২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
আবারো বাইকে আগুন দিলেন বাইকার

ট্রাফিক আইন প্রয়োগে সমতা আনুন

-

মানুষের সহ্যের একটা সীমা আছে। সেটা অতিক্রম করলে যে কেউ বিদ্রোহ হয়ে উঠতে পারেন। কখনো নিজেকে শেষ করেই এর প্রতিবাদ জানান কেউ কেউ। তখন এমন কিছু করে বসেন, তা অনেকের ওপরই তীব্র প্রভাব ফেলে। আমরা দেখেছি কিছু দিন আগে রাজধানীতে একজন মোটরসাইকেল চালক নিজের বাইকে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। ট্রাফিক পুলিশের অসঙ্গত আচরণ মেনে নিতে না পেরে চরমপন্থার আশ্রয় নেন তিনি। দুর্বিষহ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে নিজের সম্পদ বিনষ্ট করে মনের জ্বালা মেটান। ভাগ্য ভালো, তার প্রতি সবাই সহানুভূতিশীল ছিলেন। এমনকি পুলিশও ন্যায়বিচারের উদ্যোগ নেয়। কেউ কেউ তার সাহায্যে এগিয়ে এসে নতুন বাইক কিনে দেন। আমাদের খেয়াল রাখা দরকার, কেন এ ধরনের চরম প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে। শুধু একজন বাইকারের সমস্যার সমাধান করে এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার সুযোগ নেই। সমস্যার মূল খুঁজতে হবে।
একই ধরনের আরেকটি ঘটনা গত বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার পলাশীতে ঘটেছে। সেখানেও আরেকজন বাইকার ট্রাফিক পুলিশের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে নিজের মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন। তার বিরুদ্ধে আগে দুটি মামলা ছিল। এর মধ্যে সার্জেন্ট আবার জরিমানা করেন। রাগে-দুঃখে কিছু দূর গিয়ে নিজেই নিজের বাইকে আগুন ধরিয়ে দেন। বাড্ডা লিঙ্ক রোডে ঘটা আগের ঘটনায় যেভাবে সহানুভূতি মিলেছিল; এবার তেমনটা না-ও হতে পারে। ধর্তব্য, ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেই মামলা করছে পুলিশ । ভুক্তভোগীরা সেই আইনগত ব্যবস্থা মানতে পারছেন না।
ট্রাফিক আইনের ধারা ও সেগুলোতে জরিমানার বিধান স্পষ্ট। দ্রুতগতিতে যান চালালে, হাউড্রোলিক হর্ন বাজালে, ওয়ানওয়েতে বিপরীতে গাড়ি চালালে, একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি করলে মামলার বিধান ও শাস্তিপ্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলা আছে। ১৯৮৩ সালের মোটরযান আইনের ধারাগুলো সঠিকভাবে মানা গেলে রাজধানীতে গাড়ি চলাচল সহজ হওয়ার কথা। অথচ রাজাধানীতে যান চলাচলে প্রত্যাশিত শৃঙ্খলা নেই। গণপরিবহন, অটোরিকশা এবং রিকশা ও ভ্যানচালকদের রাজধানীর ট্রাফিকব্যবস্থাপনা নিয়ে অসন্তোষের অন্ত নেই। তারা সাধারণত ঘুষ নেয়া ও জোরজবরদস্তি করে মামলা দেয়ার অভিযোগ করেন। তাদের বক্তব্য হচ্ছেÑ প্রাইভেটকারসহ ধনী ও প্রভাবশালীদের মালিকানাধীন যানবাহনের বিরুদ্ধে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয় না বা নিতে পারে না। ট্রাফিক পুলিশ শুধু দুর্বলের ওপর চড়াও হচ্ছে। অন্য দিকে, মামলা-জরিমানা করে ট্রাফিক ব্যবস্থারও শৃঙ্খলা আসছে না। অর্থাৎ দুর্বলদের বিরুদ্ধে গণহারে ব্যবস্থা নিয়েও রাজধানীর যান চলাচলে শৃঙ্খলা বাড়াচ্ছে না। বাস্তবে এসব ব্যবস্থা ট্রাফিক পুলিশের পকেট ভারী করছে মাত্র। ভুক্তভোগীরা এমনই মনে করেন।
রাজধানীর চলাচলকারী সাধারণ যাত্রী প্রতিনিয়ত এর ভুক্তভোগী। গণপরিবহনের ক্ষেত্রে হঠাৎ করে আটকে দেয়ার ঘটনা অহরহ ঘটছে। যানজটের মধ্যেও এমন ঘটতে দেখা যায়। মানুষ যখন নির্ধারিত সময়ে অফিসে যেতে ব্যতিব্যস্ত কিংবা বাসায় যাওয়ার জন্য উদগ্রীব তখন এমনটি ঘটে। গাদাগাদি করে বাসে ওঠা যাত্রীদের তখন মুখবুজে সহ্য করা ছাড়া উপায় থাকে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, আড়ালে একটু দূরে ট্রাফিকের সাথে একটা রফা হচ্ছে। রাজধানীতে চলাচলকারী মানুষ প্রায়ই এ ধরনের কষ্টে পড়েন। ঢাকায় দ্রুত গন্তব্যে যেতে মোটরসাইকেল জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এ সুযোগে অনেক তরুণ এখন রাইড শেয়ারিং করছেন। তারা নেহায়েত বেকারত্ব ঘোচাতে এ কাজ করছেন, শখে নয়। সমাজের ক্ষমতাশালী অংশের প্রতিনিধি এরা নন। প্রায়ই তারা পুলিশের হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এর কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। বাড্ডায় ও পলাশীতে নিজের বাইকে আগুন লাগিয়ে দেয়া বাইকাররাও এই শ্রেণীভুক্ত। আমরা মনে করি, রাজধানীর ট্রাফিক পুলিশিংকে সংস্কার করা জরুরি হয়ে পড়েছে। ক্ষমতাধরদের তোয়াজ নয়, বরং ট্রাফিক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। এতে রাজধানীর যান চলাচলে শৃঙ্খলা বাড়বে, যানজটও কমবে।


আরো সংবাদ



premium cement