২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সোনালি বালুর ‘সোনার চর’

-

নয়া দিগন্তের রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা এক সচিত্র প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষে জেগে ওঠা এক অপার সম্ভাবনাময় দ্বীপ সোনার চর। পাশেই জাহাজমারা সৈকত এবং দ্বীপ চরহেয়ার। শ্যামল বনানী, পাখির কলকাকলি, বুনো প্রাণী ও লাল কাঁকড়ার ছোটাছুটি, মৎস্যজীবীদের আনন্দ উচ্ছ্বাস মিলে সাগরের বিশাল বুকে জেগে উঠেছে সোনার চর, যা হাতছানি দিচ্ছে অগণিত সৌন্দর্যপ্রেমী মানুষকে।
জানা গেছে, সোনার চরের আয়তন প্রায় ১০ হাজার একর। এখানে সৈকতের দৈর্ঘ্য পাঁচ কিলোমিটার। ফেনিল ও লোনা পানিতে ভেজা সৈকতে ঘুরে বেড়ায় কাঁকড়ার মিছিল। সেই সাথে বিশেষত সূর্য ডোবার অনন্য মনোগ্রাহী দৃশ্য কেড়ে নেয় সবার মনকে। রাঙ্গাবালী উপজেলার লাগোয়া সাগরের তটরেখা বরাবর এই চর। সড়কে এসে নায়ে নদী পাড়ি দিয়ে সোনার চরে আসতে হয় এর অতুল সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। শহরের কলকোলাহল থেকে বহুদূরে বলে সোনার চর আজো অনেকের অজানা। কিন্তু বিশেষ করে সোনার চর ও চরহেয়ার ভ্রমণপিপাসু নর-নারীকে নিদারুণ আকর্ষণ করছে। সোনার চর সৈকত থেকে সূর্যের উদয় ও অস্ত উভয় দৃশ্য দেখা যায় যখন অপরূপ লালিমা পরিস্ফুট হয়ে ওঠে দিগন্তের বুকে। এ দিকে লাল রঙের কাঁকড়ার সারি যেন অপরূপ-অসাধারণ শিল্পকর্ম রচনা করে থাকে। এ চরে আছে সুদৃশ্য হরিণ, বনমহিষ, উদবিড়াল, মেছোবাঘ, শূকরসহ বিভিন্ন রকম পশুপাখি। শীতের সময় আসে হাজারো বিদেশী পাখির ঝাঁক। তারা যোগ দেয় দেশী পাখির দলে। আগমন ঘটে সরালি হাঁস, সাইবেরিয়ার হাঁস, গাঙচিল প্রভৃতি পরিযায়ী পাখির। সোনার চরের কাছে-কিনারে রয়েছে বহু চ্যানেল বা খাল। চাইলে এগুলোতে নৌকায় ঘোরা যায়। খালের দুই তীরে পুরনো ম্যানগ্রোভ বন ও ঝাউবন। শুষ্ক মৌসুমে এ চরে আশ্রয় নেন অনেক জেলে বা মাছ শিকারি। মোট কথা, সোনার চর যেন এক অন্য রকম জগৎ।
এখানে সোনা হয়তো নেই; তবে সোনালি রঙের বালু আছে। শেষ বিকেলে রোদে দূর থেকে পুরো দ্বীপ যেন সোনার মতো ঝিকমিক করে। তখন মনে হয়, কে যেন সর্বত্র কাঁচা সোনার প্রলেপ দিয়েছে। রোদ বালুতে ছড়ায় সোনার রঙের আভা। এ কারণে এর নাম হয়েছে ‘সোনার চর’।
যোগাযোগব্যবস্থা আজো অনুন্নত। দেশের অন্যান্য স্থান থেকে সরাসরি সড়কযোগে তাই সোনার চরে যাওয়া যায় না এখনো। পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা পৌঁছে আগুনমুখা নদী পার হয়ে রাঙ্গাবালী উপজেলায় যেতে হবে। সেখানে গহিনখালী ঘাট থেকে বুড়াগৌরাঙ্গ নদ পার হয়ে ট্রলারে যেতে হয় বহুলালোচিত সোনার চর। সুপরিচিত কুয়াকাটা থেকেও ট্রলারে কিংবা স্পিডবোটে সোনার চর যাওয়া যায়। নিরাপদ থাকার জায়গাই নেই সেখানে। অবশ্য প্রশাসন পর্যটকদের জন্য ছোট একটি বাংলো বানিয়েছে। ইচ্ছা হলে বন বিভাগের ক্যাম্পেও থাকা যায়। কেউ চাইলে সূর্যাস্ত দেখে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় আধঘণ্টায় চরমোন্তাজ যেতে পারবেন। সেখানে বন বিভাগ, একটি এনজিও এবং মহিলা উন্নয়ন সমিতির বাংলো আছে। স্থানীয় এমপি বলেন, ‘সোনার চর-চরহেয়ার-জাহাজমারা সমুদ্রসৈকত বহু দিন যাবৎ পর্যটন বিকাশের অপেক্ষায়। জাতীয় সংসদে বারবার এ নিয়ে বলেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং এ ব্যাপারে জানেন। আমাদের পরিকল্পনাগুলো কার্যকর হলে সোনার চর আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র হবে।’
যাতায়াত ও থাকার পর্যাপ্ত ব্যবস্থাসহ সোনার চর এলাকার পর্যটনের বিকাশ জরুরি। আমরা আশা করি, সরকার এ বিষয়ে অবিলম্বে সুনজর দেবে। অন্যথায় সোনার চরের সম্ভাবনার বিকাশ ঘটবে না।


আরো সংবাদ



premium cement