২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ব্যয় সঙ্কোচন নীতিতে সরকার

দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি কাম্য নয়

-

দেশের অর্থনীতিতে নানা ধরনের উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামষ্টিক অর্থনীতি গত ১৪ বছরের মধ্যে সবচেয়ে চাপে পড়েছে। বৈশ্বিক মহামারী, রাজস্ব আয়ে ঘাটতি, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ইত্যাদি অর্থনীতিতে বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করেছে। মূল্যস্ফীতি স্বাভাবিকতার মাত্রা ছাড়িয়েছে। যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, চাল-গমসহ নিত্যপণের দাম বেড়েছে। ফলে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। সেই সাথে যোগ হয়েছে প্রবাসী আয়ে ঘাটতির অনুষঙ্গ। কমে গেছে রিজার্ভ। এতে বাংলাদেশের বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য এখন দোদুল্যমান। টাকার বিপরীতে ডলারের দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। খোলাবাজারে গত বুধবার ১০৩ টাকায় পৌঁছে যায় ডলারের দাম। এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে পণ্যমূল্যে। পরিস্থিতি যে সহনশীলতার মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে তাতে সন্দেহ করার বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই।
সরকারের নেয়া কৃচ্ছ্রতার নীতিও বলে দিচ্ছে কতটা চাপের মুখে রয়েছে অর্থনীতি। কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। সব খাতে ব্যয় কমানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বলেছেন, বিদ্যুৎ-পানি থেকে শুরু করে কোনো খাতেই অপচয় করা যাবে না। প্রকল্প অনুমোদনে পরিকল্পনামন্ত্রীর ডানা ছেঁটে দেয়া হয়েছে।
নিম্ন আয়ের মানুষকে কিছুটা রক্ষা করতে ওএমএস কর্মসূচির আওতা বাড়ানো হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় খাদ্যনিরাপত্তা জোরদার করতে মজুদসীমা সাড়ে চার লাখ টন বাড়ানো হয়েছে। চলতি বাজেটে খাদ্যব্যবস্থাপনার রূপরেখা ঠিক রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। ভারত ও রাশিয়া গম রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সরকারকে নানাভাবে বিকল্প উপায় খুঁজতে হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে বরাদ্দ রাখা হয় সাত লাখ ৬০ হাজার টন। সংশোধিত বাজেটে কমানো হয়েছে। কমানো হয়েছে ত্রাণমূলক খাদ্য সরবরাহ কর্মসূচির বরাদ্দও। এমনকি হতদরিদ্র চা-শ্রমিক ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের স্বল্পমূল্যে চাল বিতরণে জন্য দেয়া বরাদ্দও কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এসব খাতে বরাদ্দ কমিয়ে তা দিয়ে আরো বেশিসংখ্যক গরিব মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় আনা হয়েছে। বাড়ানো হচ্ছে ওএমএস কর্মসূচির আওতা।
সব মিলিয়ে অর্থনীতির গায়ে যে পারদ চড়ছে তা সহজেই অনুভব করা যাচ্ছে। তবে সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে জনগণকে শঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেছেন, কৃচ্ছ্রতার নীতি অনুসরণের এই বার্তা ভয়ের কোনো কারণে নয়। আমরা সঠিক পথেই আছি। অন্যান্য দেশের সাথে আমাদের অবস্থা তুলনীয় নয়। মন্ত্রীর ইঙ্গিত স্পষ্টতই শ্রীলঙ্কার দিকে তা বুঝতে অসুবিধা হয় না; কিন্তু প্রশ্ন ভিন্ন জায়গায়।
গত ১৪ বছর ধরে কোনোরকম বাছবিচার না করে দরকারি-অদরকারি নানা প্রকল্পে বিপুল অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে আর্থিক খাতকে অন্ধভাবে ব্যবহার করা হয়েছে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বিবেচনায়। ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে যেমন, তেমনি ব্যাংকের ঋণ নিয়ে খেলাপি হওয়ার প্রবণতা প্রশ্রয় দেয়া হয়েছে আগাগোড়াই। ফলে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের সুযোগ পেয়েছে ক্ষমতাধর দুর্বৃত্তরা। সৃষ্টি হতে পেরেছে পি কে হালদারের মতো অর্থপাচারকারীরা। বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচার হয়ে গেছে দেশ থেকে। এসবই আর্থিক ব্যবস্থাপনায় নৈরাজ্যের নজির।
এখন আমাদের অবস্থা অন্য দেশের মতো নয়, এ কথা বলে যদি পরিস্থিতি সামাল দেয়া সম্ভব হয় সেটি খুবই ভালো; কিন্তু একই কর্ম করে ভিন্ন ফল পাওয়ার আশা করা কতটা যুক্তিযুক্ত সেই প্রশ্ন ভবিষ্যতের জন্যই তোলা থাক।
আগামীতে পরিস্থিতি আরো বেসামাল হয়ে উঠবে বলে কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করলেও আমরা আশাবাদী হতে চাই, কারণ দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি দেখা দিলে করোনা-উত্তর বর্তমান দুঃসময়ে সাধারণ মানুষের পক্ষে তা সামলে নেয়া অসম্ভব হতে পারে।

 


আরো সংবাদ



premium cement