২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
দুদকের এখতিয়ার নিয়ে মতলবি প্রশ্ন

মানিলন্ডারিং তদন্তে দায়িত্ব দেয়া উচিতv

-

দেশে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অর্থপাচারের ঘটনা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে। জালিয়াতি, প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কোটি কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা ঘটছে একের পর এক। ব্যাংকঋণের নামে করা হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকার তহবিল তছরুপ। সরকারি প্রতিটি দফতরের কেনাকাটায় চলছে ‘পুকুর নয় সাগরচুরি’। আরো নানা প্রক্রিয়ায় অব্যাহতভাবে দুর্নীতির বিস্তার ঘটে চলেছে। আর প্রতারণা, দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত এসব অর্থ সংশ্লিষ্টরা পাচার করছেন বিদেশে। এসব ঘটনার যেটুকু গণমাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে সেটুকুই উদ্বিগ্ন হতে যথেষ্ট। মানুষ চায়, দুর্নীতি ও প্রতারণার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক। কিন্তু তার কোনো আলামত দেখা যাচ্ছে না।
দিন দিন দুর্নীতির যে বিপুল বিস্তার ঘটছে; তাতে এর বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্সের ঘোষণা নিছক কথার কথাই থেকে যাচ্ছে। বাস্তবে সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়। বরং দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যক্রমে অদৃশ্য পিছুটান যেন অনুভূত হচ্ছে। সম্প্রতি অনলাইন পণ্য বিক্রির বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ই-ভ্যালির বিরুদ্ধে চলমান ‘অর্থ পাচার’-এর অভিযোগ অনুসন্ধান থেকে পিছু হটে দুদক। অনুসন্ধানটি পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি)। ‘ইভ্যালি’র সাথে সংশ্লিষ্ট কারো বিরুদ্ধে ‘অবৈধ সম্পদ অর্জন’-এর অভিযোগও দুদক আনেনি। এর কারণ হিসেবে দুদকের ব্যাখ্যা হলো, বেসরকারি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগ তদন্ত বা অনুসন্ধানের এখতিয়ার তার নেই।
শুধু ই-ভ্যালি নয়, অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বা বেসরকারি ব্যক্তি পর্যায়ে সংঘটিত অর্থপাচার সংক্রান্ত আলোচিত বেশ কিছু অভিযোগ দুদক অনুসন্ধান করে। ক্যাসিনো-কাণ্ডে গ্রেফতার তখনকার যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অন্তত চারটি মামলা দায়ের করে। এর মধ্যে কয়েকটি মামলায় সিআইডি চার্জশিটও দাখিল করেছে। অন্য দিকে, দুদকও খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে। চার্জশিটে তার বিরুদ্ধে ৪২ কোটি ৭৫ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। একইসাথে অবৈধভাবে অর্জিত ৮ কোটি ৭৪ লাখ ৩৩ হাজার টাকা মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে পাচারের অভিযোগ আনা হয়।
২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বর মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের সংশোধনীতে বলা হয়, ব্যক্তিপর্যায়ে প্রতারণা, আত্মসাৎ ও জালিয়াতির মামলা তদন্ত করবে পুলিশ। আর সরকারি সম্পত্তি-সংক্রান্ত প্রতারণা, সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যাংক কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনকালে প্রতারণা ও জালিয়াতির মামলা তদন্ত করবে দুদক। সংশোধিত আইনে অর্থপাচার সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে কাজ করার এখতিয়ার দেয়া হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরকে। ওই সংশোধনীর উদাহরণ দিয়ে পর্দার আড়ালে একটি মহল প্রশ্ন তোলার চেষ্টা করছে, দুদক কিভাবে বেসরকারি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগের তদন্ত করছে?
আমাদের আশঙ্কা এখানেই যে, বেসরকারি পর্যায়ে যেসব রথি-মহারথির নাম দুর্নীতি প্রতারণা ও মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে উঠে এসেছে অপকৌশলে তাদের পিঠ বাঁচানোর কোনো অদৃশ্য প্রক্রিয়ায় এসব প্রশ্ন তোলা হচ্ছে কি না। আমরা বলতে চাই, আইনের প্রয়োগ সমভাবে সবার ক্ষেত্রে প্রয়োগ হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। প্রয়োজনে আইনটি ফের সংশোধন করে দুদককে তার কার্যক্রম চালানোর সুযোগ করে দিতে হবে।
সরকার দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূলে আন্তরিক হলে দুদককে স্বাধীনভাবে পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে সরকারি-বেসরকারি সব পর্যায়ে তদন্ত ও আইনি পদক্ষেপ নেয়ার এখতিয়ার দিতে হবে। এ মুহূর্তে দেশবাসী তা-ই আশা করেন। দুর্নীতির যে অবাধ জোয়ারে দেশ ও জাতি ভেসে যাচ্ছে তা এভাবে চলতে দেয়া কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়।


আরো সংবাদ



premium cement