২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
গুলশান-বনানী ও বারিধারা লেক প্রকল্প

এক যুগেও শুরু হয়নি, ব্যয় বাড়ছে ১২ গুণ

-

রাজধানী শহর ঢাকায় বৈকালিক অবকাশ যাপনের মতো জায়গা খুবই কম। ক’দিন আগেও একমাত্র রমনা পার্ক ছাড়া আর কোনো স্থান ছিল না যেখানে প্রাকৃতিক পরিবেশে একটু শ্বাস ফেলতে পারেন রাজধানীবাসী। অথচ কর্মব্যস্ত জীবনে একটু স্বস্তির ছোঁয়া পাওয়ার আকুতি প্রতিটি মানুষেরই আছে। মানুষের সেই অতি প্রয়োজনীয় চাহিদার কিছুটা পূরণ করছে সম্প্রতি সম্পন্ন হাতিরঝিল। এতে নগরবাসীর প্রত্যাশাও বেড়েছে যথেষ্ট; কিন্তু বিপুলসংখ্যক নগরবাসীর জন্য রমনা পার্ক বা হাতিরঝিল একেবারেই অপ্রতুল।
এই পরিপ্রেক্ষিতেই রাজধানীর গুলশান-বনানী ও বারিধারায় বিশ্বমানের লেক গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয় সরকার। কিন্তু সেই প্রকল্পের যে দশা; তা কবে নাগাদ সম্পন্ন হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যাচ্ছে, দেড় যুগেরও বেশি সময় আগে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে এ লেক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরুর কথা ছিল। শেষ হওয়ার সময়সীমা ছিল ২০১৩ সালে। খবরে বলা হয়, প্রকল্প এলাকায় লেকের জমি অধিগ্রহণ, খনন ও উন্নয়ন, ওয়াকওয়ে, কজওয়ে, ড্রাইভওয়ে নির্মাণ দেখিয়ে ৪১০ কোটি ২৫ লাখ ৫২ হাজার টাকা তুলে নেয়া হয়েছে; কিন্তু এসব কাজের কোনোটিই করা হয়নি। জমি অধিগ্রহণ করলেও যাদের জমি নেয়া হয়েছে তাদের এক টাকাও পরিশোধ করা হয়নি। এরই মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে চারবার। তার পরও প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয়নি। সর্বশেষ পঞ্চমবারের মতো প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
খবরে সংশ্লিষ্ট নানা সূত্রের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, প্রকল্পের সর্বশেষ সংশোধনীতে এর ব্যয় বাড়ছে প্রায় ১২ গুণ। প্রাথমিকভাবে যেখানে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪১০ কোটি ২৫ লাখ ৫২ হাজার টাকা। এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৮৮৬ কোটি ১১ লাখ ৩২ হাজার টাকা। শতকরা হিসাবে ব্যয় বৃদ্ধির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় দুই হাজার শতাংশ, যা অবিশ্বাস্য রেকর্ড। প্রকল্পের সংশোধিত নকশাসহ ব্যয়বৃদ্ধির প্রস্তাব এখন পরিকল্পনা কমিশনে। সেখান থেকে একনেক সভায় পাঠানো হবে।
প্রকল্প এলাকায় যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে তারা বলছেন, প্রকল্পের সাবেক পরিচালকের গাফিলতির কারণে লেক উন্নয়ন প্রকল্পের বেহাল দশা হয়েছে। অদক্ষতা ও গাফিলতির অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। প্রকল্পের সাবেক পরিচালক আমিনুর রহমান একাই ছিলেন রাজউকের তিন-চারটি প্রকল্পের পরিচালক। তিনি একটি প্রকল্পের তিন ভাগ টাকা তুলে নিয়ে প্রকল্পের কাজ শেষ না করে অন্য প্রকল্পের কাজ শুরু করেন।
সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে এমন অবস্থার খবর নতুন নয়। প্রতিটি প্রকল্পেই অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে। কোনো প্রকল্পই নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে না পারা চলতি সময়ের এক সাধারণ বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে। সেই সাথে ব্যয় বিপুলভাবে বাড়ানোর প্রবণতা লক্ষণীয়। সে দিক থেকে রাজধানীর গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উন্নয়ন প্রকল্প নিঃসন্দেহে শীর্ষে অবস্থান করবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে প্রকল্পের তেমন অগ্রগতি দেখতে পাননি। অথচ কাজ না করে, লেকের জমি অধিগ্রহণ, খনন ও উন্নয়ন, ওয়াকওয়ে, কজওয়ে, ড্রাইভওয়ে ইত্যাদি নির্মাণ ব্যয় দেখিয়ে ৪১ কোটি টাকা প্রকল্পের নামে তুলে নেয়া হয়েছে। একটি প্রকল্প চূড়ান্ত করে বাস্তবায়ন কাজ শুরু করতে এক যুগ সময় পেরিয়ে যাবে এটা কিভাবে সম্ভব? আমাদের কাছে তা বোধগম্য নয়। সরকারি সংস্থাগুলোর কাজকর্ম সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় চলছে কি না এমন সংশয় জাগে এই পরিস্থিতি দেখে।
একটি আধুনিক শহরে মানুষের বৈকালিক অবকাশ যাপন, বিনোদন বা শ্বাস গ্রহণে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পার্ক বা গাছপালা, জলাধারসমৃদ্ধ প্রাকৃতিক কাঠামো থাকা জরুরি। এসব পার্ককে বলা হয় নগরীর ফুসফুস। ঢাকা নগরীতে সেটি নেই বললেই চলে। এ অবস্থায় একটি প্রকল্প নিয়ে যুগের পর যুগ কাটিয়ে দেয়া কোনোভাবেই কাক্সিক্ষত নয়। রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম এগিয়ে নেয়ার এ দীর্ঘসূত্রতাও অগ্রহণযোগ্য।


আরো সংবাদ



premium cement