২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আদমশুমারি আটকে যাচ্ছে

গাফিলতি খতিয়ে দেখুন
-

একটি কাজ সুচারুরূপে করার জন্য পরিকল্পনা করতে হয়। এ জন্য দরকার প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ। জাতীয় জীবনে প্রতিনিয়ত নানান পরিবর্তন আসছে। শুমারি করে সেসব পরিবর্তনের সঠিক হিসাব নিতে হয়। মানুষের যাপিত জীবন, কৃষি ও অর্থনীতি প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। এখন পরিবর্তনের অন্যতম একটি চালক হয়েছে জলবায়ু। অনেক বৈরী হয়ে উঠেছে এটি সারা বিশ্বে। সব মিলিয়ে মানুষের জীবন হয়ে উঠছে আগের থেকে বহুমুখী ও জটিল। জনকল্যাণে এসব ব্যাপারে নতুন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ অতীব গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এ কাজটি করে থাকে। তবে পরিবর্তনের গতির সাথে আমাদের বিবিএস যেন তাল মেলাতে পারছে না। আমরা প্রতি ১০ বছরে যেন একটি পূর্ণাঙ্গ আদমশুমারি আয়োজন করতে পারছি না।
আমাদের দেশে সর্বশেষ আদমশুমারি হয়েছিল ২০১১ সালে। এর আগে ১০ বছরের ব্যবধানে পরপর তিনবার এটি হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় এবার ২৩ জানুয়ারি থেকে ১ ফেব্রুয়ারি আদমশুমারি সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। করোনার কারণে নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয় ২৫ থেকে ৩১ অক্টোবর। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে আবারো তারিখ পরিবর্তন করে ২৪ থেকে ৩০ ডিসেম্বর সময় পুনর্নির্ধারণ করার প্রস্তাব রাখা হয়। সহযোগী একটি দৈনিকের খবরে জানা যাচ্ছে, এ বছর আদমশুমারি করা আর সম্ভব হচ্ছে না। অন্য দিকে শুমারি নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন করার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এই বছরের মধ্যে সেটি আর করতে না পারায় আইন মানা যাচ্ছে না। শুমারি করার জন্য ট্যাবলেট কম্পিউটার কেনা নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। সেটি সুরাহা করতে না পারায় নির্ধারিত সময়ে আর শুমারি সম্পন্ন করা গেল না।
এবারের ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২১’ ডিজিটাল তথ্য সংগ্রহ করার উদ্যোগ ছিল। এ জন্য তিন লাখ ৯৫ হাজার ট্যাব কেনার প্রস্তাব ছিল, যার দাম ধরা হয় ৫৪৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। ২৫ আগস্ট ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ট্যাব কেনার এ প্রস্তাব অনুমোদন দেয়নি। কমিটির সর্বশেষ বৈঠক ছিল ২৫ নভেম্বর। সেই বৈঠক অনুষ্ঠিত না হয়নি। ফলে নতুন কোনো সিদ্ধান্তও হয়নি। শুধু এ কারণেই চলতি বছরের মধ্যে শুমারি করা আর সম্ভব হচ্ছে না।
দেশের কৃষি, অর্থনীতি, উৎপাদন, শিক্ষিত জনসম্পদ ও শ্রমিকদের অবস্থাসহ জাতীয় পর্যায়ের সামগ্রিক অবস্থা জানার জন্য আদমশুমারি গুরুত্বপূর্ণ। জনমিতিতে পরিবর্তনের হার আগের চেয়ে দ্রুততর হয়েছে। সামগ্রিক মানুষের অবস্থার পরিবর্তনের সাথে তাল মেলাতে হলে শুমারির আয়োজনও এখন আগের চেয়ে কম সময়ের মধ্যে, এমনকি প্রতি পাঁচ বছর পর পর করা দরকার বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। শুধু ট্যাব সংগ্রহ করতে না পারায় আদমশুমারি করা যাবে না এ এক অবিশ্বাস্য ঘটনা বললেও কম বলা হয়। এ ধরনের বড় কেনাকাটার কাজ সময়মতো কেন সম্পন্ন করা হয়নি সেই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। সরকারি কেনাকাটায় ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়। সেই ক্ষেত্রে শুমারির জন্য ট্যাব কেনাকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট গুরুত্ব ও সতর্কতার সাথে গ্রহণ করেনি বলেই মনে হচ্ছে। দায়িত্ববানদের মধ্যে যারা এ গাফিলতি করেছে তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাও গুরুত্বপূর্ণ।
করোনা-পরবর্তী সময়ে সারা বিশ্বের জনমিতিতে ওলটপালট হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে আমাদের দেশও এর বাইরে নয়। বিশেষ করে মানুষের আয়রোজগার ও উৎপাদন পাইপলাইন পুরোপুরি বদলে গেছে। এ অবস্থায় জাতীয় পরিকল্পনা গ্রহণ এমনকি বাজেট প্রণয়নের জন্যও হালনাগাদ তথ্য-উপাত্ত প্রয়োজন। যত দ্রুততার সাথে আমরা হালনাগাদ তথ্য-উপাত্ত পাবো তত দ্রুততার সাথে আমরা জাতীয় কার্যক্রম বেগবান করতে পারব। আমরা আশা করব, জনশুমারি আয়োজনে ট্যাব কেনাকাটাসহ অন্যান্য সব কার্যক্রম অত্যন্ত স্বচ্ছতার সাথে গ্রহণ করা হবে। শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ আদমশুমারি করার বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হোক।


আরো সংবাদ



premium cement