২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
আবারো স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা

পাঠদানের বিকল্পে জোর দিন

-

করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রায় দেড় বছর নজিরবিহীন বন্ধের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছিল। এরই মধ্যে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির কারণে চার মাস পর বন্ধের ধারায় ফিরল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আপাতত দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ থাকবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেই সাথে বন্ধ থাকবে সব ধরনের কোচিং সেন্টার। গত শুক্রবার সরকারের ঘোষণায় আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম চলমান থাকবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হল রয়েছে, সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের চলাচল করতে হবে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে ক্লাসে ফিরবেন তারা। তবে শিক্ষকরা প্রশাসনিক কাজে যোগ দিতে পারবেন। সরকারের ঘোষণার পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এসব পরীক্ষার সময়সূচি পরে জানানো হবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বাজার বা শপিংমল, মসজিদ, বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চঘাট, রেলস্টেশনসহ সব ধরনের জনসমাবেশে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহারসহ যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নজরদারি করবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাণিজ্যমেলা চলবে বলে জানা গেছে। মেলায় আসা লোকজনকে টিকার সনদ নিয়ে আসতে হবে। মাস্ক পরিধান করতে হবে।
গত শুক্রবার দুপুরের আগে থেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার বিষয়টি ব্যাপক প্রচার পায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই লিখেছেন, করোনা শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই হানা দিয়েছে। হাটবাজারে, মেলায় করোনা থাকে না। করোনা কি বাছাই করে শিক্ষার্থীদের আক্রমণ করে? এ দিকে দীর্ঘ দিন স্কুল বন্ধ থাকার পর সেপ্টেম্বরে আবার চালু হওয়ায় নতুন করে শিক্ষাকার্যক্রম শুরু হয়েছে মাত্র। জানুয়ারি মাসই মূলত প্রাথমিক-মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির সময়। কিন্তু বন্ধের ঘোষণায় দেশের হাজার হাজার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবার ঝুঁকির মুখে পড়বে। এ ছাড়া আসন্ন এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ওপরেও বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে পরীক্ষার্থীদের যেভাবে ক্লাস চালু করা হয়েছিল সেখানে এখন বড় ধরনের ছেদ পড়বে।
প্রশ্ন হচ্ছে, সব কিছু খোলা রেখে শুধু স্কুল-কলেজ বন্ধ করা হলেই কি করোনার বিস্তার কমবে? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হলে বরং শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় আবার ছেদ পড়বে। করোনার কারণে প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর গত বছর সেপ্টেম্বরে মাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করা হয়। স্কুলগুলোতে আগের মতো নিয়মিত ক্লাসই শুরু হয়নি। এখনো সীমিত পরিসরে ক্লাস চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সবেমাত্র চাঞ্চল্য ফিরে পেয়েছিল। কারো পরীক্ষা শেষ হয়েছে, কারো হয়নি। এর মধ্যে আবারো সব পুরোপুরি বন্ধ করা হলো। অথচ সারা দুনিয়ার বেশির ভাগ দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা। পশ্চিমা বিশ্বে যেখানে করোনা সংক্রমণের হার এখন অনেক বেশি, সেসব দেশেও এখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রেখেছে। অন্য দিকে দেশে এখনো ২০২০ কিংবা ২০২১ সালের মতো পরিস্থিতি সৃৃষ্টি হয়নি। করোনার নতুন ভ্যারিয়েট ওমিক্রনে মৃত্যুর হারও কম। তাই বলতে হয়, পরিস্থিতি খারাপ হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা কোনো সমাধান নয়। কেন এটি সরকারের বুঝে আসছে না?
আমাদের মতো অধিক জনসংখ্যার দেশে কিভাবে করোনা মোকাবেলা করতে হবে, সেটিই এখনো ঠিকঠাক বুঝতে পারছেন না সরকারের নীতিনির্ধারকরা। অর্থনীতি বন্ধ করে দেয়া মানে না খেয়ে মরা; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার অর্থ হলো ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রীতিমতো পঙ্গু করে দেয়া। গত দুই বছরে তার সাক্ষী দেশবাসী।
দীর্ঘমেয়াদে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না। প্রয়োজন জরুরি ভিত্তিতে দ্রুত শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনা। পাশাপাশি ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঘোষিত বন্ধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম সচল রাখতে বিকল্প সব উপায় কাজে লাগানো। তা হলে ক্ষতি কিছুটা পূরণ হতে পারে। তবে অভিজ্ঞতা বলে, দেশে শিক্ষাকার্যক্রমে বিকল্প উপায় তেমন ফলপ্রসূ হয়নি।


আরো সংবাদ



premium cement