১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বঙ্গোপসাগরে আবার ডাকাতি বেড়েছে

মৎস্যজীবীদের আতঙ্ক দূর করুন

-

পরপর চার বছর ধরে বঙ্গোপসাগর জলদস্যুর তাণ্ডব থেকে মুক্ত ছিল; কিন্তু ডাকাতরা আবার বেপরোয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবার মাত্র পাঁচ দিনে কমপক্ষে ১৫টি ট্রলারে তারা হামলা চালিয়ে ডাকাতির পাশাপাশি পাঁচ জেলেকে অপহরণ করে ১৫ লাখ টাকা ‘মুক্তিপণ’ দেয়ার দাবি জানায়। এ সময় দস্যুরা একজন জেলেকে গুলিতে হত্যা এবং শতাধিক জেলেকে পিটিয়ে আহত করেছে। ফলে এখন উপকূলের মৎস্যজীবীদের মধ্যে বিষম আতঙ্ক। আড়তদার, ট্রলার শ্রমিক এবং মৎস্যজীবীদের নেতারাসমেত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিযোগ, তবুও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ‘মাথাব্যথা নেই’। নয়া দিগন্তের বরগুনা প্রতিনিধির এক প্রতিবেদনে এ তথ্যগুলো জানা গেছে।
অভিযোগে প্রকাশ, ২০ নভেম্বর তিনজন এবং পরদিনই দুই জেলে দস্যুদের হাতে অপহৃত হয়েছেন। এর আগে ১৬ নভেম্বর তারা পাথরঘাটায় এক জেলেকে হত্যা করে। এ ব্যাপারে ২১ নভেম্বর দেশের বৃহত্তম মৎস্যবন্দর, দক্ষিণাঞ্চলের পাথরঘাটা মৎস্য ঘাটে ট্রলারের মালিক, জেলে, আড়তদার, পাইকার এবং ট্রলার শ্রমিকদের সংগঠনগুলোর নেতাদের সাথে থানা পুলিশ জরুরি বৈঠকে মিলিত হয়। তখন মৎস্য ব্যবসায়ে জড়িত ব্যক্তিরা অভিযোগ করেন, ‘এবার সন্ত্রাসের পর আজ পর্যন্ত সরকারের আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কোনো পদক্ষেপ এ বিষয়ে চোখে পড়েনি। তাই সংশ্লিষ্টরা বিক্ষুব্ধ।’
মৎস্যজীবীদের অভিযোগ, ১৬ নভেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে জলদস্যুদের সন্ত্রাসের আবার সূচনা। অথচ সাগরে কোস্টগার্ডের টহল চোখে পড়েনি। আরো বলা হয়, ‘এ ব্যাপারে কাস্টগার্ডের পাথরঘাটা স্টেশনকে অবহিত করা হলে তারা বলেন, এসব ঘটনা মংলা স্টেশনের দিকে ঘটেছে। তাদের এ ব্যাপারে জানান।’ তবে মংলায় তাদের লোকজন বলেছেন, ‘ভোলায় কোস্টগার্ডের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিন।’ এ দিকে বঙ্গোপসাগরে ডাকাতির সুষ্ঠু সমাধান হচ্ছে না। ফলে জেলেরা রয়েছেন সঙ্কটে ও আতঙ্কে। এতে মৎস্য আহরণ ব্যাপকভাবে বিঘিœত হচ্ছে।
জেলেরা দাবি করেন, সাগরে আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষের জাহাজ কিংবা হেলিকপ্টার টহল দিলে অন্তত পাঁচ জেলেকে মাত্র পাঁচ দিনে অপহরণ করা যেত না। দস্যুবাহিনী তাদের মুক্তির জন্য ১৫ লাখ টাকা দাবি করেছে। তবুও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা লক্ষ করা যায়নি। এমনকি, এ দেশের পানিসীমায় অনুপ্রবেশ করে ভারতের জেলেরা মাছ ধরে নিয়ে গেলেও আমাদের প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ নেই এর মোকাবেলায়।
অপর দিকে পাথরঘাটায় কোস্টগার্ডের একজন অধিনায়ক বলেন, স্পিডবোট ব্যতীত আমাদের বাহন না থাকায় গভীর সমুদ্রে অভিযানের জন্যও যাওয়া যায় না, জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি বলেছেন, বর্তমান আইজিপি র্যাব প্রধান যখন ছিলেন, সে সময় সুন্দরবনে বারবার অভিযান চালিয়ে দস্যুদের আস্তানা ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। তারপর এ ক্ষেত্রে আর অভিযান দেখা যায়নি। অবশ্য স্থানীয় পুলিশ কর্তৃপক্ষ বলেছে, পুলিশ বাহিনীর বর্তমান প্রধানের আদেশেই মৎস্যজীবীদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করা হয়েছে। তিনি সর্বক্ষণ এ প্রয়োজনীয় তথ্য নিচ্ছেন জলদস্যুদের বিষয়ে। র্যাব-এর কোম্পানি অধিনায়ক বলেন, ‘র্যাব অভিযান চালিয়ে সাগরকে দস্যুমুক্ত করেছে; কিন্তু তারা আবার মাথাচাড়া দেয়ার অভিযোগ এসেছে। আমরাও জলদস্যুদের দমনে সক্রিয় রয়েছি।’ অন্য দিকে, নয়া দিগন্তের আলোচ্য প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কোস্টগার্ডের ভোলা কর্তৃপক্ষের কেউ সাংবাদিকের ফোন রিসিভ করেননি।
মৎস্যজীবীদের ভীতি ও উদ্বেগ দূর করার যাবতীয় নিশ্চয়তা অবিলম্বে প্রদান করা হোক, এটাই সবার সাথে আমাদের কামনা।


আরো সংবাদ



premium cement