২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`
আবাদ বাড়ছে, বীজের চাষ বাড়ছে না

ভেজাল পাটবীজের প্রতারণা ঠেকাতে হবে

-

‘স্বর্ণসূত্র’ বা ‘সোনালি আঁশ’ পাটের দাম বেড়ে যাওয়ায় তা আর ‘গলার ফাঁস’ নয়। তাই দেশের বহু স্থানে পাটের আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সে অনুপাতে পাটবীজের উৎপাদন বাংলাদেশে বাড়ছে না। তাই সুযোগ পেয়ে অসৎ কিছু লোক ভারতের ভেজাল বীজ বিক্রি করছেন। এ অবস্থায় প্রায়ই কৃষক হচ্ছেন প্রতারিত ও হয়রানির শিকার। এমন প্রেক্ষাপটে পাটের বীজ উৎপাদন বাড়াতে সরকার কৃষি পুনর্বাসন সহায়তা প্রকল্পের আওতায় কিছু উদ্যোগ নিলেও দেশের সর্বমোট চাহিদার মাত্র ২ শতাংশ এর মাধ্যমে পূরণ করা যায় বলে ধারণা করা হচ্ছে। তা হলে কি ৯৮ শতাংশ পাটবীজের জন্য আগের মতো ভারতের ওপর নির্ভর করতে হবে?
এ প্রশ্ন জেগেছে একটি সহযোগী দৈনিকের কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধির এক প্রতিবেদন পড়ে। তিনি জানান, কেশবপুর উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, বিগত মৌসুমে সেখানে চার হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে পাটের। আবার একই টার্গেট রেখেছে সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। এ জন্য দরকার সাড়ে ৩৩ টন বীজ। কিন্তু এর প্রায় পুরোটাই আনতে হয় পড়শি দেশ ভারত থেকে। এ পরনির্ভরতা হ্রাস করতে চলতি অর্থবছরে সরকার কেশবপুর উপজেলায় বিভিন্ন স্থানের দুই হেক্টর জমিতে পাটবীজের চাষ করেছে। তবে এতে মাত্র দুই টন পাটের বীজ উৎপন্ন হবে বলে জানা যায়। এ দিয়ে মোট চাহিদার কেবল ২ শতাংশ পূরণ করা সম্ভব। কৃষকদের পাট চাষের জন্য অবশিষ্ট সব পাটবীজই তখন ডিলাররা ভারত থেকে আমদানি করবেন। তদুপরি, অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিমভাবে বীজের অভাব সৃষ্টি করে চড়া মূল্যে তা বিক্রি করে থাকেন। এতে সাধারণ চাষিদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এ দিকে কোনো কোনো কৃষক বলেন, পাট আবাদ করা হলে অন্য ফসলের চেয়ে লাভ হয় মাত্র অর্ধেক। তাই পাটবীজ আর আবাদ করছেন না তারা। এ ছাড়া তারা গতবার ভারতের লাল জাতের বঙ্কিম পাট চাষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
সম্প্রতি সরকারি প্রকল্পের সরেজমিন পরিদর্শনকালে পাটবীজের ক্ষেত দেখার সময়ে কৃষকদের সাথে আলাপ হয়েছে। যেমন- কেশবপুরে মজিদপুর ব্লকের সাতজন কৃষক মিলে সাত বিঘার রবি-১ জাতের পাটবীজ আবাদ করেছেন। তা থেকে প্রতি শতকে চার কেজি করে বীজ পাওয়ার কথা। ডিলাররা এটি প্রতি কেজি ২০০ টাকায় কিনতে চান।
একজন কৃষি কর্মকর্তার বক্তব্য, ‘পাটচাষিদের সবাই যদি নিজ ক্ষেতে পর্যাপ্ত পাটবীজ উৎপাদন করে থাকেন, তাহলে আর ভারতীয় বীজের ওপর কাউকে নির্ভর করতে হয় না। তবে এর আবাদের দিকে আমাদের দেশের চাষিদের আগ্রহ কম। ফলে প্রত্যেক বছরই পাটের বীজের জন্য বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন বা বিএডিসির কাছে ধরনা দিতে হয়।’ আরেক কর্মকর্তা জানান, ‘পাটবীজ আবাদে আগ্রহ বাড়াতে কৃষি পুনর্বাসন সহায়তা প্রকল্পের মাধ্যমে প্লট প্রদর্শনী করা হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে এর বাম্পার ফলন আশা করা যায়।’
আমরা আশা করি, বাংলাদেশের গর্বের ধন পাটের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে এর বীজ দেশেই পর্যাপ্ত উৎপাদনের নিশ্চয়তা বিধান করা হবে। অন্যথায়, এর আমদানি সম্পূর্ণ বন্ধ করে, এ ক্ষেত্রে স্বনির্ভর হওয়া যাবে না। আর তখন কৃষকদের ভেজাল বীজ দিয়ে প্রতারণার সুযোগ পাবে অসৎ লোকেরা।


আরো সংবাদ



premium cement