২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
নদী বেদখল করে নির্মাণকাজ

দেখার কেউ নেই!

-

নীলফামারী জেলা শহর ঘেঁষে নদী বয়ে গেছে, যার নাম বামনডাঙা। এ নদীতীরে শ’ দেড়েক বছর আগে গড়ে উঠেছে একটি বন্দর। একটি জাতীয় দৈনিক প্রসঙ্গক্রমে আরো লিখেছে, দূর-দূরান্তের ব্যবসায়ীরা এ নদীপথে পণ্য বোঝাই বড় নৌকা নিয়ে শাখামাছা নামের এ বন্দরে ভিড়তেন। একসময় আঞ্চলিক প্রধান বন্দর ছিল এটি। ফলে ব্যবসাবাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটেছিল। একপর্যায়ে এখানে মহকুমা শহর নীলফামারী চালু হয়। কিন্তু সেই গভীর বহতা নদী বামনডাঙা ঐতিহ্য হারিয়ে জীর্ণশীর্ণ ছোট নদীতে পরিণত হয়েছে। যে নদীপথে পালতোলা, পণ্যবাহী নৌকা চলাচল করত অতীতে; সে নদী মরে গিয়েও আজ নীলফামারী জেলা শহরের জলাবদ্ধতার অবসানে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে।
জনগণের বক্তব্য, এই বামনডাঙা নদী দখল করা হয়েছে কয়েক স্থানে; তা ছাড়া এর উপর নির্মিত হয়েছে নানা ধরনের স্থাপনা। ফলে এই নদীপথ সরু হয়ে পড়েছে। এমনকি মাটি ফেলে নদী জবরদখলের মাধ্যমে নিজের ব্যক্তিগত জায়গা বানিয়েছেন অনেকেই। নদীর দু’তীরের বহু মানুষ তাদের ময়লা-আবর্জনা ফেলছেন নদীতে। এতে ঘটছে দূষণ; ছড়াচ্ছে নানা প্রকার রোগজীবাণু। নানা ধরনের রোগব্যাধি আক্রমণ করছে মানুষকে। তদুপরি এতে দেশী মাছের প্রজাতিগুলো হারিয়ে গেছে।
এ দিকে সরেজমিন দেখা যায়, নদীটির উৎপত্তিস্থল থেকে শেষ মাথার নানা অংশে অবৈধ দখলদারি। নদীর পাড়ের এক বাসিন্দা জানান, ‘মাত্র দুই যুগ আগেও যে নদীতে স্রোত ছিল প্রবল; সেটি এখন সঙ্কীর্ণ নালা। প্রত্যহ তা দখল করা হচ্ছে। নদীর বুকে গড়ে তোলা হচ্ছে বাড়িঘর ও দোকানপাট। কেউ যেন এসব দেখার নেই।’ অবশিষ্ট নদীটিও মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। সরকারের ভূমিসংক্রান্ত কাগজপত্র অথবা নকশাতেও বামনডাঙার নদীরূপে কোনো অস্তিত্ব নেই। কিছু ভূমি কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাজশে দখলবাজরা বামনডাঙা নদী ‘নিজেদের’ বলে দাবি করে দখলে নিয়েছে। পাউবো সূত্র জানায়, “এটাকে নদীতে পুনঃরূপান্তরের জন্য ড্রেজিং শুরু হলেও শেষ করা যায়নি ‘নানা প্রতিকূলতা’য়। এক কোটি টাকার কিছু বেশি ব্যয় হলেও এটি আজো রূপ নেয়নি নদীর।” তবে কী সে ‘প্রতিকূলতা’ তা জানা যায়নি।
নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রাণতুল্য নদ-নদী দখল-দূষণ-ভরাটে যারা জড়িত এবং যারা এসবের দ্বারা নৌপথের সঙ্কীর্ণতা, স্বল্পতা ও অগভীরতার জন্য দায়ী, তারা শুধু নৌবাণিজ্যের টুঁটি চেপে ধরছে না, কেবল প্রাকৃতিক পরিবেশকে বিপন্ন করে তুলছে না, একই সাথে তারা গুরুতর অন্যায় ও অপরাধও করছে। তারা যে দলের হোক কিংবা যত বড় নেতাই হোক কিংবা তাদের পরিচয় যা-ই হোক না কেন, এমন কার্যত প্রভাবশালী সবাইকে অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে দেশের আইন মোতাবেক এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় নদী হত্যা, তথা পানি আগ্রাসন বন্ধ হবে না। দেশের প্রত্যেক নদীখেকো, দখলবাজ-দূষণকারীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষেরই কর্তব্য। না হলে এসব গণশত্রু জনগণের জীবনকে ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন করে রাখবে বৈকি।
আমরা আশা করি, নীলফামারীসহ দেশের প্রতিটি এলাকায় নদী হত্যা অবিলম্বে বন্ধ করা হবে এবং পরিবেশ রক্ষায় সবাই দায়িত্ব সচেতনতার পরিচয় দেবেন। এ জন্য পর্যাপ্ত নজরদারি ও খবরদারি নিশ্চিত করা চাই সরকারের পক্ষ থেকে এবং এ দায়িত্বে অবহেলাকারীদের সবাইকে উপযুক্ত শাস্তি যেন ভোগ করতে হয়, সে উদ্যোগ নিতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement