২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের আয় নেই

বিষয়টি পর্যালোচনা করুন

-

প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালের ১১ মে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। প্রকল্পটি আরেকটি শ্বেতহস্তিতে রূপ নিচ্ছে বলে মনে হয়। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের চার বছরে এসে বলা হচ্ছে, এটি তিন বছরে কোনো আয় করতে পারেনি। অথচ ২০২৫ সালের মধ্যে এর পুরো প্রকল্প ব্যয় তুলে আনা সম্ভব হবে বলে জানানো হয়েছিল। এখন এটির পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলছেন, চার বছরের মধ্যে প্রথম তিন বছরে আমরা নানা কারণে কোনো আয় করতে পারিনি। কিন্তু ধীরে ধীরে আয় করতে শুরু করেছি।
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়, স্যাটেলাইট থেকে বছরে ঠিক কী পরিমাণ আয় হচ্ছে সে বিষয়ে কোম্পানির এমডি কোনো তথ্য দেননি। অনুমান করতে কষ্ট হয় না যে, আয়ের পরিমাণ এতই সামান্য; যা উল্লেখ করাও সম্মানজনক নয়। যৎসামান্য যা আয় হচ্ছে তা দেশের বেসরকারি টিভি চ্যানেলে সেবা দিয়ে। সেই সেবাও যে টিভিগুলো স্বেচ্ছায় নিয়েছে এমন নয়। কারণ, কক্ষপথে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের যে কৌণিক অবস্থান তা দেশের টিভিগুলোর অনুষ্ঠান সম্প্রচারে পুরোপুরি উপযোগী নয়। এছাড়া কিছু ব্যাংক এর গ্রাহক। এসব গ্রাহক থেকে আয় কত তা বলার মুখ নেই কর্তৃপক্ষের। অথচ এ প্রকল্প নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখিয়েছে সরকার। এখন এর বাণিজ্যিক উপযোগিতা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে।
বলা হয়েছিল, এ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে মহাকাশে স্যাটেলাইট আছে এমন অভিজাত দেশগুলোর কাতারে পৌঁছে যাবে বাংলাদেশ। এটা হবে দেশ ও জাতির জন্য গৌরবের। বাস্তবে সবার জানা, টাকার বিনিময়ে অন্যের কাছ থেকে কোনো পণ্য বানিয়ে নেয়ার মধ্যে কৃতিত্বের কিছু নেই। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের উদ্ভাবন, নকশা, নির্মাণ, উৎক্ষেপণ কোনোটাই দেশীয় প্রযুক্তির নয়। বিদেশীদের কাছ থেকে বানিয়ে নিয়ে তাদেরই প্রযুক্তি দিয়ে আকাশে স্থাপন করা হয়েছে। এ নিয়ে গর্ব করার কিছু নেই। যেখানে ইরান পরাশক্তিগুলোর বিরোধিতা ও অবরোধ সত্ত্বেও স্যাটেলাইট উদ্ভাবন থেকে শুরু করে উৎক্ষেপণ সব কাজ নিজেরা করেছে। একটি নয়, বিভিন্ন ধরনের, নানা প্রয়োজনে মহাকাশে স্থাপন করেছে। আমরা সে রকম কিছুই করতে পারিনি।
এখন যা দরকার, প্রকল্পটি লাভজনক করা। দেশী টিভি আর ব্যাংকের সার্ভিস দিয়ে সেটা আদৌ সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে না পারায় এ অঞ্চলের কোনো দেশই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সেবা নিতে এগিয়ে আসেনি। এতে আমাদের ব্যর্থতা আছে। সেটা স্বীকার করলেও ব্যর্থদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা-ই এখন দেখার বিষয়। রাষ্ট্রীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতা কোনোভাবেই বিনা প্রশ্নে মেনে নেয়ার সুযোগ নেই।
দেশের দুর্গম যেসব এলাকায় ফাইবার অপটিক্যাল কেবল নেয়া যায় না বলে টেলিফোন সার্ভিস বা ব্যান্ডউইথ দেয়া সম্ভব হয় না, সেসব জায়গায় টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন করা গেছে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে। এ জন্য দেশের ৩১টি দ্বীপে ১১২টি ভি-স্যাট স্থাপন করা হয়েছে। প্রশ্ন হলো, সেই সব দ্বীপে টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সংযোগ দিতে কত ব্যয় হচ্ছে; তাতে আর্থিক বা অন্যভাবে কতটা উপকার হচ্ছে তার মূল্যায়ন হওয়াও জরুরি।
স্যাটেলাইট কোম্পানিকেও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। এর মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে কোম্পানির পরিচালনায় স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে। টেলিকম বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় না কেন? স্যাটেলাইট থেকে আমরা কত টাকা আয় করেছি, আমাদের অরবিটের ভাড়া কত, কিভাবে সে অর্থ পরিশোধ করা হয় এসব তথ্য কেন জানানো হয় না? তারা বলেন, এসব ক্ষেত্রে জবাবদিহি না থাকলে আর্থিকভাবে সফল হওয়া যাবে না। লাভজনক না হতে পারা এবং প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়া বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের প্রধান ব্যর্থতা। রাষ্ট্র বা জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত এমন একটি বৃহৎ প্রকল্প ভুল পরিকল্পনা ও প্রাক্কলনে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে এটা মেনে নেয়া যায় না।

 


আরো সংবাদ



premium cement