এমন কোনো ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছেন, যার দেহে একই রকম ফুসকুড়ি দেখা দিয়েছে বা মাঙ্কিপক্স রোগী হিসেবে নিশ্চিত অথবা সন্দেহ করা হচ্ছে তাদেরকে সন্দেহজনক রোগীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। এদের হাসপাতালে আইসোলেশনের ব্যবস্থা করা এবং এ বিষয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) তথ্য জানাতে বলা হয়েছে।
কোভিড-১৯ পরবর্তী স্বাভাবিক অবস্থায় নানা কারণে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছেন বাংলাদেশীরা। তারা মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকবেন। ঝুঁকির তালিকায় রয়েছে বয়স্ক এবং শিশুরাও।
বিশেষজ্ঞরা জনগণকে এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন। তারা সরকারি পর্যায়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়ার ওপরও গুরুত্ব দিচ্ছেন। এ বিষয়ে আগেভাগে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, স্থলবন্দরের মেডিক্যাল টিম এবং উপজেলা স্বাস্থ্য অফিসারদের প্রশিক্ষণ দান, লক্ষণ দেখে শনাক্তকরণের উপায় বলে দেয়া এবং ল্যাবরেটরি ডায়াগনস্টিক, ম্যানেজমেন্ট এবং সর্বশেষ আইসোলেশন বা কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করার কথা বলছেন তারা।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সংক্রমণ ব্যাধি হাসপাতালে আগে থেকেই চিকিৎসার জন্য ওয়ার্ড চালু করা এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নজর রাখার পরামর্শ দিয়েছেন, যাতে রোগটির সামাজিকভাবে ছড়িয়ে পড়া রোধ করা যায়।
মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হলে মৃত্যুর ঝুঁকিও খুব বেশি নয়। মনে রাখতে হবে, এটি কোভিডের মতো গুরুতর ও ব্যাপক সংক্রামক কোনো রোগ নয়। দুই থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে রোগী ভালো হয়ে যায়। তবে বাংলাদেশে এখন চিকেন পক্স বা জলবসন্তের মৌসুম। এ সময় এখানে একসাথে দুটো রোগ ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
করোনা মহামারীর সময় আমরা সরকারি সেবায় নানা অব্যবস্থাপনা দেখেছি। আবার করোনা মোকাবেলার অভিজ্ঞতাও আমাদের সঞ্চয়ে আছে। তাই নতুন রোগ ছড়িয়ে পড়লে আগের মতো অনিয়ম অব্যবস্থাপনা যাতে না হয় সে ব্যাপারেও সংশ্লিষ্টদের সতর্ক নজরদারি দরকার।


আরো সংবাদ



premium cement