২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
বিদেশ সফর বন্ধের আদেশ লঙ্ঘন

অর্থ তসরুপ বন্ধ না হলে সুফল মিলবে না

-

সরকার দুই দফায় বিদেশ ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। গত বৃহস্পতিবার প্রথম দফায় জারি করা পরিপত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর এটি বলবৎ হয়। দ্বিতীয় দফায় গত সোমবার রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত, আধাসরকারি, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি ও অর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের ওপর একই আদেশ দেয়া হয়। আদেশ অনুযায়ী সরকারি কোষাগার কিংবা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিলের অর্থ ব্যয় করে বিদেশ ভ্রমণ করা যাবে না।
কিন্তু সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যাচ্ছে, মন্ত্রণালয়সহ সরকারি বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের আগের কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। সুতরাং পরে দেয়া আদেশটিও যে মানা হবে না তা মোটামুটি নিশ্চিত। সরকারি আদেশ মানানোর জন্য উচ্চপদস্থদের সেটি মানতে হয়। আমাদের দেশে সে সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি।
খবরে জানা যাচ্ছে, সরকারি নির্দেশ জারির পর বেসরকারি বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীসহ একটি প্রতিনিধিদলের ইতালি সফরের কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। এর নিবন্ধনের শেষ দিন রোববার তা সম্পন্ন হয়েছে। আরো একটি দল যাচ্ছে বেলজিয়ামে। তাদেরও সফরের প্রস্তুতি এগিয়ে চলছে। বিদেশ সফর বন্ধের আদেশ জারি হতে যাচ্ছে জানার পর বৃহস্পতিবারের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তাদের অনেকে তড়িঘড়ি করে টাকা তুলে নেন। একটি পত্রিকা সরকারি কয়েকটি ট্যুরের বিস্তারিত তুলে ধরেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, শ্রম সম্মেলনে অংশ নিতে ৪৩ জন প্রতিনিধির একটি দল ১৬ দিনের সফরে সুইজারল্যান্ডে যাচ্ছে। এই সফরে মন্ত্রী, সরকারি দলের নেতা ও আমলাদের নিজেদের আত্মীয়স্বজন অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুনির্দিষ্ট তথ্য দিয়েছে পত্রিকাটি। প্রশ্ন হচ্ছে, শ্রম সম্মেলনের সাথে পরিবারের বিচ্ছিন্ন সদস্যদের কী সম্পর্ক? উন্নত দেশে বিপুল ব্যয়ে বিশাল একটি দলের টানা অর্ধমাস কাজই বা কী? এতে জনসাধারণের কোনোভাবে উপকৃত হওয়ার কিছু কি আছে? প্রশ্নগুলোর জবাব দেয়ার মতো কেউ নেই। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক), ঢাকা ওয়াসা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের (আইসিটি) বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিনিধিদলের বিদেশ ভ্রমণের বিস্তারিত বর্ণনা পত্রিকাটি তুলে ধরেছে। তাদের পর্যবেক্ষণে ১৭টি প্রতিনিধিদলে ৯৮ কর্মকর্তা বিদেশ সফরের তালিকায় রয়েছেন। এ ছাড়া আরো প্রতিনিধিদল ও ব্যক্তিবিশেষ থাকতে পারেন, যারা অচিরেই বিদেশ সফর করতে যাচ্ছেন।
বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে একশ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তার বিলাসিতা বিগত বছরগুলোতে আমরা দেখেছি। এসি কেনা, পুকুর খনন, খিচুড়ি রান্না শেখা ইত্যাদি উদ্ভট কারণ দেখিয়ে বিদেশ সফরের নাটক সাজানো হয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে এমন অনাহূত অরাজকতা আমরা দেখে আসছি। দুর্ভাগ্য, অকারণ সফরের ভূরি ভূরি অভিযোগের একটিরও তদন্ত করার কোনো উদ্যোগ সরকার নেয়নি। অপ্রয়োজনীয় খরচের কারণে কারো বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নেয়নি। পরিস্থিতি এখন বদলেছে। প্রথমত মহামারী করোনার ধাক্কায় অর্থনীতি টালমাটাল হয়ে গেছে। এর পরেই এসেছে রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসন। উপর্যুপরি দুটো ধাক্কার পর আমাদের নিজস্ব অর্থনীতির অনিয়ম লুটপাটের কুফলও যোগ হতে চলেছে। বাজারের নিত্যপণ্যের অগ্নিমূল্যে মানুষ দিশেহারা। টাকার বিপরীতে ডলারের দাম হু হু করে বাড়ছে। আমদানি ব্যয় বাড়ছে, অন্য দিকে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ কমছে। এ ধরনের এক পরিস্থিতির শিকার হয়ে শ্রীলঙ্কা দেউলিয়া হয়ে গেছে। পরিস্থিতির ভয়বহতা আঁচ করতে পেরে সরকার বিদেশে ভ্রমণের বিলাসিতা বন্ধ করার আদেশ দিয়েছে। এখন পর্যন্ত যে খবর পাওয়া যাচ্ছে তাতে বিদেশ সফর বন্ধ হয়নি। তাহলে এ আদেশ বা কড়াকড়ি আরোপ আমাদের জন্য কোনো সুফল বয়ে আনবে না? একটি আদেশ দিয়েই সরকার চুপ করে থাকতে পারে না। সরকারের উচিত এটিকে মনিটর করা, যাতে অপ্রয়োজনীয় বিদেশ সফর করে কেউ সরকারি কোষাগারের অর্থ অপচয় করতে না পারে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement