২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
মানবাধিকার নিয়ে অস্বীকার নীতি

অভিযোগগুলোর তদন্ত করুন

-

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) ২০২২ সালের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বাংলাদেশে নিরাপত্তাবাহিনীর হাতে সংঘটিত বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন ও গুমের অভিযোগ অস্বীকার করছে সরকার। সংস্থাটির মতে, সরকার এটা পরিষ্কার করে দিয়েছে যে, এসব নিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার ইচ্ছা নেই সরকারের। জাতিসঙ্ঘ, দাতা দেশ এবং বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে এ নিয়ে উদ্বেগের বিষয়ে সরকারের একতরফা প্রত্যাখ্যানের নীতি কী কল্যাণ বয়ে আনবে; গুরুত্বসহকারে তা নিয়ে ভাবতে হবে আমাদের।
কোনো অভিযোগ খারিজ করে তার সমাধান সম্ভব নয়। বরং উত্থাপিত বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত উদঘাটনের মাধ্যমে প্রতিকার করাই বুদ্ধিমানের কাজ। কিন্তু বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে এক দশকের বেশি সময় এমন অভিযোগ ঝুলছে। সরকার শুধু প্রত্যাখ্যান করেছে, সমাধানের পথে হাঁটেনি। ফলে সঙ্কট সমাধানের বদলে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়েছে, সবাই তা স্বীকার করবেন।
এইচআরডব্লিউ বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছে। সংস্থাটি বলছে, এদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, র্যাবে নিযুক্তদের বিরুদ্ধে আটক ব্যক্তিদের নির্যাতনের বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ রয়েছে। আগে থেকেই মানবাধিকার সংস্থাগুলোর জোট আমাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিস্তারিত প্রতিবেদন বৈশ্বিক ফোরামে উপস্থাপন করেছে। ওইসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে সরকার; যদি দেশের ভেতরে গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের কথা অজানা থাকত তাহলে সরকারের অবস্থান মেনে নেয়া যেত। ওই তালিকা দেশীয় মানবাধিকার সংগঠনের হাতেও রয়েছে। সরকার চাইলে এগুলোর বিষয়ে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারত। গুম, খুন ও বিচারবহির্র্ভূত হত্যা বন্ধ হলে জাতিসঙ্ঘ, দাতা দেশ এবং বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে বৈশ্বিক পর্যায়ে অভিযোগ উত্থাপনের সুযোগ থাকত না।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির সাবেক-বর্তমান মিলিয়ে সাত শীর্ষ কর্মকর্তার ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে পুলিশ ও র্যাবের প্রধানও আছেন। একটি দেশের জন্য এটা দুর্ভাগ্যজনক। এইচআরডব্লিউর মানবাধিকার-বিষয়ক এ বছরের প্রতিবেদনকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ‘এটি শুধু একপেশেই নয়, মিথ্যায় ভরপুর’। প্রকৃতপক্ষে আমাদের মোকাবেলা করতে হবে প্রত্যেকটি অভিযোগ আলাদা আলাদাভাবে। যারা হত্যার শিকার হয়েছেন, গুম হয়েছেন তাদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে হবে। সরকার চাইলে কাজটি করতে পারে। কিন্তু সরকারের অস্বীকার নীতি গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার ব্যক্তিদের পরিবারে হতাশা বাড়াবে।
সংবাদমাধ্যম থেকে জানা যায়, গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের ওপর নতুন করে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। পুলিশ এসব পরিবারের কাছে গিয়ে সাদা কাগজে সই দিতে জোরাজুরি করছে। কথামতো কাজ না করলে হুমকিও দিচ্ছে। চাপে পড়া পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে সামাজিক মাধ্যমেও তথ্য-উপাত্ত ও বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে। নতুন এ পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের মঞ্চ ‘মায়ের ডাক’ ও মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিস কেন্দ্র (আসক) পৃথক বিবৃতি দিয়েছে। বাইরের কোনো দেশ কিংবা সংস্থা আমাদের নাগরিক জীবনের আশঙ্কা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করুক, তা কারো কাম্য নয়। তবে সরকারকে এ নিয়ে দায়িত্বশীল হতে হবে। কিছু দিন আগে ৩৪ ব্যক্তির খোঁজ চেয়েছে জাতিসঙ্ঘ। সরকার চাইলে নিখোঁজ ব্যক্তিদের যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত খোলাসা করে জানাতে পারে। অন্য দিকে দেখা যাচ্ছে, স্বজনদের পেতে আহাজারি করছে পরিবারগুলো। এ নিয়েও সরকার চুপ থেকে অভিযোগ খারিজ করলে সমাধান হবে না।
আমরা আশা করব, এবার সরকারের বোধোদয় হবে। প্রতিটি অভিযোগ তদন্ত করে পরিষ্কার করবে। বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হওয়া মানুষগুলো আর ফিরে আসবেন না ঠিক। কিন্তু গুম হওয়া ব্যক্তির জীবনে কী ঘটেছে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একইভাবে ভবিষ্যতে আর যেন কোনো মানুষ গুমের শিকার না হন, না কাউকে শিকার না হতে হয় বিচারবহির্ভূত হত্যার, সে নিশ্চয়তা সরকারকেই দিতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হবে।


আরো সংবাদ



premium cement