২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সীমান্তে দুই বাংলাদেশী হত্যা

বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে

-

সিলেট সীমান্তে গত বুধবার গুলি করে দুই বাংলাদেশীকে হত্যা করা হয়েছে। বরাবরের মতো তাদের লাশ নো-ম্যানস ল্যান্ডে স্থানীয়রা দেখতে পান। পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতের কোনো এক সময় তাদের গুলি করে হত্যা করা হয়। ভারতের সাথে বাংলাদেশের সীমান্ত একটি কুখ্যাতি পেয়েছে একতরফা প্রতিবেশীদের হত্যার জন্য। এমন হত্যাকাণ্ড চালানোর নজির পৃথিবীর অন্য কোনো সীমান্তে নেই। ভারত সরকার প্রচলিত রীতিনীতি এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি কোনো ধরনের শ্রদ্ধা প্রদর্শন করছে না। অথচ সীমান্ত হত্যা নিয়ে বিচার পাওয়ার অধিকার বাংলাদেশের মানুষের রয়েছে।
সীমান্তবর্তী কানাইঘাটের এলাগুল গ্রামের আবদুুল লতিফের ছেলে ২৫ বছর বয়সী আসকর আলী ও একই গ্রামের আবদুুল মান্নানের ছেলে ২২ বছর বয়সী আরিফ হোসেনকে হত্যা করা হয়েছে। তারা বাড়ি থেকে বের হয়ে স্থানীয় লালবাজারে যান। এরপর তাদের আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরে সীমান্তে তাদের গুলিবিদ্ধ লাশ মিলেছে। এ জোড়া হত্যাকাণ্ডের কাহিনীটি আগের অন্যান্য হত্যাকাণ্ডের মতোই ঘটানো হয়েছে। প্রত্যেকটি ঘটনায় বাংলাদেশী নাগরিকের সম্ভাবনাময় তরুণ প্রাণ দুঃখজনকভাবে হরণ হচ্ছে। একটি প্রাণের সাথে আরো জড়িয়ে রয়েছে তাদের ওপর নির্ভরশীল পরিবারের বাকি সদস্যের। একটি মানুষকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা মানে, পুরো মানবতাকে হত্যা করা। কিন্তু এই রোদন বৃথা যাচ্ছে।
মানবাধিকার সংস্থা অধিকার-এর হিসাবে, ২০২০ সালে ৫১ জন বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে বিএসএফ। সীমান্তে বাংলাদেশীদের গুরুতর নির্যাতন, লাঞ্ছনা ও অপমানের ঘটনাও নিয়মিত তারা করছে। বিএসএফ হত্যাকাণ্ড ছাড়াও এমন সব আচরণ প্রদর্শন করে যা অবমাননাকর। আটক করার পর একজন বিদেশী নাগরিকের স্বীকৃত অধিকারকে তারা সম্মান প্রদর্শন করে না। বিকৃত কায়দায় তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়Ñ যাতে ঘৃণা ও হিংসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। একটি বন্ধুপ্রতিম বৃহৎ দেশের কাছ থেকে এমনটা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত হলেও কয়েক দশক ধরে বিএসএফ তার আচরণের কোনো পরিবর্তন করছে না।
বিএসএফের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘দুষ্কৃৃতকারীদের’ হত্যা করা হচ্ছে। মাদক, গরু ও আরো বিভিন্ন অবৈধ চোরাচালানের অভিযোগ আনা হয়। এ ছাড়া বলা হয়, বিএসএফের ওপর আক্রমণের জেরে গুলির ঘটনা ঘটে। বাস্তবতা হচ্ছেÑ চোরাচালান বিষয়ে খবর জানা যাচ্ছে, এগুলোর সাথে খোদ বিএসএফ সম্পৃক্ত। একজন চোরাকারবারির বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করার সুযোগ রয়েছে। সেটি না করে সরাসরি বুকে গুলি চালিয়ে হত্যা করার অধিকার কিভাবে তারা পায়? অন্য দিকে, বিএসএফের ওপর আক্রমণের বিষয়টি কোনোভাবেই ধোপে টেকে না। কারণ দেশটির সাথে বৈরী সম্পর্ক রয়েছে পাকিস্তান ও চীনের। ওই সব দেশের নাগরিকরা হিসাব মতে, বিএসএফের ওপর আরো বেশি চড়াও হওয়ার কথা। বিএসএফ পাকিস্তানি ও চীনের একজন নাগরিককে গুলি করে হত্যা করছে, এমন দেখা যায় না।
রাষ্ট্রীয় আইনের আওতায় হত্যাকারী যেই হোক তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে। ভারত ও বাংলাদেশে খুন হওয়া নাগরিকদের পরিবার বিচার পাচ্ছে। কিন্তু সীমান্তে হত্যার শিকার হওয়া বাংলাদেশী নাগরিকদের পরিবার বিচার পাচ্ছে না। সবচেয়ে নৃশংস ও আলোচিত ফেলানি হত্যার বিচারটি সারা বিশ্ব দেখেছে। ভারতে অনুষ্ঠিত ওই সব নিয়ন্ত্রিত বিচারে অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি। ভিন দেশের এক কিশোরী হত্যা করে বিএসএফ সদস্য তাদের নিজেদের আদালতে নিন্দিত ও তিরস্কৃত হয়নি। এ অবস্থায় সীমান্ত হত্যা বন্ধ হওয়ার কোনো কারণ নেই। একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের উচিত ভারতের একরোখা অবস্থানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। বাংলাদেশ সীমান্তে মানুষ হত্যার জন্য বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার সংগঠন বিএসএফ ও তার বাহিনীর দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement