২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
গ্রামীণ অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে

চাই সহায়ক কর্মসূচি

-

আমাদের অর্থনীতির মূল শক্তি কৃষি। গত দুই বছরে কোভিড-১৯ মহামারীতে জাতীয় অর্থনীতি বড় রকমের ধাক্কা খেয়েছে। কিন্তু করোনা নিয়ন্ত্রণে আসায় বাংলাদেশের মানুষ সাহস ও কর্মস্পৃহা নিয়ে পরিস্থিতি সামলে নেয়ার চেষ্টা করেছে। তাতে সাফল্যও এসেছে অনেকটা। দেখা যাচ্ছে, আমাদের গ্রামীণ অর্থনৈতিক কার্যক্রম সেভাবে ধসে পড়েনি। এর কারণ গ্রামীণ অর্থনীতিতে নানা রকমের বৈচিত্র্য এনেছেন এর সাথে সংশ্লিষ্টরা। গতানুগতিক কৃষিকাজের বাইরে বিভিন্ন উপ খাতে তারা অবদান রাখছেন। মাছচাষ, ডেইরি ও পোলট্রি শিল্প, বছরব্যাপী সবজি ও ফলের চাষ, এমনকি ফুল চাষেরও প্রসার ঘটেছে। ফলে দেশে কর্মসংস্থান যেমন বেড়েছে তেমনি গ্রামীণ অর্থনীতিও বেশ চাঙ্গা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৃষির বহুমুখীকরণের মাধ্যমেই অর্থনীতি সচল রাখা সম্ভব হয়েছে।
মহামারীর সময় চাকরি হারিয়ে অনেকে শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন। তারা গ্রামে বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন। হাঁস-মুরগি পালন, গরু-ছাগল, ভেড়া, টার্কি ইত্যাদি পালন এবং বাড়ির আঙ্গিনায় ফলমূল, শাকসবজি ইত্যাদি চাষের মাধ্যমে আয় করে অর্থনীতিতে সক্রিয় অবদান রাখছেন। এ সময়ে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষার্থী এসব উদ্যোগে শামিল হয়েছেন। গ্রামের নারীরাও এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, দেশের অর্থনীতি সতেজ রাখতে কৃষির বহুমুখীকরণ ও বাণিজ্যিকীকরণ ছাড়া উপায় নেই।
সবার জানা, মাছ চাষে বাংলাদেশ সোনালি অধ্যায়ের সূচনা করেছে। মাছের উৎপাদনে সর্বকালের রেকর্ড ভেঙেছে। জাতিসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থাও (এফএও) এর স্বীকৃতি দিয়েছে। পোলট্রি শিল্পও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বিপুল জনগোষ্ঠীর পুষ্টিচাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচনে এ খাতের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। দেশের জিডিপিতে পোলট্রি খাতের অবদান ২ দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং ২০ লাখেরও বেশি মানুষ এই খাতে নিয়োজিত।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হলো গবাদিপশু পালন। কয়েক বছর আগেও দেশের গোশতের চাহিদার বড় অংশ মিটত প্রতিবেশী দুই দেশÑ ভারত ও মিয়ানমার থেকে গরু আমদানি করে। এখন দেশের গবাদিপশুতেই গোশতের চাহিদা পূরণ হচ্ছে। ফল উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের এখন উদাহরণ হয়ে উঠেছে। বিশ্বে ফলের উৎপাদন বৃদ্ধির সর্বোচ্চ হার এখন বাংলাদেশের। আর মৌসুমি ফল উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকায় রয়েছি আমরা। দেশে ৭২ প্রজাতির ফলের চাষ হচ্ছে। আগে হতো ৫৬ প্রজাতির। এফএওর হিসাবে, গত ১৮ বছর ধরে বাংলাদেশে সাড়ে ১১ শতাংশ হারে ফল উৎপাদন বাড়ছে। চলতি বছর এক কোটি ২১ লাখ টন ফল উৎপাদিত হয়েছে। ১০ বছর আগের তুলনায় উৎপাদন বেড়েছে ১৮ লাখ টন।
দেশের মোট শ্রমশক্তির ৮০ শতাংশকে কৃষিতে নিয়োজিত করলে দারিদ্র্য ঘোচানো অসম্ভব নয়। আমাদের কৃষি জমির অনেকাংশই পতিত অবস্থায় আছে। শুধু তাই নয়, কৃষি শ্রমশক্তির বিরাট একটি অংশ কৃষিকাজ বাদ দিয়ে শিল্প-কারখানা ও অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত রয়েছে। বর্তমানে দেশের মোট শ্রমশক্তির ৪০ দশমিক ৬ শতাংশ কৃষি খাতে নিয়োজিত। এ ক্ষেত্রে কৃষির বহুমুখীকরণ ও বাণিজ্যিকীকরণের মাধ্যমে শ্রমশক্তির আরো বৃহদাংশকে কৃষিতে নিয়োজিত করার সুযোগ আছে। শ্রমশক্তির ৮০ শতাংশ কৃষিতে নিয়োজিত করা সম্ভব বলে অনেকে মনে করেন। এটি করা গেলে দেশে সত্যিকারের কৃষিবিপ্লবের সূচনা হবে। আমরা স্বনির্ভর হবো। সে ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের জন্য যুবকদের বিদেশমুখী হওয়ার প্রবণতা আর থাকবে না। জাতি হিসেবে মাথা তুলে গৌরবের সাথে বাঁচতে হলে এমনটাই হওয়া জরুরি।
এ জন্য দরকার যথাযথ নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন। প্রয়োজন বেকার তরুণদের কৃষিকাজে সম্পৃক্ত করা। কৃষির প্রতিটি খাতে ও উপ খাতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকতে হবে, যাতে তরুণরা এবং কৃষকরা প্রশিক্ষণ নিয়ে সংশ্লিষ্ট খাতে সফলভাবে উদ্যোগ নিতে সক্ষম হন। এ ছাড়া করোনাকালীন কৃষি খাতে প্রণোদনার অর্থ প্রান্তিক উদ্যোক্তাদের কাছে যথাযথভাবে পৌঁছানোও একান্ত কর্তব্য।


আরো সংবাদ



premium cement