২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
রোহিঙ্গাশিবিরে ফের ভয়াবহ হামলা

প্রত্যাবাসনবিরোধীদের কড়া নজরদারি চাই

-

রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের পক্ষে কাজ করা নেতা মুহিবুল্লাহকে গত ২৯ সেপ্টেম্বর হত্যা করার পর এক মাস যেতে না যেতেই আশ্রয়শিবিরে ফের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটল। এ ঘটনা চরম উদ্বেগের। বারবার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এমন সংঘর্ষ অশুভ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বাধাগ্রস্ত করতেই একাধিক গোষ্ঠী এর পেছনে জড়িত। নানাভাবে তারা ক্যাম্পগুলোতে প্রচুর অস্ত্র ঢুকিয়েছে। এটি দেশের নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক শান্তির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা ক্রমেই বাড়ছে। নয়া দিগন্তসহ গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশ, কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গত শুক্রবার ভোরে এফডিএমএন ক্যাম্প-১৮ এইচ-৫২ ব্লকে দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল ইসলামিয়াহ মাদরাসায় সন্ত্রাসী হামলা চালায় দুষ্কৃতকারীরা। এতে ওই মাদরাসার সাতজন শিক্ষক-শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে অস্ত্রসহ এখন পর্যন্ত একজনকে আটক করেছে পুলিশ। লক্ষণীয়, ২০১৭ সাল থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে গোলাগুলি ও হত্যার ঘটনা ঘটছে। একটি বিষয় স্পষ্ট, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে প্রচুর অস্ত্র ঢুকেছে। পাশাপাশি কিছু সন্ত্রাসী সংগঠনের উদ্ভব হয়েছে। প্রশ্ন হলোÑ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে কিভাবে এত অস্ত্র ঢুকল?
রোহিঙ্গা ইস্যুটি অত্যন্ত সংবেদনশীল। এটি আমাদের নিরাপত্তার জন্য যেমন দুশ্চিন্তার, তেমনি আঞ্চলিক শান্তির জন্যও হুমকি। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যে ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটছে, তাতে এ কথা বলা অসঙ্গত নয়, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বাধাগ্রস্ত করতে যেসব গোষ্ঠী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তারাই এমন অপকর্মে জড়িত। অশান্তি জিইয়ে রাখার অপচেষ্টা হলো রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানো। মানবাধিকার নেতা মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে কাজ করায় তাকে জীবন দিতে হয়েছে। তাই আশ্রয়শিবিরে যেসব অশুভ চক্র সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত তাদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বার্তা দিতে হবে; অপরাধীকে ছাড় দেয়া হবে না।
রোহিঙ্গাদের স্বদেশে সসম্মানে ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, কিছু অপশক্তি তা বানচালের অপচেষ্টায় লিপ্ত। ক্যাম্পের ভেতরে নিরাপদ অবস্থা বিরাজ করলে তা প্রত্যাবাসনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বিধায় প্রত্যাবাসন বাধাগ্রস্ত করতে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা এজেন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়ন্ত্রণ আরোপের অপচেষ্টা করছে বলেই মনে হয়। প্রত্যাবাসনে রোহিঙ্গাদের মতামত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেই মতামত ভয় দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে মিয়ানমারের জান্তা।
এ পরিস্থিতি বন্ধ করতে আমাদের নিরাপত্তা কৌশল বদলাতে হবে। ক্যাম্পের ভেতরে ও বাইরে সমানভাবে কাজ করে এমন কৌশল নিতে হবে। ক্যাম্পের বাইরের নিরাপত্তা যতটা সুন্দর, ভেতরের নিরাপত্তা তেমন নয়। তাই আশ্রয়শিবিরের ভেতরের সব ঝুঁঁকি বিবেচনায় নিয়ে নিরাপত্তা কৌশল ঢেলে সাজাতে পারলে এ সংঘর্ষ, হত্যা, অস্ত্র ও মাদকের বিস্তার বন্ধ করা সম্ভব।
ক্যাম্পগুলোতে বিভিন্ন অপশক্তির অস্তিত্ব রয়েছে। একাধিক পক্ষ নানাবিধ স্বার্থে কাজ করছে। কেউ বিদেশী শক্তির মাধ্যমে প্ররোচিত হয়ে কাজ করছে। এ ছাড়া মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানের মতো অপরাধে জড়িত একাধিক চক্র ক্যাম্পগুলোতে অপকর্ম করছে। তাদের প্রভাব, অস্তিত্ব, তারা কিভাবে কাজ করছে সেগুলো যদি চিহ্নিত না করা যায়, তাহলে বাহ্যিক নিরাপত্তা দিয়ে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে না।
লক্ষণীয়, শুরু থেকেই রোহিঙ্গাদের মধ্যে একধরনের সামাজিক বিশৃঙ্খলা আর অস্থিরতার প্রবণতা আছে। অবশ্য কোনো জনগোষ্ঠী স্বদেশ থেকে সমূলে উৎখাত হলে এমনটি হওয়াই স্বাভাবিক। তবে এ অস্থিরতা এতদিন বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করেনি। সাম্প্রতিক সময়ে পরপর দু’টি বড় ঘটনা ঘটায় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। কী কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলোÑ তা দ্রুত অনুসন্ধান করা জরুরি। ঘটনার আলামত থেকে এটি স্পষ্ট, একটি গোষ্ঠী ক্যাম্পের ভেতরে একধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চায়। তবে যারাই রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরগুলোতে সন্ত্রাস বিস্তারে ভূমিকা রাখছে, তারাই আমাদের দেশের শত্রু। রোহিঙ্গাদের আমাদের জন্য হুমকিতে পরিণত করছে তারা। এটি দেশের জন্য অশনি সঙ্কেত। তাদের নির্মূলে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সবার আগে প্রত্যাবাসনবিরোধীদের কঠোর নজরদারিতে আনতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement