২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`
হল প্রশাসন ছাত্রলীগের কর্তৃত্বে

শিক্ষার পরিবেশ বিঘিœত

-

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার বিষয়টি সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একটি মডেল হতে পারত। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের পেশিশক্তির কবলে পড়ে দেশের বেশির ভাগ উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখন ধুঁকছে। নারকীয় কায়দায় বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদকে হত্যার পর সম্মিলিত আন্দোলনের মাধ্যমে বুয়েট তাদের সম্পূর্ণ রাহুমুক্ত হয়। সেখানে অত্যাচার-নির্যাতনের স্টিমরোলার থেকে ছাত্ররা মুক্ত হতে পেরেছেন একজন মেধাবী ছাত্রের জীবনের বিনিময়ে। ওই সময় প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ স্বাভাবিক করতে জোরালো আন্দোলন হতে পারত। এখন প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের সন্ত্রাস অত্যাচার নির্যাতনের খবর প্রকাশ হচ্ছে। এর ফলে শিক্ষার পরিবেশ বিঘিœত হচ্ছে। একটি সহযোগী দৈনিকে গতকাল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) বলপ্রয়োগ করে ছাত্রদের অধিকার হরণের বিস্তারিত এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, শাবিপ্রবির আবাসিক হলগুলোর ৮০ শতাংশ আসন ছাত্রলীগ দখল করে নিয়েছে। আক্ষরিক অর্থে এগুলো ছাত্রসংগঠনটির তালুকে পরিণত হয়েছে বলে প্রতিবেদন থেকে বোঝা যাচ্ছে। এসব আসনে ছাত্রদের বরাদ্দ দিতে হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কথিত এ ছাত্রদের কাছে সুপারিশ পাঠায়। ওই প্রতিবেদনের পাশে গতকাল পত্রিকাটি আরেকটি খবর ছেপেছে। তাতে দেখা যাচ্ছেÑ ছাত্রলীগ আন্দোলন দমাতে ছাত্রীদের ওপর হামলা করেছে। বেগম সিরাজুন্নেসা হলের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফেরাতে তারা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করছিলেন। ছাত্রলীগ তাদের কিলঘুষি মেরে লাঞ্ছিত করে। মারধর করে তারা আন্দোলন ভণ্ডুল করতে চেয়েছে। অথচ ছাত্রীরা হলের অনিয়ম অব্যবস্থাপনা দূর করার দাবি করছিলেন। এ জন্য তারা হল প্রশাসন তথা হলের প্রাধ্যক্ষ ও দলীয় প্রভাবে পরিচালিতদের পদত্যাগ দাবি করছিলেন।
প্রতিবেদন থেকে আরো জানা যায়, শাবিপ্রবির আবাসিক হলে স্বাধীনভাবে পড়াশোনার সুযোগ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে তিনটি হলে মোট সিট আছে এক হাজার ২৩টি। এসব সিট মেধা কিংবা অন্য কোনো অ্যাকাডেমিক নিয়ম-কানুনের ভিত্তিতে নয়; বরং ছাত্রলীগের নেতারা তাদের ইচ্ছেমতো বিলি বণ্টন করেন। এ ক্ষেত্রে সংগঠনটির ছয়টি গ্রুপ রয়েছে। তারা নিজেদের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে এ জবরদখল চালাচ্ছেন। মিছিলে যাওয়াসহ নানা শর্ত পূরণের প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে সিটে ছাত্রদের ওঠায়। সিট বণ্টনের ক্ষেত্রে আরো চমৎপ্রদ খবর পাওয়া গেল। নামমাত্র বাম সংগঠনগুলোও ছাত্রলীগের সাথে ক্ষমতার ভাগবাটোয়ারায় রয়েছে। ছাত্রলীগ তাদেরও কিছু সিটের কর্তৃত্ব দিয়েছে। ৯৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ আসনই ক্ষমতাসীন চক্রের নিয়ন্ত্রণে। অন্য দিকে মাত্র ৩ দশমিক ৪২ শতাংশ আসনের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হাতে।
শিক্ষাঙ্গন ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের নিয়ন্ত্রণে এককভাবে চলে যাওয়ার পেছনে মেরুদণ্ডহীন প্রশাসনও কম দায়ী নয়। শাবিপ্রবির দায়িত্বশীল শিক্ষকদের কথাবার্তায় তার প্রমাণ মিলছে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে প্রশাসনে দায়িত্বে থাকা শিক্ষকরা ঠুঁটো জগন্নাথ হলেও ছাত্রলীগের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কিছু বলতে রাজি নন। বরং তারা বলছেন, পরিস্থিতি তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। ছাত্রীদের ওপর হামলার ঘটনা থেকেও তা আঁচ করা যায়। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়া প্রশাসন ছাত্রীদের দাবির প্রতি সাড়া দেয়নি। তারা আন্দোলন বন্ধে চাপ দেয়ার পক্ষে। এর অংশ হিসেবে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনাটি ঘটানো স্বাভাবিক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন আচরণ লজ্জাজনক।
শুধু শাবিপ্রবি নয় দেশের বেশির ভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন পরিচালনায় ছাত্রলীগ অন্যায় প্রভাব বিস্তার করে আছে। এ ধরনের একটি পরিস্থিতি শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। ছাত্রলীগের অপকর্মের বিরুদ্ধে সরকার সময়মতো ব্যবস্থা নেয়নি। এতে পরিস্থিতির সবসময় অবনতি হয়েছে। আমরা মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে শিক্ষক-ছাত্রদের পক্ষ থেকে জাগরণ দরকার। এ ক্ষেত্রে বুয়েট একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে। বুয়েট আন্দোলনের সময় দেখা গিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটির সাবেক, বর্তমান শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা একযোগে প্রতিবাদে শামিল হয়েছিলেন। একই ধরনের প্রতিবাদ প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে হওয়া জরুরি বৈকি। যত দ্রুত সম্ভব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সন্ত্রাস ও অবৈধ ক্ষমতাচর্চার পরিবেশ বন্ধ করতে হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement