১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সড়কে নৈরাজ্য ও লাল কার্ড

সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান করুন

-

দেশের গণপরিবহন খাতে অরাজকতা আছে। এটি অস্বীকার করার মানে সত্যের অপলাপ। প্রতিদিন সড়কে অসংখ্য মানুষের জীবন ঝরছে। গত মাসে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪১৩ জন। আর আহত হন ৫৩২ জন। নিহতদের মধ্যে ৫৪ জন শিক্ষার্থী। সড়কে চলাচলকারী গাড়িগুলোর বেশির ভাগ চালক ভুয়া লাইসেন্সধারী। সিটি করপোরেশনের গাড়ি চালান সুইপাররা। সেই সুইপারের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন শিক্ষার্থী ও পথচারী। সড়কে প্রতিদিন যত মানুষ চলাচল করেন তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক গণপরিবহনের জোগান নেই। এ কারণে টেম্পো, রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, এমনকি ব্যাটারিচালিত বিপজ্জনক যানবাহনেও চলাচল করতে বাধ্য হন যাত্রীরা। গণপরিবহনের বেসরকারি মালিকরা যখন তখন যাত্রীদের পণবন্দী করে সড়কে অবরোধ সৃষ্টি করেন। ভাড়া আদায়ে অব্যবস্থা ভয়াবহ। অনেক রুটে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বিভিন্ন অজুহাতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায়।
নিরাপদ সড়ক চাই নামে শিক্ষার্থীদের দেশ কাঁপানো আন্দোলনের পর সরকার সড়ক পরিবহন খাতে নতুন আইন তৈরি করে। কিন্তু সে আইনের সামান্যই বাস্তবায়িত হয়েছে। আর সেটি বাস্তবায়ন করা যায়নি পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের চাপে। স্পষ্টতই সরকার পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের কাছে নতি স্বীকার করেছে।
সম্প্রতি সড়কে নৈরাজ্য দূর করার দাবিতে শিক্ষার্থীরা ফের আন্দোলনে নেমেছেন। সাথে আছে স্বাধীনতাপূর্ব শাসকদের মেনে নেয়া ছাত্র কনসেশনের দাবি। সরকার বলছে, ছাত্রদের হাফ ভাড়ার দাবিসহ সব দাবি মেনে নেয়া হয়েছে। এটি কি আদৌ সত্য? শুধু রাজধানীতে হাফ ভাড়া বা রাষ্ট্রীয় পরিবহনে হাফ ভাড়ার জন্য শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেননি। করছেন না। তারা সারা দেশে সব গণপরিবহনে হাফ ভাড়ার দাবি জানাচ্ছেন। গত শনিবারও টঙ্গীসহ কয়েকটি জায়গায় হাফ ভাড়া, নিরাপদ সড়ক, সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার জন্য দায়ীদের বিচারের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
এ দিকে আন্দোলন থামাতে সরকারি তরফে চাপ প্রয়োগের নীতি নেয়া হয়েছে। সিসি টিভির ফুটেজ দেখে দোষীদের ধরা হচ্ছে। এটি অস্বাভাবিক নয়। কারণ আইন কেউ নিজের হাতে তুলে নেবেন এটি কাম্য নয়; কিন্তু অস্বাভাবিক ব্যাপার হলো, বাস জ্বালানোর মূল কারণগুলো দূর করতে পরিবহন খাতে বিশেষ করে মালিক-শ্রমিকদের ওপর যে কঠোর আইন বলবৎ করা দরকার তার অনুপস্থিতি।
এতসব নৈরাজ্যের অবসান করতে না পারলেও শিক্ষার্থীদের লাল কার্ড দেখে সরকার মনে হচ্ছে একটু বিচলিত। খেলার নিয়মে লাল কার্ড দেখালে সেই খেলোয়াড়কে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হয়। সেটিই কি বিচলিত হওয়ার কারণ? সে জন্যই কি সরকার এখন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে রাজনৈতিক উসকানি খুঁজে পাচ্ছে? দেখা যাচ্ছে, লাল কার্ড আন্দোলনের নেত্রীকে বিশেষ রাজনৈতিক দলের নেত্রী হিসেবে প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চলছে। দেশে এখন রাজনীতির কোনো জায়গা নেই। সরকারি দল ছাড়া অন্য সবাই বলছেন তারা এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে রয়েছেন। এখন শিক্ষার্থীদেরও হুমকি দেয়া হচ্ছে। এভাবে সবার শ্বাস রোধ করে সুশাসন নিশ্চিত করা সম্ভব কি না ভেবে দেখা দরকার।
শিক্ষার্থীরা এখন সড়কে অব্যবস্থাপনার সাথে সংশ্লিষ্টদের ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনের এবং সড়কে নিহতদের প্রতীকী লাশ নিয়ে মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। এগুলো অভিনব; তবে মতপ্রকাশের বৈধ কর্মসূচি। কিন্তু সরকারের বিচলিত অবস্থা দেখে আমরাও বিচলিত বোধ করছি। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ফের হাতুড়ি বাহিনী চড়াও হয় কি না সেটিই আমাদের বিচলিত হওয়ার কারণ। ক্ষমতায় থাকলে সহনশীল হওয়া খুব জরুরি। গণমানুষের কণ্ঠ রোধ করে দমিয়ে দেয়া সুবিবেচনাপ্রসূত নয়।
সমস্যার একটি সার্বিক সমাধান হওয়া অতীব জরুরি। সড়কে নৈরাজ্য দূর করতে হবে, সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে, নিহতের ঘটনায় দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে এবং ছাত্রদের হাফ ভাড়া সারা দেশে সব গণপরিবহনে নিশ্চিত করতে হবে। এগুলো কোনো অন্যায় দাবি নয়। এর মধ্যে কোনো রাজনীতিও নেই। সড়কে নৈরাজ্য রোধ মূলত উন্নয়নের পূর্বশর্ত। সরকার যত দ্রুত এটা উপলব্ধি করবে ততই সবার মঙ্গল।


আরো সংবাদ



premium cement