২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
কারা নিয়োগ পাচ্ছেন ভিসি পদে

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ দূষণ

-

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নটি আবারো সামনে এলো। এখন কোন মানদণ্ডের ভিত্তিতে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিসি নিযুক্তি পাচ্ছেন? এ ক্ষেত্রে প্রধানত দেখা হতো সর্বোত্তম অ্যাকাডেমিক ফলাফল ও গবেষণার পাশাপাশি প্রশাসনিক যোগ্যতা। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগ দেয়ার সময় এ বিষয়গুলো খুঁটিয়ে দেখা হতো। বিগত এক যুগে ক্রমান্বয়ে এই মানদণ্ড পুরোপুরি বদলে গেল। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিযুক্ত ভিসিদের আত্মীয়করণ, দুর্নীতি, অনিয়ম ও অসৌজন্যমূলক আচরণে বারবার ক্যাম্পাস উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তাদের পর্যায়ে ভিসিরাও নেমে এসেছেন। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ভালো কিছু দেখাতে পারছে না।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ভিসি অধ্যাপক ফরিদউদ্দিন আহমেদ কোন যোগ্যতার কারণে ভিসি নিযুক্ত হয়েছেন সেটি নিয়ে শিক্ষকরাই এখন প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি ক্ষমতাসীন দলের আশীর্বাদপুষ্ট শিক্ষক সংগঠনের নেতা ছিলেন; এটাই কি তার যোগ্যতা? অথচ তার বিতর্কিত বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি কর্তৃপক্ষের জানার কথা। এবারের আন্দোলনে এ পর্যন্ত তিনি যেসব আচরণ করেছেন সেটি কোনোভাবে সম্মানজনক নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তাকে আর অভিভাবক হিসেবে চাচ্ছেন না। এ ব্যাপারে তাদের মধ্যে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে উঠেছে। তার ওপর বিরক্ত হয়ে ছাত্ররা তাকেই শেষ পর্যন্ত অবরোধ করেছেন। তার সাথে বাইরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন। এই আন্দোলনের অংশ হিসেবে অনশন করতে গিয়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আমরণ অনশনে থাকা ছাত্রদের জীবন নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। এ দিকে একদল ভিসি রয়েছেন যারা ফরিদউদ্দিনের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। তারা রীতিমতো বিবৃতি দিয়েছেন। তারাও বর্তমান সরকারের আমলে ‘অনেকটাই দলীয় কোটা’য় ভিসি নিযুক্ত হয়েছেন।
বিগত কয়েক বছরের মধ্যে বেশ কয়েকজন ভিসি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। সরকারের পছন্দের লোক হওয়ার পরও তাদের ভুলের মাশুল এতটা ছিল, তাদের সরকার আর রক্ষা করতে পারেনি। এ ছাড়া আরো বেশ কয়েকজন ভিসি রয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে আছে বাজে সব অভিযোগ। একজন ভিসি হয়ে কিভাবে তারা এসব কর্মকাণ্ড করছেন? বর্তমান সরকারের আমলে ব্যাঙের ছাতার মতো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এবার এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি-সহ শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ নিয়ে আরো নিম্নমানের দুর্নীতি হতে দেখা গেল। এসব ভিসির অধীনে নবগঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পদায়ন করা হয়েছে অর্থ নিয়ে অথবা নিজেদের আত্মীয়স্বজন কিংবা দলীয় লোকদের। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি জড়িয়ে পড়ছেন নিজের বিশ্ববিদ্যালয় ভবন নির্মাণে অনিয়ম ও অর্থ নয়ছয়ের সাথে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে না; যেমন শাবিপ্রবির ছাত্রদের দাবির প্রতি সাড়া দেয়া হয়নি।
সম্প্রতি প্রকাশিত হওয়া বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা প্রায় বন্ধের পর্যায়ে রয়েছে। বিগত বছর আটটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় কোনো অর্থ ব্যয় হয়নি। এমনকি প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা হচ্ছে নামমাত্র। সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই কোনো প্রকাশনাও। এর অর্থ হচ্ছে, এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে পুরনো ও অচল জ্ঞানের চর্চা। মুখস্থ বিদ্যার চর্বিত চর্বণ করে ‘কিছু নামকাওয়াস্তে গ্র্যাজুয়েট তৈরির কারখানা’ এগুলো।
আমরা দেখতে পাচ্ছি, নির্বাচন কমিশন নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা চলছে। দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য এর প্রয়োজন কতটা তা নিয়ে জ্ঞানী-গুণীরা মূল্যবান কথা বলছেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এর চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এ প্রতিষ্ঠান থেকে জাতির নেতৃত্ব বেরিয়ে আসে। এখানেই যদি শিক্ষার প্রকৃত পরিবেশ সৃষ্টি করা না যায় তাহলে আমরা উপযোগী নেতৃত্ব পাবো না। দীর্ঘ দিন অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতাসম্পন্নরা এমনকি বিতর্কিতরা ভিসি পদে নিয়োগ পেয়ে যাচ্ছেন। সে জন্য ঘুরে ফিরে প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানামুখী সঙ্কট সৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ পাওয়া যাচ্ছে না। শিক্ষার মানও ক্রমাবনতিশীল। নাগরিক সমাজে এ বিষয়ে জোরালো আলোচনা প্রয়োজন। সরকারের দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির কারণে শিক্ষার পরিবেশ কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেটি জাতির সামনে তুলে ধরা প্রয়োজন। আগে নিয়ম-কানুন ঠিক করুন। পরে সেসব মানতে সরকারকে বাধ্য করুন, যাতে করে প্রকৃত যোগ্য শিক্ষকরা ভিসি নিযুক্ত হতে পারেন; আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার আগের মতো জ্ঞানের চর্চা হতে পারে।

 


আরো সংবাদ



premium cement