২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা

গণতন্ত্রকামীদের প্রতি সমর্থন কাম্য

-

মিয়ানমারের সামরিক জান্তার ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধির ফল মিলছে। আঞ্চলিক সংস্থা আসিয়ান-এর শীর্ষ সম্মেলনে জান্তাপ্রধানের উপস্থিতির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির পর সেই চাপের দৃশ্যমান ফল পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে জান্তা সরকার দেশটির আটক পাঁচ সহস্রাধিক বন্দীকে মুক্তি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। একই ধরনের কার্যকর চাপ প্রয়োগ করলে রোহিঙ্গা সমস্যার সুরাহা বহু আগে হয়ে যেত। দুর্ভাগ্য হচ্ছে, মিয়ানমারে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যত না আন্তরিক; এর কানাকড়ি আন্তরিকতা দেখাতে পারেনি উৎখাত হওয়া রোহিঙ্গাদের প্রতি। কার্যত একটি নিপীড়িত জাতি হিসেবে তাদের পাশে কেউ নেই। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশও নিজের পক্ষে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জোরালো সমর্থন আনতে পারেনি। তবে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি আরো গুরুতর অবনতি হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশকে অবশ্যই দেশটির বর্তমান পরিস্থিতির ওপর তীক্ষè নজর রাখতে হবে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও নিজেদের ক্ষতি পূরণের লক্ষ্যে সুযোগ বুঝে অগ্রসর হতে হবে।
মিয়ানমার-বিষয়ক জাতিসঙ্ঘের বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার টিম অ্যান্ড্রুজ গত শুক্রবার দেশটিতে নতুন করে বড় ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এমন আশঙ্কা প্রকাশের কারণÑ জান্তা সরকার উত্তরাঞ্চলে বড় ধরনের সামরিক অভিযান পরিচালনার ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে। একে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত সামরিক বাহিনীর অভিযানগুলোর সাথে তুলনা করা হয়েছে। চলতি মাসে সেগাইন ও মাগে অঞ্চল এবং কায়াহ প্রদেশে সেনাবাহিনীর ওপর হামলা হয়েছে। তাতে ৮৮ সেনাসদস্য নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সরকারবিরোধী ও বিদ্রোহীদের দমাতে জান্তা সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে। উত্তরাঞ্চলীয় কাচিন ও সেগাইন এলাকায় ভারী অস্ত্রশস্ত্র ও সেনা মোতায়েন করেছে। অং সাং সু চির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) দলের জাতীয় ঐক্য সরকার ঘোষণার পর জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। দলটি সর্বাত্মক প্রতিরোধ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। এ জন্য অস্ত্রের ভাষায় জবাব দেয়ার নীতি গ্রহণ করেছে।
প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঐক্য সরকার গণতন্ত্রকামীদের জন্য সামরিক প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গড়ে তুলেছে। ওই সব ক্যাম্পে প্রতিবাদীরা যোগ দিচ্ছেন। সামরিক ক্যাম্পে তরুণদের প্রশিক্ষণ নেয়ার ছবিও প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া সারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্রোহী ও স্থানীয় স্বাধীনতাকামীদের তৎপরতা আগে থেকে ছিল। তারা সাধারণ নাগরিকদের এ প্রচেষ্টাকে বেগবান করছে। সে জন্য সেনাবাহিনীর ওপর আক্রমণের ঘটনা বাড়ছে। অ্যান্ড্রুজ জানিয়েছেন, মিয়ানমারে ব্যাপক নৃশংস ঘটনা ঘটতে পারে। সে জন্য প্রস্তুতি নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন তিনি। সামরিক বাহিনী দমন-পীড়নের মাধ্যমে দেশটির সবার টুঁটি চেপে ধরেছে। সব জাতিগোষ্ঠীকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। সংবাদমাধ্যমও নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। তবে বাস্তবতা হচ্ছেÑ মানুষের হাতে হাতে অত্যাধুনিক মোবাইল ফোনসেট থাকায় তারা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে সংগঠিত হচ্ছেন। এ দিকে জাতিসঙ্ঘের মিয়ানমার-বিষয়ক বিশেষ দূত ক্রিস্টিনা স্কোরানের বার্গেনার দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কা করছেন।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জান্তা নতুন করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পর এখন পর্যন্ত এক হাজার ১০০ মানুষ হত্যার শিকার হয়েছেন। গ্রেফতার করা হয়েছে আট হাজারের বেশি। প্রতিবেশী ও বন্ধুপ্রতিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ মিয়ানমারের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের পক্ষে। তাদের সহযোগিতা করাই আমাদের কাম্য। এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণÑ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে পূর্ণ নাগরিক মর্যাদায় দেশটিতে ফেরত পাঠানো। এ ক্ষেত্রে লক্ষণীয় ব্যাপার ছিলÑ দেশটির গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর রোহিঙ্গা নীতি। সু চি ও তার দল রোহিঙ্গাদের প্রতি সামরিক বাহিনীর নীতিকে সমর্থন করেছে। সামরিক বাহিনীই এখন দেশটির গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। এমনকি শসস্ত্রপন্থায় দমাতে চায়। যেসব খবর পাওয়া যাচ্ছে তাতে বোঝা যাচ্ছে, সামরিক সরকার দেশের অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধেও রোহিঙ্গা নীতি গ্রহণ করতে যাচ্ছে। গণতান্ত্রিক শক্তিকে দমাতে শসস্ত্র অভিযানে নামছে। নতুন পরিস্থিতিতে আমাদেরও পথ খুঁজতে হবে। আশা করা যায়, সেখানে একদিন জান্তার অবসান ঘটবে। সেই সময় জয়ী নতুন রাজনৈতিক শক্তি যাতে রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নেয় এখন থেকেই তার প্রস্তুতি ও কার্যক্রম নিতে হবে আমাদের।


আরো সংবাদ



premium cement